বিষয়বস্তুতে চলুন

হরিনাথ মজুমদার

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

হরিনাথ মজুমদার (২০ জুলাই ১৮৩৩ - ১৮ এপ্রিল ১৮৯৬) কাঙাল হরিনাথ নামে সমধিক পরিচিত। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। তিনি বাউল সঙ্গীতের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি সর্বসমক্ষে ফকির চাঁদ বাউল নামেও পরিচিত ছিলেন। অধিকন্তু তিনি গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা প্রকাশের জন্যও প্রসিদ্ধ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কুষ্টিয়ায় তার স্মরণে কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • পুলিশের বিলি ব্যবস্থা এবং তাহার বাহিরের ধজা পতাকা দেখিলে বোধ হয় প্রজারা নিরাপদে ও নিরুৎপাতে বাস করিতেছে। কিন্তু অভ্যন্তরে প্রবেশ করিলে অন্য এক মূর্তি দৃষ্ট হয়। পুলিশ বিভাগে ভদ্রলোকের অল্পতাই কারণ। যে বিভাগের পুলিশে ভদ্রলোক আছেন, তথায় কার্যও ভাল চলিতেছে। সুতরাং পুলিশ বিভাগের ভদ্রলোক এই প্রস্তাবের লক্ষ্য নহে, যেখানকার পুলিশে ভদ্রলোক নাই, সেইখানে অত্যাচার মূর্তিমান।
    • "দেশ নষ্ট কপটে, প্রজা মরে চপটে, কি করিবে রিপোর্টে", গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা, মাঘ ২য় সপ্তাহ ১২৭৯ থেকে প্রকাশিত। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার: নির্বাচিত রচনা, আবুল আহসান চৌধুরী সংকলিত ও সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৮ থেকে উদ্ধৃত।
  • ধর্মনীতি, ঈশ্বর ও পরকালের সহিত যাহাদিগের সম্বন্ধ নাই, অর্থই যাহাদিগের ঈশ্বর, দোষ গোপনই যাহাদিগের পরকাল, কপটতা যাহাদিগের আশ্রয়, আমরা তাহাদিগকেই অভদ্র বলি। পুলিশ বিভাগ অধিক অংখ্যক অভদ্রের আধার হওয়াতে, রক্ষক নাম ধারণ করিয়া ভক্ষক হইয়া উঠিয়াছে।
    • "দেশ নষ্ট কপটে, প্রজা মরে চপটে, কি করিবে রিপোর্টে", গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা, মাঘ ২য় সপ্তাহ ১২৭৯ থেকে প্রকাশিত। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার: নির্বাচিত রচনা, আবুল আহসান চৌধুরী সংকলিত ও সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৮ থেকে উদ্ধৃত।
  • পূর্বেই বলিয়াছি, এই দেশে ইংরাজ আধিপত্য স্থাপিত হইয়াছে। যখন এই দেশ 'বগাবঙ্গাল' হস্তে পতিত হইল, তখন ইহার অবস্থা শোচনীয়। বগাবঙ্গাল কী? বুঝিয়াছেন তো? 'বগাবঙ্গাল' শব্দে ইংরেজ লোক বুঝায়।
    • "গল্প আরম্ভ", গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা, আষাঢ় ১২৮৭ থেকে প্রকাশিত। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার: নির্বাচিত রচনা, আবুল আহসান চৌধুরী সংকলিত ও সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৮ থেকে উদ্ধৃত।
  • যত দিন বঙ্গসন্তান মাতৃভাষা উপেক্ষা করিয়া পর ভাষার পক্ষপাতী থাকিবেন, যতদিন মাতৃভাষা ঘৃণা করিয়া বৈদেশিক ভাষানুশীলনে সময় ক্ষেপণ করিবেন, ততদিন বঙ্গের উন্নতির আশা আমরা করি না, ততদিন জাতীয় উন্নতির কোন সম্ভাবনা দেখি না। যাহাতে দেশে মাতৃভাষার চর্চা দিন দিন বৃদ্ধি পায়, যাহাতে মাতৃভাষা আদরের সামগ্রী, যত্নের ধন বলিয়া লোকের প্রতীতি জন্মে, যাহাতে সকলে বদ্ধপরিকর হইয়া মাতৃভাষার দীনবেশ ঘুচাইতে সমর্থ হয়েন, বিবিধ রত্নে মাতৃভাষাকে অলঙ্কৃতা করিতে কৃতসংকল্প হয়েন, সে বিষয়ে চেষ্টা করা প্রত্যেক বঙ্গসন্তানের অবশ্য কর্তব্য কর্ম। ইংরাজী ভাষায় প্রবন্ধ লিখিলেই যে বড় লোক হয়, সে সংস্কার আমার নাই। আমার বোধ হয়, মাতৃভাষা উপেক্ষা করিয়া কেবল ইংরাজী ভাষার আলোচনায় সমূহ ক্ষতি হইতেছে।
    • "গল্প আরম্ভ", গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা, আষাঢ় ১২৮৭ থেকে প্রকাশিত। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার: নির্বাচিত রচনা, আবুল আহসান চৌধুরী সংকলিত ও সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৮ থেকে উদ্ধৃত।
