বিষয়বস্তুতে চলুন

অমিয়ভূষণ মজুমদার

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

অমিয়ভূষণ মজুমদার (মার্চ ২২, ১৯১৮ — জুলাই ৮, ২০০১) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক এবং নাট্যকার। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তার সাহিত্যকর্ম ব্যাপ্ত ছিল। তার সাহিত্য সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। তিনি ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর 'রাজনগর' উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছেন।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • নেতা সবচাইতে দক্ষ ও কর্তব্যনিষ্ঠ শ্রমিক হবে। কারিগরের যেমন নিজের কাজে গর্ব থাকে শ্রমিকেরও তা থাকবে, কেননা শ্রম তো টাকা উপার্জনের উপায়ই নয়, জীবনও বটে, ট্রেড ইউনিয়ন এমন নয় যে বুড়ি ছুঁয়ে থেকে রাজনীতি করার সুযোগ।
    • রমাপ্রসাদ নাগ (২০১৪), অনন্য অমিয়ভূষণ, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, পৃ. ১৪
  • আমার ট্রেড ইউনিয়নে ভালোবাসা ছিলো, প্রতিবাদ ছিলো, তেজ ছিলো, ক্রোধ ও বিদ্বেষ ছিলো না।
    • রমাপ্রসাদ নাগ (২০১৪), ‘অনন্য অমিয়ভূষণ’, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, পৃ. ১৪
  • একটা কথা কারও মনে আসে না সমগ্র বাংলাদেশ কলকাতার পাড়া নয়। কলকাতা ছাড়া আর সব যেন পাটের জমি, ধানের জমি, তামাকের জমি। ওখানে বোকা লোকেরা থাকে। আমি এদের ব্রাত্যজন বলি।
    • সাক্ষাৎকার
  • আমার লেখার সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরা লক্ষ করে থাকবেন আমি রাজা-রানী, জমিদার, জোতদার, মধ্যবিত্ত প্রলেতারিয়েত, লুম্পেন প্রলেতারিয়েত কারো কথাই অবহেলা করিনি । গোটা সমাজের সকলের কথাই বলেছি, সমান সহানুভূতি দিয়ে সকলের সমস্যা বলতে চেষ্টা করেছি.... আমি লোকের কথা বলতে চেয়েছি অঞ্চলের কথা নয়।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০১১), ‘নিজের কথা’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ১ম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ১০
  • পৃথিবীময় উপন্যাসের উপাদান, প্রতিটি মানুষ উপন্যাসের নায়ক হওয়ার যোগ্যতা রাখে, পৃথিবীকে দেখে দেখেই তো উপন্যাস রচনা করা হয়।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০০৭), ‘উপন্যাস সম্বন্ধে’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ৫ম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ৪৩৫
  • আমি লিখি জীবনের জন্য। আমি জীবনে স্যাটিসফায়েড নই। আমি যে-জীবন দেখি, তাতে যেন কোথায় তৃপ্তি পাচ্ছি না। জীবন আমাকে জাগিয়ে রেখেছে এবং জাগতে আমার ভালো লাগছে না।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০০৭), অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা (প্রতি খণ্ডের ব্যাক কভার পেজ)
  • আমি যে উপন্যাস লিখতে চাই তা এখনও লেখা হয়নি। অর্থাৎ আমি যাকে উপন্যাস বলে স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হব না তেমন উপন্যাস লেখার চেষ্টা করে থাকি। হয়তো তা কোনদিনই লেখা হবে না, লেখা হলেও ছাপা হবে না, কিন্তু সেগুলি আমার জাগ্রত ও নিদ্রার আনন্দ।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০০৭), ‘আমার সম্বন্ধে’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ২য় খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ১৬
  • নদীস্রোতের এক কৌতুক আছে-সর্বত্রই জল, জলই তো, আর একটানা গতি, কিন্তু অবিরত বদলাচ্ছেও যেন; ছোট ছোট পাক, ছোট দু-চারটে ঢেউ, অন্য কোথাও সাপের পিঠের মতো নিঃশব্দে পিছলে যাওয়া। আর সেদিকে চেয়ে থাকতে-থাকতে মনেও যেন তেমন এক স্রোত চলতে থাকে— এ কথা, সে কথা, অতীত, বৰ্তমান, ভবিষ্যৎ, পাক খেয়ে পিছলে গিয়ে।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০০৭), ‘মধু সাধুখাঁ’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ৪র্থ খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ২০
  • আমি যা প্রমাণ করতে চাই তা এমন প্রেম যা মানুষ একসময়ে আবিষ্কার করবে কিংবা কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করবে। মানুষ পশু, কিন্তু সকালের দাড়ি কামানো থেকে শুরু করে সে সুন্দর, সুঘ্রাণবিশিষ্ট, পশুর চাইতে অন্য কিছু হতে চায়। Sex তো আছেই। কিন্তু Sex কে অতিক্রম করে কিছু হওয়ার ইচ্ছা। মদ আর ভাত কি এক? আলো আর আগুন কি এক? তেমন প্রেম এবং Sex এক নয়।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০০৮), ‘বিবিক্তা’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ৬ষ্ঠ খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ৫৪৭
