অসীম রায়
অসীম রায় (৭ মার্চ ১৯২৭ - ৩ এপ্রিল ১৯৮৬) একজন বাঙালি সাহিত্যিক ও প্রথিতযশা সাংবাদিক। দ্য স্টেটসম্যান ইংরাজী দৈনিকের সম্পাদনার মাধ্যমে তার সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। প্রকাশকালের শুরু থেকে তিনি এখানে সাংবাদিকতা করেছেন। অসীম রায়ের রচনা মননশীল পাঠকদের কাছে অত্যন্ত সমাদরপ্রাপ্ত ও অগ্রগণ্য। তার উপন্যাস ও ছোটগল্প ছাড়াও রিপোর্টাজগুলি উন্নতমানের সাহিত্য হিসেবে বিবেচিত পাঠকমহলে। তার প্রথম উপন্যাস 'আগামী (মাঝি)' প্রকাশিত হয় ১৯৫১ খ্রীষ্টাব্দে (১৩৫৮ বঙ্গাব্দের ১৫ কার্তিক)। অন্যান্য উপন্যাসগুলির মধ্যে 'একালের কথা (অক্টোবর ১৯৫৭)', 'দেশদ্রোহী (চৈত্র ১৩৬৮)' এবং 'আবহমানকাল (অক্টোবর ১৯৭৭)' পাঠকমহলে সাড়া ফেলে। গল্পগুলোর মধ্যে 'অনি(১৯৫২)', না (১৯৫২),ধোয়া-ধুলো-নক্ষত্র (১৯৫৬), সলবেলো বাড়ীওয়ালা বাংলাদেশ (১৯৫৮), । নকশাল বিদ্রোহ ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিগুলির আভ্যন্তরীণ ভাঙ্গন বিষয়ে তার গল্প 'অসংলগ্ন কাব্য (১৯৭৩)' এক মর্মস্পর্শী আখ্যান পেশ করে সেই সময়ের দলিল হিসেবে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- আমার হাতে কলম তুলে দিচ্ছে আমারই অযোগ্যতা, এই লেখার মধ্যে দিয়ে আমার লেখক না হওয়ার সংকল্প।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১০ অসংলগ্ন কাব্য
- যৌবনের প্রথম থেকেই আমার কাছে কমিউনিজম বিশ্বের এবং নিশ্চয় আমাদের দেশের প্রধান ঘটনা। কমিউনিজমের জয়যাত্রা যে পার্টি ত্বরান্বিত করেছে আমি সেই পার্টির দিকে হাত বাড়িয়েছি, যে লেখক এই জয়যাত্রায় পথের আবর্জনা সরাতে চেষ্টা করেছে তার লেখা পড়তে চেষ্টা করেছি। এইসব করেছি আমার রাজনৈতিক কাজের প্রত্যক্ষ জ্ঞান অথবা যথাযথ সাংস্কৃতিক ব্যাকগ্রাউণ্ড ছাড়াই।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১০ অসংলগ্ন কাব্য
- শুধু একলা প্রাণের বেদনার তীব্রতা নয়, শেষপর্যন্ত নিজেকে কুরে কুরে খাওয়া নয়, সাম্যবাদ একটা বিরাট কোরাস, একটা উৎসব । এ উৎসবে আমাদের সবাইকে যোগ দিতে হবে।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১১ অসংলগ্ন কাব্য
- বাস্তবিক, মানুষের জয়যাত্রা তার ভঙ্গুরতা সত্ত্বেও, তার প্রবল নশ্বরতাই তাকে এক অপূর্ব অমরত্ব দান করেছে
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১২ অসংলগ্ন কাব্য
- দেখুন, টাকা পয়সার সঙ্গে যোগ নেই এমন কিছু নেই পৃথিবীতে, ব্যানার্জিবাবু। জন্ম মৃত্যু বিবাহ সবই টাকার জন্যে । টাকার জন্যেই বিপ্লব। মানে, সাধারণ মানুষকে তো খেতে হবে, পরতে হবে।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৪ অসংলগ্ন কাব্য
- যখন কলকাতার রাস্তায় চালের চড়া দাম নিয়ে পুলিশে জনতায় লড়াই চলল, তখন থেকেই আমাদের যৌবন রাজনীতির সঙ্গে মালাবদল করে নিয়েছিল।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৭ অসংলগ্ন কাব্য
- যারা সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ বিপ্লবের গান গেয়েছিলেন তাঁরাই নির্বাচন জিতে সবচেয়ে আগ্ বাড়িয়ে মন্ত্রিত্বের গদি বরণ করলেন এবং এই মন্ত্রিত্ব গ্রহণই যে বিপ্লবের একমাত্র পথ তার জন্য অজস্র লেখা ও বক্তৃতায় সময় ব্যয় করলেন।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৭ অসংলগ্ন কাব্য
- সবাই এক-একটা আলাদা অস্তিত্ব, শুধু এক অভ্যাসের জন্যে এক সঙ্গে বাস করি, একসঙ্গে বসি খাই দাই। আসলে কারুর সম্পর্কে আমাদের সামান্য কৌতূহল নেই, আমাদের নিজেদের সম্পর্কেও নেই।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৮ অসংলগ্ন কাব্য
- আমরা কেবল নিজেদের একটা ছোট্ট অস্তিত্ব কোনরকমে সাজিয়ে গুজিয়ে রাখতে চাইছি, তারচেয়ে সামান্য কিছু করার মেজাজ আমাদের নেই।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৮ অসংলগ্ন কাব্য
- আমরা কেউ রাজনৈতিক পার্টির চাকরি করছি, কেউ স্বামীর চাকরি করছি। কিন্তু কখনও ভাবছি না এই ষাট সত্তরটা বছর এমনিভাবে চাকরি করা ছাড়াও আমাদের কিছু করার ছিল।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৮ অসংলগ্ন কাব্য
- আমরা যে নতুন দর্শনের কথা বলছি তা আমাদের এই নতুন কথা বলছে। তার অজস্র ত্রুটি আছে। আমাদের বিরোধীপক্ষরা লক্ষ লক্ষ কলম ধরেছে এই ত্রুটিগুলো আরও স্পষ্ট করে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে। কিন্তু সাম্যবাদের জোর দিনকে দিন বৈড়ে চলেছে, একটার পর একটা দেশে তার বিজয়পতাকা উড়ছে । কেন জানেন ? এই একটা কারণে—মানুষ তার এই বুকচাপা নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠছে। সে আবার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে জীবনের দিকে। এটাই হল, একালের সবচেয়ে চমৎকার কবিতা।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৮ অসংলগ্ন কাব্য
- আমার হয়ত ভুল হতে পারে। হয়ত আমরা মনের মাধুরী দিয়ে এক নিরবয়ব অস্তিত্বকে অবয়ব দান করেছি।
- অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৮ অসংলগ্ন কাব্য