সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
(এস. জয়শঙ্কর থেকে পুনর্নির্দেশিত)

সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর (জন্ম: ৯ জানুয়ারি ১৯৫৫) হলেন একজন ভারতীয় কূটনীতিক এবং রাজনীতিবিদ। তিনি ২০১৯ সালের ৩০ মে থেকে ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য এবং ২০১৯ সালের সালের ৫ জুলাই থেকে রাজ্যসভার সংসদ সদস্য। এর আগে তিনি ২০১৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • আপনি গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের দ্বিধাবিভক্তি ব্যবহার করেছেন। আপনি একটি সত্য উত্তর চান? এটা ভণ্ডামি। আমাদের কাছে বিশ্বের একদল স্ব-নিযুক্ত রক্ষক রয়েছে যাদের পক্ষে এটা হজম করা খুব কঠিন যে ভারতে কেউ তাদের অনুমোদন খুঁজছে না। তারা যে খেলাটি খেলতে চায় তা খেলতে ইচ্ছুক নয়। সুতরাং তারা তাদের নিয়ম, তাদের প্যারামিটারগুলো আবিষ্কার করে, তাদের রায়গুলো পাস করে এবং এটিকে এমন দেখায় যেন এটি কোনও ধরণের বৈশ্বিক অনুশীলন।
  • আমরা কেবল একটি ডকুমেন্টারি বা একটি বক্তৃতা নিয়ে বিতর্ক করছি না যা কেউ ইউরোপীয় শহরে দিয়েছে বা একটি সংবাদপত্র কোথাও সম্পাদনা করে -- আমরা বিতর্ক করছি, আসলে রাজনীতি, যা মিডিয়া হিসাবে প্রকাশ্যভাবে পরিচালিত হচ্ছে -- সেখানে একটি শব্দবন্ধ আছে 'অন্য উপায়ে যুদ্ধ' এটি অন্য উপায়ে রাজনীতি -- আমি বলতে চাচ্ছি আপনি একটি হ্যাচেট কাজ করবেন, আপনি একটি হ্যাচেট কাজ করতে চান এবং বলুন এটি সত্যের জন্য আরেকটি অনুসন্ধান যা আমরা 20 বছর পরে এই সময়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
  • দেখুন, তারা (চীন) বড় অর্থনীতি। আমি কি করতে পারি? ছোট অর্থনীতি হিসেবে আমি কি বড় অর্থনীতির সঙ্গে লড়াই করতে যাচ্ছি? এটা প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ার প্রশ্ন নয়, এটা সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন।
    • ভারতের চীন নীতি সম্পর্কে, উদ্ধৃত হিসাবে"Mollycoddling China is not the solution"দ্য স্টেটসম্যান। ৭ মার্চ ২০২৩। 
  • এটা পশ্চিম নয় যে এশিয়া ও আফ্রিকাকে বিপুল পরিমাণে পণ্যের দ্বারা প্লাবিত করছে। আমি মনে করি আমাদের অতীতের লক্ষণটি কাটিয়ে উঠতে হবে যে, পশ্চিমারা খারাপ লোক এবং এর বিপরীত দিকে রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। পৃথিবী যত জটিল, সমস্যা তার থেকেও অনেক বেশি জটিল।
  • বর্তমানে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভারতীয় উপমহাদেশে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী।
  • বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। যেটি অনেক বড় একটি ঘটনা