  • ভেবে দেখো, অ্যারিস্টটল যতই প্রকৃতি নির্ণয় করে থাকুন, আর নাট্যকাররা রাজা, রাজপুত্রদের কথা বলে থাকুন, সবই শুরু হয় সুদূরস্থিত অদৃশ্যপ্রায় কোনো দেবদেবীর খামখেয়ালিতে, মানুষ যাতে হেতুত্ব খুঁজে পায় না। আসলে তা সমাপতন ছাড়া আর কিছু নয়। না হয় অয়দিপাউস সুলভ-কোপ ছিল, কিন্তু কোন যুক্তিবলে পথে তার সঙ্গে তার পিতারই দেখা হল, এবং তাকেই সে না জেনে হত্যা করল।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০১২), ‘ট্রাজেডির সন্ধ্যানে’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ১০ম খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ২৭
  • পুরুষের একটাই ভয়। সে বুঝি তার ভালোমন্দ নিয়ে মৃত্যুতে মুছে যাবে।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০১২), ‘রামী রজকিনী’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ১০ম খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ২৩৯
  • এটা সেই সভ্যতার রোলার সত্ত্বেও আদিমকাল থেকে চলে আসা স্ত্রীজাতিত্ব, অথবা স্ত্রীবর্গীয় সহজাত প্রবৃত্তি যার ফলে পাখি থেকে পাখি, ফুল থেকে ফুল সুন্দরী থেকে সুন্দরী হয়েই চলেছে, যার ফলে পৃথিবী কখনো বৃদ্ধা হয় না, নতুন প্রজন্ম নতুন সুন্দরী পৃথিবীকে পেয়ে যায়।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০১২), ‘রামী রজকিনী’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ১০ম খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ২৩৯
  • টাকা থাকলে অনেক কিছু করা যায়। কিন্তু নিয়তিকে বশে রাখা দূরের কথা, নিজের নিকটতম মানুষগুলোকেও নিজের মতামত বা রুচিতে আবদ্ধ রাখা যায় না।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০১৪), ‘রচনাপ্রসঙ্গ: অতি বিরল প্রজাতি’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ১১দশ খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ৬৮
  • নিজের চোখে দেখা মাটি, আকাশ, জল, গাছ আঁকা যত সহজ, অন্যের মুখে অপরিচিত সেসবের কথা শুনে সে-আঁকা ততটা ভালো হয়না। সেজন্য হয়তো পদ্মা থেকে শুরু করে কাঞ্চনজঙ্ঘা এই ভূ-ভাগ আমি বেশি এঁকেছি।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০১১), ‘নিজের কথা’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ১ম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ১৬
  • নতুন সড়ক পুরনো পথ ধরে চলছে না। এ দুটির চালই যেন আলাদা। পুরনো পথ চলত এঁকেবেঁকে, দু'পাশের জমিকে বাঁচিয়ে। জমির শস্য বহন যে করবে, সেকর্তব্য পালন করাই যার পরম গৌরব, সে জমিকে খাতির না করে পারে না। কিন্তু নতুন সড়ক সোজা ধেয়ে চলেছে। তার গতি দেখে মতি বোঝা যায় না। মনে হয় আর যে উদ্দেশ্যই তার থাক, সেটা জমি এবং ফসলকে খাতির করা নয়।
    • ৭১ অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০০৫), ‘দুখিয়ার কুঠি’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ৩য় খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ৩৬
  • হঠাৎ যেন বেজে উঠল, জগঝম্প, রামশিঙা আর ঢাক। সতীকে এনেছে, এনে ফেলেছে, তেলে-সিঁদুরে-কান্নায়-ভয়ে আচ্ছন্ন ধনুষ্টঙ্কারগ্রস্ত রোগীর মতো বছর পঁচিশ-ছাব্বিশের যুবতী। আর আত্মানম্ জ্যুহহোমি সো আ হা, হা হা হা আঁ আঁ আঁ। আঁ-আঁ করছে আগুন, আর আগুন আকাশ বাতাস একসঙ্গে ডুকরে-ফুকরে হাহাকার করে উঠল।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০০৭), ‘মধু সাধুখাঁ’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ৪র্থ খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ২৬
  • এমত প্রেম, এমত খেলা?অহো, এমন দৃশ্য দেখি মানুষে অমর হয়। আহা, অসুনীতে পুনরস্মাসু চক্ষুঃ পুনর্প্রাণমিহ নো ধেহি ভোগম্। হে প্রাণনেতা, আবার প্রাণ দিহ, আবার চক্ষু দিহ, আবার দেখিবা দিহ, আবার।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০০৭), ‘মধু সাধুখাঁ’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ৪র্থ খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ২৭
  • সত্য, কল্যাণ, সুন্দর প্রভৃতি যেন সাহিত্যিকের হাতে ধরা তুলির রং, কতটুকু কার প্রয়োগ হলে সাহিত্য তাঁর মনের মতো হয়ে ওঠে, অর্থাৎ তাঁর সাহিত্য-ভাবনা বিমূর্ত হয়ে ওঠে এ তিনিই জানেন। আমরা শুধু সম্পূর্ণটাকে দেখে মোহিত হতে পারি।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার (২০০৭), ‘সাহিত্যের ধারণা’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ৪র্থ খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ. ৪১৬