  • মদ্য পান করিয়া উচ্ছিন্ন যায় নাই; এরূপ লোকই বিরল। কতশত ধনবান ব্যক্তি দরিদ্রতা লাভ করিয়াছেন, মদ্যের ঋণ পরিশোধ করিতে পৈতৃক আবাসবাটী পর্যন্ত বিক্রয় করিয়া পরগৃহ-বাসরূপ অপরিসীম যন্ত্রণা ভোগ করিতেও বাধ্য হইয়াছেন। কত শত বুদ্ধিমান ও বিদ্বান লোক অকর্মণ্য এবং ক্ষিপ্ত হইয়াছেন। কত শত পূজনীয় ব্যক্তি অপমানিত হইয়া লোকসমাজে ঘৃণিত হইয়া আছেন। কত শত সুচারু-শরীর, রূপবান যুবা চিররুগ্ন হইয়াছেন, এবং অনেকে পিতামাতা, স্ত্রীপুত্র পরিবারদিগকে শোকাকুল করিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছেন। কি আশ্চৰ্য! লোকে দেখিয়া শুনিয়াও শিক্ষাপ্রাপ্ত হয় না।
    • "মদ্য কি ভয়ানক রিপু", গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা, শ্রাবণ ১২৭৩ থেকে প্রকাশিত। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার: নির্বাচিত রচনা, আবুল আহসান চৌধুরী সংকলিত ও সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৮ থেকে উদ্ধৃত।
  • আমরা পূর্বেও অনেকবার বলিয়াছি এবং অদ্যও বলিতেছি প্রজার শোণিতেই সকলের উদর পূর্ণ হইতেছে, কিন্তু তাহাদিগের ব্যথায় ব্যথিত কেহই নাই।
    • "প্রজা রক্ষণাবেক্ষণের ভার এক্ষণে কাহার প্রতি?", গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা, বৈশাখ ৩য় সপ্তাহ ১২৭৯ থেকে থেকে প্রকাশিত। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার: নির্বাচিত রচনা, আবুল আহসান চৌধুরী সংকলিত ও সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৮ থেকে উদ্ধৃত।
  • ক্রমাগত রাজবিপ্লবে কেবল অর্থক্ষয় হয় তাহা নহে, রাজগণ যুদ্ধকার্যে বিব্রত থাকায় দেশের কোনপ্রকার মঙ্গলচিন্তা করিতে পারেন না। বিশেষ, একজন নরপতি আপনার শিক্ষা, জ্ঞান ও বিশ্বাসানুসারে একভাবে কার্য আরম্ভ করেন, অন্য নরপতি তাহার মূলভিত্তি পর্য্যন্ত নষ্ট করিয়া অন্য প্রকার শিক্ষা, জ্ঞান ও বিশ্বাসানুসারে কার্য করিতে প্রবৃত্ত হন। এই প্রকারে ভাঙ্গাগড়াতেই বৃথা সময় নষ্ট হয়, বস্তুতঃ প্রকৃত কার্য কিছুই হয় না।
    • "ভারতোদ্ধার", গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা, আশ্বিন ১২৮৭ থেকে প্রকাশিত। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার: নির্বাচিত রচনা, আবুল আহসান চৌধুরী সংকলিত ও সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৮ থেকে উদ্ধৃত।
  • এখন আমরা অবশ্যই বলিতে পারি, ভারত উদ্ধার করিতে হইলে, ভারতের ধর্মনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতির সংশোধন করিতে হইবে। অন্যথা; পতিত ভারতের উদ্ধারসাধন করিবার সাধ্য কাহারও নাই। বরং অবিবেচনা পূর্বক ভারতকে টানিয়া তুলিতে গেলে, সে আরও রসাতলে নিমজ্জিত হইবে। এখন কেবল মুখে ভারতোদ্ধার ভারতোদ্ধার বলিয়া চিৎকার করিলে চলিবে না। ভারতোদ্ধারের নিমিত্ত জাত্যভিমান, প্রভুত্বাভিমান, ধনাভিমানের সহিত সমুদায় স্বার্থ, সুখাভিলাস ও বিলাস বিসর্জন করিয়া শরীর ও হৃদয় দান করিতে হইবে। অন্যথা, ভারতের উদ্ধার কেহই সাধন করিতে পারিবেন না। জাতিত্ব ও প্রভুত্ব জন্য মানসম্ভ্রম প্রভৃতি সমুদায় স্বার্থ রক্ষা করিয়া ভারতের উদ্ধার সাধন, আর অট্টালিকার চন্দ্রশালার উপরে গোচারণ উভয়ই হাস্যকর।
    • "ভারতোদ্ধার", গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা, আশ্বিন ১২৮৭ থেকে প্রকাশিত। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার: নির্বাচিত রচনা, আবুল আহসান চৌধুরী সংকলিত ও সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৮ থেকে উদ্ধৃত।

হরিনাথ মজুমদার সম্পর্কে উক্তি

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]