  • সমুদ্রসীমা নিয়ে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল। বিষয়টি নিয়ে পরে আমরা আদালতে যাই। আদালতের যে রায় হবে, সেটি মেনে নেওয়ার বিষয়ে আমরা উভয়ে একমত হই। শেষ পর্যন্ত সমুদ্রসীমা নিয়ে যখন রায় এল, তখন সেটি আমরা মেনেও নিয়েছি। যদিও অনেক কিছুই আমাদের পক্ষে ছিল না। এটি দুটি দেশ ও আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদাহরণ।
  • আমি মনে করি না আমাদের চীনকে ভয় পাওয়া উচিত। বরং আমাদের মনে করা উচিত বিশ্ব রাজনীতি একটি প্রতিযোগিতামূলক খেলা। আপনি আপনার সেরাটা করুন এবং আমি আমার সেরাটা করব। চীন একটি প্রধান অর্থনীতি, সে তার মতো চেষ্টা করছে। চীন যা করছে তা নিয়ে অভিযোগ না করে বরং আমাকে এর চেয়ে ভাল করতে দিন।
  • রাজনীতি আসলে রাজনীতিই। আমি কখনওই গ্যারান্টি দিতে পারব না যে, সব দেশে প্রতিদিন প্রত্যেক মানুষ আমাদের সমর্থন করবেন, বা আমাদের পাশে থাকবেন। ... গত ১০ বছর ধরে আমরা যেটা চেষ্টা করেছি, তা হল দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করা। এর ফলে কখনও রাজনৈতিক চাপানউতর হলেও, সেই দেশের মানুষের যাতে ভারতের প্রতি সুন্দর অনুভূতি থাকে, তাঁরা যাতে বোঝেন যে, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই চেষ্টাই করা হয়েছে।
  • বিশ্ব রাজনীতিতে অনেক সময়ে বিভিন্ন দেশ তাদের সুবিধে অনুযায়ী নীতিকে তুলে ধরে। ভারতের জমি দখল করে বসেছিল একটি দেশ। তা নিয়ে বিশ্ব কিন্তু কোনও দিন রা কাড়েনি।
  • আমাদের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া উচিত বলে রাষ্ট্রপুঞ্জকে (জাতিসঙ্ঘ) বলে দিতে হবে না। আমাদের কাছে ভারতের জনগণ আছে। ভারতের জনগণ নিশ্চিত করবে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তাই, এ নিয়ে কারও চিন্তা করার দরার নেই।
  • কানাডা তাদের রাজনীতিতে এমন উগ্রপন্থী বিচারধারার শক্তিকে জায়গা করে দিচ্ছে যে তাতে তাদেরই ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়ে যাবে। যে সব চরমপন্থী ভাবধারার মানুষ সন্ত্রাসবাদের প্রশংসা করে, তাদের গণতান্ত্রিক সমাজে জায়গা দেওয়া বিপজ্জনক। যারা জায়গা দিচ্ছে, তাদের জন্যই বিপজ্জনক।
  • দেশভাগের সময় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত এবং হতাশ হয়েছিলেন, তাঁদের প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। ... আমারও নীতি আছে। দেশভাগের সময় যে সব মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন, সেই সব মানুষের জন্যই সিএএ। ... শুধু আমাদের দেশে নয়, অন্য দেশেও ধর্ম এবং জাতির ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ... আমি কারও নীতি বা গণতন্ত্রের আদর্শ নিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু আমার মনে হয়, আমাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেকের সঠিক ধারণা নেই। বিশ্বের অনেক জায়গা থেকে এমন অনেক মন্তব্য করা হচ্ছে, তা শুনে মনে হচ্ছে ভারতে কোনওদিন দেশভাগ হয়নি। দেশভাগের সময় এমন কোনও সমস্যা হয়নি, যা সিএএ সমাধান করতে পারবে না?