অমিয়ভূষণ মজুমদার সম্পর্কে উক্তি

[সম্পাদনা]
  • আদিম, আপনাকে-না-জানা মানুষের অন্তরের অবগুণ্ঠন সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত না করিয়াই লেখক জীবন ও সাহিত্যের মধ্যে যে দৌত্যকার্য নিষ্পন্ন করিয়াছেন, সেখানেই তাঁহার মৌলিকতার কৃতিত্ব।
    • শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (২০০৬), ‘বঙ্গসাহিত্যে উপন্যাসের ধারা’ মডার্ন বুক এজেন্সি প্রা. লি., কলকাতা, পৃ. ৭৫৯
  • কথাশিল্পী অমিয়ভূষণ খুব একটা হতাশাবাদী লেখক নন। জীবনের নৈরাশ্যের দিক নয়, জীবনের অদম্য, অরোধ্য প্রাণাবেগ; বাঁধ ভাসানো জীবনাস্বাদী আকাঙ্ক্ষার উপলব্ধিই নানাভাবে অভিব্যক্ত হয় তাঁর লেখনীতে।
    • সুমিতা চক্রবর্তী (১৯৯৮), উপন্যাসের বর্ণমালা, বিশ্ব মিত্তিরের পৃথিবী: অনল দহিত জীবন, পুস্তক বিপণি, কলকাতা, পৃ. ১৭৭

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]