অভিমান
অবয়ব
অভিমান মানে এমন আচরণ করা যে কোনো ব্যাক্তি অন্যদের চেয়ে ভাল এবং তাদের অধিকারের প্রতি যত্নশীল না। এটি একটি ভাবনা, যেন কোনো ব্যক্তির অন্য লোকেদের নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করার এবং তাদেরকে অসম্মান করার অধিকার রয়েছে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- দয়া ধর্ম্মের মূল; আর নরকের মূল কি—না অভিমান। অবশ্য আমাদের ভিতর কেহই নরক নামক সুখের আলয়ে সাধ করিয়া যাইতে চাহেন না, ও চাহিবেন না। কিন্তু আমরা কত সাধে অভিমানকে হৃদয়ে স্থান দান করিয়া থাকি, আমাদের সেই অভিমানই যে নরকের মূল তাহা জানি না অথবা জানিয়াও তাহাকে পরিত্যাগ করিতে পারি না।
- ইন্দিরা দেবী - আমার খাতা, দয়া ১৯১২ (পৃ. ৯২-৯৪)।
- ক্ষম অভিমান বঁধু ক্ষম অভিমান
আঁধারে তোমার লাগি ঝরিছে নয়ান!
বাহু বাড়াইয়া দিলে কিছু নাহি পাই,
শূন্য মনে ভূমি তলে কাঁদিয়া লুটাই।- চিত্তরঞ্জন দাশ - অন্তর্যামী ১৯১৪ (পৃ. ৯)।
- এই দেহের এত অহঙ্কার;
অবশ্য মরিতে হবে কিছু দিনান্তর।
হ’লে দেহ প্রাণ-হীন, কোথা রবে অভিমান,
ভূমিতে পড়িয়ে রবে হয়ে শবাকার;- বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী - সঙ্গীত-সুধা, এই দেহের এত অহঙ্কার ১৯১৫ (পৃ. ৮)।
- আমার না হলেও চল্ত, কেবল আমি ইচ্ছা করে করচি এই যে মুক্ত কর্ত্তৃত্বের ও মুক্ত ভোক্ত্তৃত্বের অভিমান, যে অভিমান বিশ্বস্রস্টার এবং বিশ্বরাজেশ্বরের,―সেই অভিমানই মানুষের সাহিত্যে এবং আর্টে। এই রাজ্যটি মুক্ত মানুষের রাজা, এখানে জীবনযাত্রার দায়িত্ব নেই।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - জাপান-যাত্রী ১৯১৯ (পৃ. ৫-১০)।
- আমি বঙ্গদেশের হতভাগ্য লেখক-সম্প্রদায়ের হইয়া ক্রন্দনগীত গাহিতে বসি নাই। বিলাতের লেখকদের মতো আমাদের বহি বিক্রয় হয় না, আমাদের লেখা লোকে আদর করিয়া পড়ে না বলিয়া অভিমান করিয়া সময় নষ্ট করা নিতান্ত নিষ্ফল; কারণ, অভিমানের অশ্রুধারায় কঠিন পাঠকজাতির হৃদয় বিগলিত হয় না। আমি বলিতেছি, আমাদের লেখকদিগকে অতিরিক্তমাত্রায় চেষ্টান্বিত ও সতর্ক হইতে হইবে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - সাহিত্য/বাংলা-লেখক। ১৯৫৮ (পৃ. ২৩৭-২৪৩)
- ছাড় ক্রোধ হে মানব! ছাড় অভিমান,
অতিক্রম কর ভবে সকল বন্ধন;- সতীশচন্দ্র মিত্র অনূদিত - ধম্মপদ, ক্রোধ বর্গ ১৯০৫ (পৃ. ৭২-৭৬)।
- হাসি খেলা, ভালবাসা, আনন্দের গান,
রোদন, বিরাগ, ক্রোধ, কিম্বা অভিমান,
সাগরে তরঙ্গসম মথিয়া জীবন,
তুলিয়া গরল, তাহে করিছে সৃজন- বিজয়চন্দ্র মজুমদার - পঞ্চক মালা, জীবন।
- আমাদের আবার স্মরণ কে করিবে, কেনইবা স্মরণ করিবে? যদি সহস্র পৃষ্ঠা বিশিষ্ট জীবনচরিত লিখিত ও মুদ্রিত হইয়া বিনা মূল্যে প্রচারিত হয় তাহাতে ও আমাদিগকে বাঁচাইয়া রাখিতে পারিবে না। তবে সে আবর্জ্জনা গুলার প্রয়োজন কি? - অভিমান। কালের কাছে আদর আবদার নাই, মান অভিমান নাই। তুমি আমি হাজার চেষ্টা করি, কালের নিদারুণ হস্তে এসমস্তই বিস্মৃতি সাগরে নিমজ্জিত হইবে।
- শিবাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য - বিদ্যাসাগর-প্রবন্ধ, ভূমিকা ১৮৯৮ (পৃ. ১-৯)।
- অন্যের পরে মানুষের বড় ঈর্ষা। যাকে আর কেউ পায় নি, মানুষ তাকে পেতে চায়। তাতে যে পাওয়ার পরিমাণ বাড়ে তা নয়, কিন্তু পাওয়ার অভিমান বাড়ে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - জাপানে-পারস্যে ১৯৪২ (পৃ. ২৬-২৮)।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় অভিমান সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে অভিমান শব্দটি খুঁজুন।