  • ভারত দীর্ঘ সময় ধরে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলে এসেছে। আমরা দশকের পর দশক ধরে এই অবস্থানেই অনড় রয়েছি। আর এখন বিশ্বের আরও অনেক দেশ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথাই বলছে। এটা দিন দিন আরও জরুরি হয়ে পড়ছে। ... ইসরায়েল-গাজার যুদ্ধ যেন দেশের মধ্যে বা তার সীমা ছাড়িয়ে চার দিকে আরও ছড়িয়ে না-পড়ে। দু’টি রাষ্ট্রের সমাধান প্রয়োজন, যেখানে প্যালেস্টাইনের মানুষেরা সুরক্ষিত সীমান্তের ভিতরে বাস করতে পারবেন। মানবাধিকার রক্ষার আইনকে সব সময়ে শ্রদ্ধা করতে হবে।
  • এশিয়ার দেশগুলির আরও বেশি করে রাশিয়ার সঙ্গে সংলগ্ন হওয়া প্রয়োজন। এটা অবশ্যই ভারতের জাতীয় স্বার্থের জন্য জরুরি। তবে শুধু ভারত নয়, আন্তর্জাতিক স্বার্থের জন্যও প্রয়োজনীয়। ... আজ রাশিয়ায় যা ঘটছে, তা হল রাশিয়ার জন্য পশ্চিমের অনেক দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন আমরা তা জানি।
  • ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে আমরা গভীর ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিশ্বাস করি এটা এক দিন শেষ হবে। প্রত্যেকে এই সংঘাতের কারণে ভুগছে। তবে আমি জানি না, ঠিক কী ভাবে এই যুদ্ধ শেষ হবে। গোটা প্রক্রিয়াটির ততটা গভীরে আমরা নেই, যে জানব। ... ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ইউরোপ তাদের তেল রফতানির জন্য পূর্ব এশিয়ার মুখাপেক্ষী হল। আমরা কী করতাম? বহু ক্ষেত্রে পূর্ব এশিয়া ইউরোপকে অগ্রাধিকার দিয়েছে কারণে তারা অধিক মূল্য দিতে সক্ষম। তাহলে হয় আমাদের তেল কেনা বন্ধ করে দিতে হত, কারণ সামনে লম্বা লাইন, অথবা ইউরোপের মতো চড়া দাম দিতে হত।
  • আমরা ওখানে (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদে) পৌঁছব। আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত সে ব্যাপারে। তবে এটাও বলতে চাই যে কাজটি খুব সহজ হবে না। দুনিয়া জোড়া প্রতিযোগিতা চলছে। অনেকেই আমাদের আটকাতে চাইবে। তারা স্থায়ী আসন পর্যন্ত পৌঁছনোর রাস্তাটাকে কঠিন করে তুলবে, বাধা দেবে। অনেক বিতর্ক সৃষ্টি করবে। তবে স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারে আজ আমি অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী। পাঁচ বা দশ বছর আগে যতটা ছিলাম তার চেয়ে বেশিই।
  • গত ৭৫ বছরের ভারত-চীন সম্পর্কে অনেক অধ্যায় আছে। একটা অধ্যায় বাস্তববোধ সম্পন্ন। আর একটি রোম্যান্টিসিজমে ভরা, বাস্তববোধহীন। যা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার প্রথম দিন থেকেই। চিনকে কী ভাবে সামলাতে হবে সেটা নিয়ে নেহরু এবং পটেলের মধ্যে বিস্তর মতবিরোধ ছিল। নেহেরুর চীন নীতির তীব্র বিরোধী ছিলেন সর্দার পটেল। আজ মোদী সরকার অনেকটাই বাস্তবোচিত পদক্ষেপ করছে। যেটা শুরু করতে চেয়েছিলেন সর্দার পটেল।
  • ভারত এবং রাশিয়ার সম্পর্ক কেবলমাত্র রাজনীতি, কূটনীতি কিংবা অর্থনীতির বিষয় নয়। তার থেকেও গভীরতর কিছু। বর্তমান বিশ্বের ভূকৌশলগত পরিস্থিতির সাপেক্ষে আমাদের দু’টি দেশের উচিত পরস্পরকে বোঝা। এটা খুবই জরুরি। ... আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এখন ভারতের বৈশিষ্টের কথা মাথায় রেখে তৈরি হওয়া উচিত। আপনারা ভারতের দিকে তাকান। আমাদের অর্থনীতি ৪ ট্রিলিয়ন ডলার ছুঁতে চলেছে। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে আমরা উন্নত দেশ হওয়ার চেষ্টা করছি। ... আজ আমরা বহুমেরু বিশ্বের কথা বলে থাকি। তাই গোটা বিশ্বের নতুন করে ভারসাম্য তৈরি হওয়া প্রয়োজন। কয়েকটি দেশ, সমাজ এবং ঐতিহ্যই এখানে রাজত্ব করবে— এমনটা তো চলতে পারে না।
  • তেল কেনার ক্ষেত্রে ভারতের আমদানি নীতি বিশ্ব জুড়ে তার দামের আরও চড়ে যাওয়া আটকেছে। কারণ, এই বাজারে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে হয়নি। ফলে বিশ্বে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণেও ভারতের ভূমিকা রয়েছে। আমাদের তো তাই ধন্যবাদ প্রাপ্য। সে জন্য অপেক্ষা করছি! ... ভারত যদি রাশিয়ার থেকে অশোধিত তেল না কিনত, তা হলে তার দাম আকাশ ছুঁয়ে ফেলত। কারণ ওই পরিমাণ তেল কিনতে সেই সব বাজারেই যেতে হত, যেখান থেকে ইউরোপও কিনছে। ফলে ইউরোপকে আমাদের থেকেও বেশি অর্থ দিতে হত।
