বিষয়বস্তুতে চলুন

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (২৯ জুন ১৮৬৪ - ২৫ মে ১৯২৪) বাঙালি শিক্ষাবিদ, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও মাতা জগত্তারিণী দেবী। পিতা ছিলেন ভবানীপুর অঞ্চলের বিখ্যাত চিকিৎসক। আগাগোড়া মেধাবী ছাত্র আশুতোষ ১৮৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ডিগ্রি ও ১৮৮৫ সালে গণিতে এম.এ পাস করেন। এর পরের বছরে তিনি পদার্থবিদ্যায় এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। স্বাধীনচেতা এই মানুষটি ১৯০৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯১৪ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। তিনি ১৯২১ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে দ্বিতীয়বারের জন্য উপাচার্যের পদের দ্বায়িত্বভার পালন করেন।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • সকল জাতিরই এক একটা লক্ষ্য থাকা আবশ্যক— আছেও। লক্ষ্যহীন জাতি কদাচ অভ্যুদয়শালী ও কালজয়ী হইতে পারে না। এ পর্য্যন্ত পৃথিবীতে যে যে জাতি অভ্যুদিত হইয়াছে, তাহাদের প্রত্যেকেরই একটা না একটা স্থির লক্ষ্য ছিল; এবং সেই লক্ষ্য ধরিয়াই তাহারা ক্রমে তাহাদের আকাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ করিতে পারিয়াছে। লক্ষ্য স্থির রাখিতে পারিলে কিছুই অসম্ভব নহে,—অতি দুষ্কর এবং দুঃসাধ্য কার্য্যও সুসম্পন্ন করা যাইতে পারে।
    • জাতীয় সাহিত্য - আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৩-১০৪
  • কল্পনা কাহারও দাসীত্ব করিতে জানে না। কল্পনা কখনও কবিকে মেঘের উপর লইয়া গিয়া সৌদামিনীর বিলাসচঞ্চলা মূর্ত্তি প্রদর্শন করে, কখনও আবার তুষারমণ্ডিত কমলের কেশরের মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়া কবিকে কত নিভৃত সৌন্দর্য্য দেখায়। উন্মাদিনী চঞ্চলার ন্যায় কবির উন্মাদিনী কল্পনা কাহারও অঙ্গুলিসঙ্কেতে পরিচালিত বা ভ্রূকম্পনে বিকম্পিত হয় না। সে আপনার ভাবেই আপনি বিভোর হইয়া ছুটে, পরের ভাবে ভুলে না। কৃত্তিবাসের স্বৈরচারিণী কল্পনা কোনও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ হইয়া রহে নাই। কোথাও প্রাচীন পথে, কোথাও বা নূতন পথে যেখানে যেমন ইচ্ছা, সে কল্পনা চলিয়া গিয়াছে। তরণীসেন বীরবাহু প্রভৃতির সৃষ্টি এই নূতন পথে যাত্রারই ফল।
    • সভাপতির অভিভাষণ, কৃত্তিবাস স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন- আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮
  • কোন ছাত্রকে তার মনোভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে দক্ষ করে তুলতে চাইলে অবশ্যই তাকে মাতৃভাষার মাধ্যমটি প্রথমে এগিয়ে দিতে হবে, কারণ ওই ভাষার সাহিত্য আর ব্যাকরণ তার জানাই থাকে। নতুন শিক্ষানীতিতে অতঃপর লক্ষ্য রাখতে হবে ছাত্রটি তার মাতৃভাষায় কতটা জ্ঞান লাভ করতে পেরেছে, কতটা ক্ষমতা অর্জন করেছে রচনা লেখার কাজে, ম্যাট্রিকুলেশন থেকে গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত সব পরীক্ষাতেই যা দরকার।
  • কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থগত শিক্ষাই শিক্ষা নহে, একটি সম্পর্ণ মানুষ হইতে হইলে অনেক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন, অনেক অগ্নি-পরীক্ষার প্রয়োজন। কেবল অর্থাজনের জন্যও শিক্ষা নহে। শিক্ষার উদ্দেশ্য—আত্মবিকাশ লাভ করা, হৃদয়ের মার্জনা করা, দর্পণের ন্যায় বিশ্বের প্রতিবিম্ব গ্রহণে হৃদয়কে সমর্থ করা। এই ভাবে যদি মানুষ একবার তৈরি হইয়া উঠে— ক‍্রমে একটা জাতি তৈরি হইয়া উঠে, তবে সেই জাতিকে আর পয়সার জন্য লালায়িত বা গ্রাসাচ্ছাদন-নির্ব্বাহের জন্য ব্যতিব্যস্ত হইতে হয় না।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]