আহমদ শরীফ
অবয়ব
আহমদ শরীফ (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ - ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯) ছিলেন বাংলাদেশী ভাষাবিদ, মনীষী এবং বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের অন্যতম প্রতিভূ। অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তার লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। ভাববাদ, মানবতাবাদ ও মাকর্সবাদের যৌগিক সমন্বয় প্রতিফলিত হয়েছিল তার চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, আচার-আচরণে এবং বক্তব্য ও লেখনীতে। তার রচিত একশতের অধিক গ্রন্থের প্রবন্ধসমূহে তিনি অত্যন্ত জোরালো যুক্তি দিয়ে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা, বিশ্বাস ও সংস্কার পরিত্যাগ করেছিলেন এবং আন্তরিকভাবে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- সহনশীলতা হচ্ছে সংস্কৃতির একটি মৌল শর্ত। আমি যা জানি, যা বুঝি, যা ভাবি, তা সাধারণে জানে না, বোঝে না, ভাবে না, আমার জ্ঞান-বুদ্ধি-রুচি-বিচার-বিবেক অন্যদের চেয়ে উন্নত—এমনকি এক উত্তম্মন্যতা এবং অপরকে অযাচিত উপদেশ বা পরামর্শ দেওয়ার ধৃষ্টতা যে অপরিশীলিত বর্বর রুচি-বুদ্ধিরই পরিচায়ক, তা তথাকথিত শিক্ষিত সংস্কৃতিমানেরাও উপলব্ধি করেন না।
- "আমার জীবনদর্শন"
- আমাদের ঘরে ঘরে প্রতিনিয়ত চলছে হত্যাকাণ্ড। আমরা মশা মারি, মারি মাছি, পিঁপড়ে মারি, ছারপোকা মারি আর মারি তেলাপোকা-ক্বচিৎ ইঁদুরও।
- আমি যা পাইনি তার জন্যে ক্ষুব্ধ হইনি। পরাজয়কে সহজে মেনে নিয়েছি। হার-জিৎ জীবনে আছে জেনে ও বুঝে। সাফল্য-সুখেও স্মরণ করি না সাগ্রহে, কারণ সবার জীবনেই সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা আছেই। এটা নিয়ে গৌরব-গর্ব-আনন্দ-আস্ফালন-প্রচার করা রুচিমানের ও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
- ২১ মার্চ ১৯৯৩
- সংযম। সহিষ্ণুতা, সৌজন্য, যুক্তি, ন্যায্যতা ও বিবেকানুগত্যই হচ্ছে মনুষ্যত্ব।
- ১৫ মে ১৯৯৬
- জীবন হচ্ছে আনন্দ-যন্ত্রণার সমষ্টি। জীবনাভূতিতে তবু আনন্দের, আশার, আশ্বাসের ও সুখের মাত্রা বেশি।
- জীবনে দায়বদ্ধ, কর্তব্যনিষ্ঠ, ন্যায়বান, বিবেক-বুদ্ধি-সততা চালিত থাকতে চেয়েছি। জ্ঞাতসারে স্বজন বলে খাতির, বিদ্বেষ বশে কারো ক্ষতি করিনি, বঞ্চিত করিনি কাউকে তার যথাপ্রাপ্য থেকে। তবু যারা খাতির ও পক্ষপাত প্রত্যাশা করেছিল, তারা ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত ও বিরূপ হয়েছে।
- আমি দুটো বিষয়ে যোগ্য। এক, আড্ডাবাজিতে; দুই, দুষ্ট ও অপছন্দ লোকদের নিঃসংকোচে নিন্দাবাক্য বা নিন্দাজ্ঞাপক বিশেষণ প্রয়োগে। আমি কথায় কথায় চালবাজ, হারামজাদা উচ্চারণে দক্ষ। এছাড়া আর কোনো বিষয়ে আমার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, যোগ্যতা আছে বলে জানি না।
- পরাজিত শত্রুকে লাঞ্চিত করতে নেই। ক্ষমা করতে হয়। এরপরে তো সে নিজের লজ্জায় নিজেই গেল। তারপরে পীড়ন করাটা অমানবিক। আমি সেটা চিরকালই ধরে রেখেছি। আমি কখনো কারো প্রতি ভিকটিমাইজেশন যাকে বলে সেটা কখনো করি নি। আমি নিন্দা করে শেষ করে দেই, কথায় কথায় আমি অসংখ্য মানুষকে ‘হারামজাদা’ ডাকি, ওতেই আমার রাগ-গোস্বা চলে যায়।
- ডক্টর আহমদ শরীফের সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আবুল আহসান চৌধুরী
কালিক ভাবনা
[সম্পাদনা]- বাঙালী চরিত্র সম্বন্ধে বিদেশীদের ধারণাও কখনো ভালো ছিল না। মিথ্যা কথন, ভীরুতা, মামলা-প্রিয়তা, প্রবঞ্চনা প্রভৃতি বাঙালী চরিত্রে ছিল সুলভ।
- বাঙালী ভোগলিপ্সু কিন্তু কর্মকুণ্ঠ। বৈরাগ্য-প্রবণ জৈন-বৌদ্ধ-বৈষ্ণব মতবাদ বাঙালী চিত্তে কর্মকুণ্ঠা আরো প্রবল করেছে। এমন মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি বা চৌর্ববৃত্তি অবলম্বন করে। বাঙালীচরিত্রে যে একদিকে মিথ্যাভাষণ, প্রবঞ্চনা, চৌর্য, ছদ্মবৈরাগ্যভাব, চাতুর্য, সুবিধাবাদ এবং সুযোগসন্ধান, তোয়াজ ও তদ্বির-প্রবণতা প্রভৃতির প্রাবল্য এবং আত্মসমমানবোধের অভাব, অন্যদিকে জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে যে দেবানুগ্রহজীবিতা রয়েছে, তা ঐ কর্মকুণ্ঠারই প্রসূন।
আহমদ শরীফ সম্পর্কে
[সম্পাদনা]- শরীফ ত্যারাবাঁকা কথা বেশ কয়। কিন্তু এক সময় তা কাম করছে। হি ডিড মেনি থিংস।
- আহমদ শরীফ সম্পর্কে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক। যদ্যপি আমার গুরু, ১৯৯৮, আহমদ ছফা।
- অগাধ পাণ্ডিত্য ও মানস্তাত্ত্বিকতার অধিকারী আহমদ শরীফ মূলত দুটি পরিসরে জ্ঞানচর্চা করেছেন। প্রথমটি মধ্যযুগের সাহিত্যগবেষণা, দ্বিতীয়টি আধুনিক সাহিত্য, সংস্কৃতি ও আর্থসামাজিক ভাবনা। ~ রাজীব সরকার
- "আহমদ শরীফের ইহজাগতিকতা", প্রথম আলো
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় আহমদ শরীফ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।