    • ধন্যবাদ প্রাপ্য ভারতের: জয়শঙ্কর - আনন্দবাজার পত্রিকা। লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত এক আলোচনায় জয়শঙ্কর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের প্রভাবশালী অবস্থান নিয়ে সরব হন।
  • ৭ অক্টোবর যেটা হয়েছিল সেটা বড় মাপের সন্ত্রাসবাদ। গোটা অঞ্চলকে যা ভিন্ন অভিমুখে ঠেলে দেয়। তবে অবশ্যই সবাই আশা করছেন, একটা সময়ের পরে সবাই বুঝবেন যা ঘটছে তা অঞ্চলের পক্ষে অশুভ। সহযোগিতার মাধ্যমে কিছুটা স্থিতি আসবে। ... সন্ত্রাসবাদ আমরা মেনে নিতে পারি না। তার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতেই হবে। আবার প্যালেস্টাইনের দিকটিও রয়েছে। সে দেশের মানুষের সমস্যার সমাধান করতেই হবে। আমাদের মত হল, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান করতে হবে। সেটা আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমেই করতে হবে। সন্ত্রাসবাদ ও সংঘাতের মাধ্যমে নয়। মানবিক আইন বলবৎ হওয়া প্রয়োজন। এই ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে ভারসাম্যের অভাব থাকাটা ঠিক নয়।
  • আমায় প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হয় যে, এই দুই দেশ (ভারত-আমেরিকা)-এর সম্পর্ক কোথায় চলেছে? এই সম্পর্কের সীমা নির্ধারণ বা সংজ্ঞা দেওয়া বা এই নিয়ে প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করা আমার পক্ষে কঠিন। কারণ এই সম্পর্ক সব দিক থেকে সমস্ত প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সে কারণে আজ দুই দেশের সম্পর্কের সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করি না। আমরা এই সম্পর্কের মাত্রা ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছি। ... আমরা নতুন ক্ষেত্র খুঁজে চলেছি। এই কাজটা যতই এক সঙ্গে করব, ততই বেশি সফল হব। ... ইসরোর চন্দ্রযানের মতোই ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
  • আপনারা যদি গত তিন বছরের দিকে নজর রাখেন, তা হলে দেখবেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংযোগ (দু’দেশের মধ্যে) ব্যাহত হয়েছে। পারস্পরিক সফর বন্ধ। উচ্চপর্যায়ের সামরিক উত্তেজনা চলছে। ... চিনের সঙ্গে কূটনীতির একটা মজা রয়েছে। কখনই তারা খোলসা করে বলবে না যে কেন তারা এসব করছে! ... এক এক সময়ে চিন আমাদের এক এক রকম ব্যাখ্যা দিয়েছে। কিন্তু কোনওটাই ধোপে টেকেনি। বাষট্টিতে ভারত-চিন যুদ্ধের পরে আমাদের দেশে চিন সম্পর্কে ধারণা ধীরে ধীরে কিছুটা শুধরে ছিল। কিন্তু তা আবার ধাক্কা খেয়েছে। চুক্তিভঙ্গ করে বিপুল সংখ্যক সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মজুত করেছে বেইজিং।
  • মণিপুরের সমস্যার একটি দিক হল, বাইরে থেকে আসা মানুষের ফলে রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। এ ছাড়াও, সেখানে এই হিংসার ইতিহাস রয়েছে। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। ... মণিপুরে চূড়ান্ত হিংসার সময় যে পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তা বলে দেয়, যে সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাপক ভাবে নিয়ন্ত্রণ দরকার। যাতে হিংসা আর না ছড়ায়।”
  • আমাদের সংবিধানে লেখা রয়েছে, ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত। সবাইকে এটি পড়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ... যখনই আপনি ভারত বলবেন, এমন একটি অর্থ এবং ব্যঞ্জনা তৈরি হবে যা আমাদের সংবিধানেও প্রতিফলিত হয়।
  • এমন বিকৃত মানচিত্র প্রকাশ করা চিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ওরা প্রতিবেশীর ভূখণ্ডকেও নিজের অংশ বলে দাবি করে।
