ইবলিশ
অবয়ব
ইসলাম ধর্মমত অনুযায়ী, ইবলিশ (বিকল্প বানান ইবলিস) বা শয়তান হলো শয়তানদের (শায়তিন) নেতা। কুরআন অনুসারে,যখন ইবলিস আদমকে সেজদা করার আদেশ অমান্য করেছিল তখন তাকে জান্নাতের বাহিরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ইসলামিক ধর্মতত্ত্বে ইবলিসকে এমন বৈশিষ্ট্য এবং কর্মের উদাহরণ হিসাবে বিবেচনা করা হয় যাকে আল্লাহ জাহান্নামে শাস্তি দিবেন। ইবলিসের উৎপত্তি ও প্রকৃতি সম্পর্কে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কুরআনের ব্যাখ্যা (তাফসির) এবং নবীদের গল্প (কিসাস আল-আম্বিয়া) ইবলিসের মূল কাহিনীকে আরও বিশদভাবে বর্ণনা করে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- সে বলল, “আমি তার চেয়ে শ্ৰেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। ”
- সূরা:আরাফ। আয়াত:১২
- “আমাকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দিন ,যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে। ”
- সূরা:আরাফ। আয়াত:১৪
- “পাছে তোমরা উভয় ফেরেশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা স্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হও, এ জন্যেই তোমাদের রব এ গাছ থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন। ”....“নিশ্চয় আমি তোমাদের শুভাকাংখীদের একজন। '
- সূরা:আরাফ। আয়াত:২০
- ‘আমার কাজ নয় মানুষকে সাজদাহ্ করা যাকে তুমি পচা কর্দমের ঠনঠনে গাড়া থেকে সৃষ্টি করেছ। ’
- সূরা হিজর। আয়াত:৩৩
- অবশ্যই আমি তাদের কাছে আসব তাদের সামনে থেকে ও তাদের পিছন থেকে, তাদের ডানদিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে এবং আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।
- সূরা:আরাফ। আয়াত:১৭
- ‘হে আমার প্রতিপালক! পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে সময় দিন। সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! যেহেতু আপনি আমাকে ভ্রান্তপথে ঠেলে দিলেন, কাজেই আমিও পৃথিবীতে মানুষের কাছে পাপকাজকে অবশ্য অবশ্যই সুশোভিত করে দেখাব আর তাদের সবাইকে অবশ্য অবশ্যই বিভ্রান্ত করব। কিন্তু তাদের মধ্যে আপনার বাছাই করা বান্দাহদের ছাড়া। ’
- সূরা হিজর। আয়াত:৩৬-৪০
ইবলিশ সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- তারপর আমি ফিরিশতাদেরকে বললাম, আদমকে সিজদা কর। অতঃপর ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না। |
- আল্লাহ সুরা আরাফে বলেছেন। আয়াত:১১
- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আদমসন্তানের ওপর ইবলিস শয়তানের একটি প্রভাব আছে। অনুরূপ ফেরেশতারও একটি প্রভাব আছে। ইবলিস শয়তানের প্রভাব হলো, অকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। আর ফেরেশতার প্রভাব হলো, কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা। সুতরাং যে ব্যক্তি কল্যাণের অবস্থা উপলব্ধি করে সে যেন জেনে রাখে, এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়েছে। কাজেই তার উচিত আল্লাহর প্রশংসা করা। আর যে ব্যক্তি অকল্যাণের অবস্থা উপলব্ধি করে, সে যেন অভিশপ্ত ইবলিস শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) এ আয়াত পাঠ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার প্রতি নির্দেশ দেয়। ’
- সুনানে তিরমিজি
- উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে আরজ করি, হে আল্লাহর রাসুল! ইবলিস শয়তান আমার ও আমার নামাজ-কিরাতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং তাতে জটিলতা সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, ‘তুমি যখন তার উপস্থিতি অনুভব করবে তখন তার কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তোমার বাঁ দিকে তিনবার থুতু ফেলবে। ’
- মুসলিম
- আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন ইবলিস শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শোনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সালাতের জন্য ইক্বামাত(ইকামত/একামত) বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইক্বামাত(ইকামত/একামত) শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে মনে করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, সে কয় রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না।
- (১২২২, ১২৩১, ১২১৩২, ৩২৮৫; মুসলিম ৪/৮, হা: ৩৮৯, আহমাদ ৯৯৩৮) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫৮১)
- জাবির (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইবলিশ পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে বাহিনী প্রেরণ করে। তন্মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জনকারী সে-ই, যে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক কাজ করেছি। সে বলে, তুমি কিছুই করোনি। অতঃপর অন্যজন এসে বলে, অমুকের সঙ্গে আমি সব ধরনের ধোঁকার আচরণই করেছি। এমনকি তার থেকে তার স্ত্রীকে আলাদা করে দিয়েছি। তারপর ইবলিস শয়তান তাকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে, হ্যাঁ, তুমি খুব ভালো। বর্ণনাকারী আমায় বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, অতঃপর ইবলিস শয়তান তার সঙ্গে আলিঙ্গন করে। ’
- সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯৯৯
- আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন ইবলিস শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঠ দেয়। প্রতি গিঠে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঠ খুলে যায়, পরে উযূ করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়, অতঃপর সালাত আদায় করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলূষ কালিমা ও আলস্য সহকারে।
- (৩২৬৯; মুসলিম ৬/২৮, হা: ৭৭৬, আহমাদ ৭৩১২) (আধুনিক প্রকাশনী: ১০৭১. , ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১০৭৬)
- আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে এক ব্যক্তির ব্যাপারে আলোচনা করা হল- সকাল বেলা পর্যন্ত সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে, সালাতের জন্য জাগ্রত হয়নি, তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ইরশাদ করলেন:ইবলিস শয়তান তার কানে পেশাব করে দিয়েছে।
- (৩২৭০; মুসলিম ৬/২৮, হা: ৭৭৪) (আধুনিক প্রকাশনী: ১০৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১০৭৮)
বহি:সংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় ইবলিশ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।