হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু (আরবি: عمر بن الخطاب; ৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দ – ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ও প্রধান সাহাবীদের অন্যতম।[২] আবু বকরের মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। উমর ইসলামী আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন। ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তাকে ফারুক (আরবি: الفاروق; সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দেওয়া হয়। আমিরুল মুমিনীন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ইতিহাসে তাকে প্রথম উমর হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। নামের মিল থাকার কারণে পরবর্তী কালের উমাইয়া খলীফাহ্ উমর বিন আব্দিল আযীযকে দ্বিতীয় উমর হিসেবে সম্বোধন করা হয়। সাহাবীদের মর্যাদার ক্ষেত্রে সুন্নীদের কাছে আবূ বাক্‌রের পর উমরের অবস্থান।[৩][৪][৫] শিয়া সম্প্রদায় উমরের এই অবস্থান স্বীকার করে না।[৬] এছাড়াও তিনি ছিলেন ইসলামের নবী মুহাম্মাদের শ্বশুর, যেহেতু উমরের মেয়ে হাফছাহ বিন্‌ত উমর ছিলেন মুহাম্মাদের স্ত্রী।

উমরের শাসনামলে খিলাফাতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এসময় সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুই তৃতীয়াংশ মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসে।[৭] তার শাসনামলে জেরুজালেম মুসলিমদের হস্তগত হয়।[৮] তিনি পূর্বের নাসরানী রীতি বদলে ইয়াহূদীদেরকে জেরুসালেমে বসবাস ও উপাসনা করার সুযোগ দিয়েছিলেন।[৯] তার জীবনকর্মে উপর শিবলী নোমানীর রচিত আল ফারুক অন্যতম।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • "তোমাদের শাসক হিসেবে আমি হলাম সে ব্যক্তির মত, যেমন কিছু লোক একত্রে সফর করার সময় টাকা-পয়সাগুলো একজনের হাতে জমা দিয়ে বলে- তোমাকে আমাদের প্রয়োজনাদি মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হলো - দায়িত্বপ্রাপ্ত সে ব্যক্তির কি খরচের ব্যাপারে তারতম্য করার সু্যোগ আছে? তেমনি খিলাফতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও কারও প্রতি তারতম্য করার অধিকার আমার নেই।
  • "
  • "যে তোমার দোষ ধরে বন্ধু সেই জন, সম্মুখে তারিফ করে দুষমন সে জন।
  • রাষ্ট্রের কোষাগারে যা আছে, তা জনগনের আমানত এবং তাদের কল্যানের জন্যই সঞ্চিত। যে পর্যন্ত জনগণের প্রয়োজন পূর্ণ না হবে, সে পর্যন্ত আমাদেরকে খরচ করতে হবে। যদি কোষাগার শূন্য হয়ে যায়, তবে কষ্টের জীবন সকলে মিলে ভাগ করে নেব।
  • বাকিতে ক্রয় করে যে পোষ্যপালন করেছে, সে ব্যক্তি যদি ধনবান ও অপরাধী না হয়ে থাকে, তবে তার সে ধার সরকারী কোষাগার থেকে পরিশোধ করে দাও।
  • যে আমার দোষ দেখে অনুগ্রহ করে তা আমাকে জানায় তাঁর প্রতি আল্লাহর করুণা অশেষ ধারায় বর্ষিত হোক।
  • শাসকরা যখন বিগড়ে যায় তখন জনগণও বিগড়াতে শুরু করে। সর্বাপেক্ষা ইতর সে ব্যক্তি যার প্রভাবে তার অধীনস্থদের মধ্যে অনাচার বিস্তার লাভ করে।
  • দূরবর্তী নদীতীরে চর্মরোগগ্রস্ত একটি ছাগী যদি মালিশ করার মত একটু তেলের অভাবে কষ্ট পায়, তবে হাশরের দিন সে সম্পর্কেও রাষ্ট্রপ্রধানকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
  • কোন ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে পড়ে, তবে সে ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব সরকারী কোষাগারকে বহন করতে হবে।
  • আল্লাহর শপথ করে বলছি- আমি বাদশাহ নই যে, জনগনকে গোলাম বানিয়ে রাখব। আমি আল্লাহর একজন বান্দা মাত্র। আমাকে শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছে। এটি একটি আমানত, আমার দায়িত্ব হল জনগনের সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা । যদি এ দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পারি, তবেই আমার কৃতকার্যতা। আর যদি আমি শাসন কর্তৃত্বকে নিজের ইচ্ছাধীন করে নিই এবং জনগনকে তাদের প্রয়োজনের জন্য আমার পেছনে হাঁটাহাঁটি করতে বাধ্য করি, তবে আমার ফলশ্রুতি হবে জঘণ্য।
  • রাস্তা উচু নিচু হওয়ার কারণে যদি রাজ্যের কোথাও একটি প্রাণিও হোঁচট খেয়ে পা ভেঙ্গে ফেলে তবুও আমি উমর আল্লাহর কাছ থেকে জবাবদিহী থেকে রেহাই পাবোনা
  • আপনার প্রতি সদ্ব্যবহারের জন্য সদাচরণ করা সহজ শোধ, যখন আপনার প্রতি কোন মন্দ কাজের জন্য ভাল কাজ করা এক বিরাট পুণ্য।
  • পরামর্শ দেয় না এমন লোকেদের মধ্যে কোনও ধার্মিকতা নেই, এবং পরামর্শ দেওয়া পছন্দ করেন না এমন লোকেদের মধ্যে কোনও ধার্মিকতা নেই।
  • যারা ক্রমাগত অনুতাপ করেন তাদের সাথে বসে থাকুন, কারণ তাদের অন্তরে স্নিগ্ধতা রয়েছে।


    • হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)

হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) সম্পর্কে উক্তি[সম্পাদনা]

  • ধৈর্য আমাদের জীবনের স্বাস্থ্যকর উপাদান।
  • সত্য আপনাকে মেরে ফেললেও সত্যকে আঁকড়ে ধরুন।
  • যদি আপনার প্রার্থনা আন্তরিক হয় তবে উত্তরটি আসবে।
  • বুদ্ধিমান ব্যক্তি হ'ল সে, যে তার কাজের জন্য দায়বদ্ধ হতে পারে।
  • এটি এমন এক স্থান (কা'বা) যেখানে শেখার মতো অনেক পাঠ রয়েছে এবং এমন এক স্থান যেখানে প্রার্থনা গ্রহণ করা হয়।
  • আপনার স্ত্রী যদি রাগান্বিত হন তবে আপনার শান্ত হওয়া উচিত। যখন একটি আগুন হয়, অন্যটি জল হওয়া উচিত।
  • রুক্ষ জীবনে অভ্যস্ত থাকুন, কারণ বিলাসিতা চিরকাল স্থায়ী হয় না।
  • কোনও পরিমাণ অপরাধবোধ অতীতকে পরিবর্তন করতে পারে না, এবং চিন্তার পরিমাণ (উদ্বেগ) পরিমাণ ভবিষ্যতকে পরিবর্তন করতে পারে না।
  • কাউকে পরাস্ত করার সর্বোত্তম উপায় হ'ল ভদ্রতার সাথে তাকে পরাজিত করা।
  • আমি আমার নীরবতার জন্য কখনও অনুশোচনা করি নি, যেমন আমার বক্তৃতার জন্য আমি এটি বহুবার অনুশোচনা করেছি।


হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]