  • আপনারা যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যে, কাকে সেরা কূটনীতিবিদ হিসাবে গণ্য করি? আমার উত্তর একটাই— মহাবীর হনুমান। যে দেশে তিনি গিয়েছিলেন, তার সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না।এরপর গোপন সূত্রে তিনি সীতাকে খুঁজে বার করেন।
  • মোদীর মতো কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পাওয়া আমাদের দেশে বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী আর আমি তাঁর মন্ত্রিসভার এক জন সদস্য, শুধু এই জন্য আমি এই কথা বলছি এমনটা নয়। বাস্তবিকই তিনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও মাটিতে পা রেখে চলেন। এই ধরনের মানুষ এক বারই আসেন। আমাদের কাছে এটা শুধু একটা সম্পর্কের ব্যাপার নয়, এটা আসলে সংস্কার ও তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দেশের পরিবর্তনের বিষয়।
  • শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন এক জন সত্যিকারের জাতীয়তাবাদী। তিনি বার বার বলেছিলেন, পাকিস্তান সম্পর্কে আমাদের আচরণ অত্যন্ত দুর্বল। যা সমগ্র ভারতবাসী ২৬/১১ হামলার পরে বুঝতে পারে। ... শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কখনও চাননি এক দেশ, দুই নিশান, দুই প্রধান, দুই বিধান। ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদের সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগোনো গিয়েছে। ... ২০১৯-এর ৫ আগস্টের আগে কেউ এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণকরতে পারেনি।
    • কাশ্মীর-কৃতিত্ব মোদীর, দাবি জয়শঙ্করের - আনন্দবাজার পত্রিকা। একটি অরাজনৈতিক সংস্থার আয়োজিত শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা উপলক্ষে কাশ্মীর সম্পর্কিত সংবিধানের ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি প্রসঙ্গে কলকাতায় এই বক্তব্য রাখেন সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর।
  • যত ক্ষণ পর্যন্ত সার্কের একটি সদস্য দেশও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে, তত ক্ষণ ভারত সার্ক-এর সভায় যোগ দেবে না। ... ভারত এমন পরিস্থিতি কোনও মতেই সহ্য করবে না, যেখানে রাতে জঙ্গি কার্যকলাপ চলে আর দিনে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ হয়। ... কয়েক বছর ধরে সার্ক-গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে আলোচনার না-হওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সার্ক-এ এমন এক সদস্য দেশ রয়েছে, যারা সুসম্পর্ক বজায় রাখতেই জানে না। সুসম্পর্ক বজায় রাখার শর্তই পূরণ করে না। সে কারণেই ভারত সার্কের বৈঠকে যোগ দিচ্ছে না। ... সাম্প্রতিক সময়ে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কোনও রকম আপসের প্রশ্নই ওঠে না। সমস্যা রয়েছে এবং সেই সমস্যাগুলি বোঝারও সময় এসেছে। প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তান একেবারেই ব্যতিক্রম। সন্ত্রাসবাদের মতো জঘন্য কার্যকলাপ কোনও আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে বলে ভারত মনে করে না। যত ক্ষণ আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বজায় থাকবে, তত ক্ষণ আলোচনার মাধ্যমে কোনও সমাধানে পৌঁছনো সম্ভব নয়।
  • আমি বলতে চাই, জি২০-র সঙ্গে তাদের (পাকিস্তানের) কোনও সম্পর্ক নেই। সেই সঙ্গে আমি বলব যে শ্রীনগরের সঙ্গেও তাদের কোন সম্পর্ক নেই। কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করার জন্য শুধু মাত্র একটি ইস্যু আছে তা হল, পাকিস্তান কখন অধিকৃত কাশ্মীরের অবৈধ দখলদারি ছেড়ে দেবে।
  • আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়া বা জাপান— যে কোনও দেশই হোক না কেন, আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি যে, এই সমস্ত সম্পর্ক একতরফা ভাবে যেন না এগোয়। কিন্তু সীমান্ত বিরোধ এবং বর্তমানে আমাদের সম্পর্কের অস্বাভাবিক প্রকৃতির কারণে চিন কিছুটা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তি লঙ্ঘনের ফলাফল।
  • সত্য কথা বললে বলতে হয়, পশ্চিমা বিশ্বের একটা বদভ্যাস আছে। তারা মনে করে অন্যদের বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে তাদের ঈশ্বরপ্রদত্ত অধিকার রয়েছে।
  • আমি সেরা ফরেন সার্ভিস অফিসার হতে চাইতাম। আমার ধারণা ছিল, একমাত্র বিদেশ সচিব হলেই সেরা অফিসার হওয়া যায়। আমার বাড়িতেও এ রকমই একটা ধারণা চালু ছিল। একে চাপ বলব না। কিন্তু আমরা সকলেই এই বিষয়টি নিয়ে একটু বেশিই সচেতন ছিলাম। ... আমার বাবাও আমলা ছিলেন। সচিব হয়েছিলেন। কিন্তু সচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে জনতা সরকারের আমলে সচিব হয়েছিলেন। সম্ভবত সে সময় কনিষ্ঠতম সচিব ছিলেন। ... ১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী পুনর্নির্বাচিত হন। আমার বাবাই প্রথম সচিব ছিলেন, যাঁকে তিনি অপসারিত করেন। সকলেই বলবেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে তিনিই সব থেকে বেশি জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। ... সম্ভবত আমার বাবা দৃঢ়, ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। সে কারণেই হয়তো সমস্যা হয়েছিল। আমি জানি না। ... বাবার প্রয়াণের পর আমি সচিব হয়েছি। তখন আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, সচিব হওয়া। সেই লক্ষ্য আমি পূরণ করেছি। তবে যে রাজনৈতিক সুযোগ আমার সামনে এসেছি, তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।
  • আমরা দৃঢ় ভাবেই মনে করেছি, শ্রীলঙ্কার ঋণদাতারা কলম্বোকে বেহাল অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য ব্যবস্থা নেবে। তবে ভারত অন্যকারও পদক্ষেপের জন্য বসে থাকেনি। আমরা আইএমএফ-কে আর্থিক বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যাতে শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে এগিয়ে যেতে পারে। ... ভারত বিশ্বস্ত প্রতিবেশী, আস্থাভাজন অংশীদার, যে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজনে বাড়তি পথ হাঁটতে তৈরি।
  • ভারত এমন এক দেশ, যে কোনও দেশকে আঘাত করে না। তবে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যা দরকার, সবটাই করে। ... ভারতের ক্ষেত্রে ইতিহাসের পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানও এই দেশের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। ভারতের নামে যে মহাসাগর, তার কেন্দ্রে রয়েছে ভারতীয় উপদ্বীপ। আমাদের অংশগ্রহণ ছাড়া এশিয়ার মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ভারত মহাসাগরের ভৌগোলিক গুরুত্ব আজ আরও বেশি। সে কারণে গোটা দুনিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ভারত। যত বেশি ভারত অংশগ্রহণ করবে, তত তার গুরুত্ব বাড়বে।
  • অস্ত্র এবং জ্বালানির প্রশ্নে আমাদের রাশিয়া নির্ভরতার একাধিক কারণ আছে। অস্ত্রের গুণমানের কারণেই শুধু নয়, বহু দশক ধরে পশ্চিমী বিশ্ব ভারতকে কোনও অস্ত্র রফতানি করত না। ... আমরা বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের ভবিষ্যৎ স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিই। জাতীয় স্বার্থই সব সময় আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পায়।
  • ইউরোপকে এই মানসিকতা থেকে বেরোতে হবে যেখানে তাদের সমস্যাই গোটা বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু গোটা বিশ্বের সমস্যার বোঝা তাদের নয়। ... আজ দেখা যাচ্ছে একটি সংযোগ তৈরি করা হচ্ছে। ইউক্রেনে যা ঘটছে, তার সঙ্গে ভারত-চিন সম্পর্কের সংযোগ। এটা আপনাদের সবাইকেই বুঝতে হবে, ভারত-চিনের মধ্যে যা ঘটেছে, সে সব ইউক্রেনে যুদ্ধ হওয়ার অনেক আগেই। ফলে আমাদের সঙ্গে কতটা কঠোর হওয়া উচিত বা অনুচিত, কতটা এগোনো উচিত বা অনুচিত, তা শেখার জন্য বিশ্বের অন্যত্র উদাহরণ খোঁজার কোনও প্রয়োজন চিনের নেই। এই সংযোগ টানার বিষয়টিকে আমার খুব একটা যথার্থ বলেও মনে হয় না। ... বিশ্ব এখন আর ততটা ইউরোপকেন্দ্রিক নেই, যা আগে ছিল। আমি যদি সামগ্রিক ভাবে ইউরোপকে ধরি, তা হলে দেখতে পাব, অতীতে বহু বিষয়ে ইউরোপ নিশ্চুপ ছিল। এশিয়ার কেউ কেন ইউরোপকে আদৌ বিশ্বাস করবে?
  • এই মুহূর্তে আমরা কাবুলের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। যেহেতু তালিবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তাই আমাদের তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক একই রকম থাকবে। ... সবার মতো আমরাও আফগানিস্তানের পরিবর্তিত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য সেখানে থাকা ভারতীয়দের সুরক্ষার দিকে নজর রাখা ও ভারতীয়দের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা।
  • গোটা অঞ্চলের শান্তি, সমৃদ্ধিকে জোরদার করার জন্য আমরা লড়ছি। শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অখণ্ডতা, সুস্থিতি এবং ঐক্য বজায় রাখার জন্য ভারত দৃঢ় ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সমন্বয় সাধনের প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে আসছি। আমরা চাই শ্রীলঙ্কায় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দর্শন তৈরি হোক যা জাতিগত সম্প্রীতি বাড়াবে। ... ঐক্যবদ্ধ শ্রীলঙ্কায় একতা, সাম্য, শান্তি এবং সম্মানের জন্য তামিলদের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করা কলম্বোর নিজের স্বার্থের মধ্যেই পড়ে। ... সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন-সহ শ্রীলঙ্কা সরকার তামিলদের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার জন্য যে সব কথা দিয়েছিল, সেগুলিও পূর্ণ করা তাদেরই স্বার্থের জন্য ভাল। ... ভারত বরাবরই কলম্বোর নির্ভরযোগ্য অংশীদার এবং বিশ্বাসভাজন বন্ধু। দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, সম্মান এবং স্পর্শকাতরতা রয়েছে। যার ফলে এই অক্ষ আরও মজবুত হবে।
  • সীমান্তের অবস্থা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের আগেই সে কথা আমি লিখেছিলাম। ... সীমান্তে যদি শান্তি ও স্থিতাবস্থা না থাকে, তা হলে বাকি সম্পর্কও তার উপর ভিত্তি করেই এগোয়। কারণ, সম্পর্কের ভিত্তিই হল সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা।
  • আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রের ভূমিকাই যথেষ্ট ভাল, শুধু একটি দেশ ছাড়া।
  • এস-৪০০ নিয়ে ভারত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এবং তা মার্কিন সরকারকে জানানোও হয়েছে। নিজের দৌত্য ক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আমি। এই চুক্তি আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আশা করি সকলে তা বুঝবেন। ... শুরু থেকেই বলে এসেছি, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কী সরঞ্জাম কিনব, কোথা থেকে কিনব, সার্বভৌম দেশ হিসাবে তা ঠিক করার অধিকার এবং স্বাধীনতা রয়েছে আমাদের। প্রত্যেকের সেটা বোঝা উচিত। কী সরঞ্জাম কিনব, রাশিয়ার কাছ থেকে কিনব কি না, সেটা অন্য কোনও দেশ ঠিক করে দেবে তা একেবারেই পছন্দ নয় আমাদের। একই ভাবে আমেরিকার কাছ থেকে কিছু কেনা উচিত, কি উচিত নয়, সেটাও কেউ বলে দেবে না।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]