ভারত
অবয়ব

ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল, ও ভুটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মায়ানমার অবস্থিত। এছাড়া ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)।
উক্তি
[সম্পাদনা]অ
[সম্পাদনা]- ভারতের নবজন্ম হইতেছে—এই ধরণের কথা আজকাল আমাদের মধ্যে খুবই শুনা যায়। ফলতঃ, দেশে যে একটা নূতন জীবনের, নূতন চিন্তার বহুবঙ্কিম ধারা ক্রমেই ফুটিয়া উঠিতেছে, ক্রমেই বাড়িয়া চলিয়াছে, তাহা দেখিয়া মনে হয় ভারতের সত্য সত্যই নবজন্ম হইতেছে। যদি তাই হয়, যদি বাস্তবিকই ভারত একটা নূতন জন্ম গ্রহণ করিতে চলিয়া থাকে, তরে ব্যাপারটি কেবল তাহার নিজের পক্ষে নয়, জগতের পক্ষেও যে কত বড় অমূল্য জিনিষ হইয়া পড়ে, তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না।
- অরবিন্দ ঘোষ, ভারতের নবজন্ম, অনুবাদক: নলিনীকান্ত গুপ্ত, ১৯২৫, পৃষ্ঠা ১–৪২।
- যুগের ভারত মৃত নয় এবং এটির সৃজনশীলতা শেষ হয়ে যায়নি; এটি বেঁচে আছে এবং এখনও নিজের এবং মানুষের জন্য কিছু করার আছে।
- অরবিন্দ ঘোষ, মাসিক আর্যের শেষ সংখ্যায়: একটি দার্শনিক পর্যালোচনা (জানুয়ারি ১৯২১), যেমনটি দ্য মডার্ন রিভিউ (১৯২১), ২৯তম খন্ড পৃ. ৬২৬ এ উদ্ধৃত হয়েছে।
- ভারতবর্ষ একটি অতিবিস্তৃত মহাদেশ, বহু সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন দেশের একত্র সমাবেশে অসীম রহস্যের আধার হইয়া, এতকাল নীরবে কাল যাপন করিতেছিল। তাহার অতি পুরাতন ভূস্তর নিহিত পূর্বতন কীর্তি চিহ্ন অনাবিস্কৃত এবং অনালোচিত থাকিয়া, প্রকৃত তথ্যের সন্ধান প্রদান করিতে পারিতনা। তজ্জন্য ইউরোপীয়গণ ভারত পুরাতত্ত্বের প্রাচীনত্ত্ব সম্বন্ধে অনেক অলীক অনুমানের অবতারণা করিয়া আসিতেছিল এবং কোণ স্থলে অকস্মাৎ কোণ পুরাকীর্তি আবিস্কৃত হইলে তাহার মূলানুসন্ধানের জন্য যথাযোগ্য আয়োজন না করিয়াই, তাহাকে হয় ব্যাবিলনের, না হয় মিশরের, না হয় গ্রীস, রোমের প্রভাবচিহ্ন বলিয়া ব্যাখা করিতে চাহিতেন। তথাপি কোণ কোণ মনিষী ভারত স্থাপত্যের মধ্যে কোনপ্রকার পরপ্রভাবের চিহ্ন লক্ষ্য করিতে না পারিয়া, ভারতবর্ষকে প্রহেলিকাময় মনে করিতে বাধ্য হইত।
- অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রচনা সংগ্রহ -এর বঙ্গভূমী ও বাঙ্গালি পরিচ্ছেদ -এর অন্তর্গত মানব সভ্যতার আদি উদ্ভবক্ষেত্র উপপরিচ্ছেদ থেকে সংগৃহীত। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় -এর পত্রিকা মানসী ও মর্ম্মবাণী -র ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন সংখ্যায় রচনাটি প্রকাশিত হয়েছিল। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রচনা সংগ্রহ
আ
[সম্পাদনা]- একদিন—সেই অতি প্রাচীনকালে—যখন জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষীণ রশ্মিও জগতে ফুটে নাই,—বিশ্ব যখন একপ্রকার প্রগাঢ় অন্ধতমসে আচ্ছন্ন—সেই আদিকালে—ভারতের আর্য্যাবর্ত্তে যে বেদগান গীত হইয়াছিল, সেই গানে তখনকার ভারতের সর্ব্বত্র,—“পর্বত-পাথার, সমুদ্র কান্তার” সমস্ত ভরিয়া গিয়াছিল,—সেই এক সঙ্গীতের মধুর আকর্ষণে ভারতবর্ষ যেন একপ্রাণ হইয়া গিয়াছিল,—শ্রৌতযুগের সেই সাহিত্যিক একতা, সেই সঙ্ঘ-বদ্ধ ভাব, সেই চিরনবীন প্রেম, সেই বড় স্পৃহণীয় মিলন,—আর কি হইতে পারে না?
- আশুতোষ মুখোপাধ্যায় - জাতীয় সাহিত্য, ১৯৩৬ (পৃ. ১-৩০)।
- ভারতে এটাও লক্ষণীয় যে, সমস্ত ভারতীয়রাই স্বাধীন, এবং কোনও ভারতীয়ই দাস নয়। এতে ভারতীয়রা লেসেডেমোনীয়দের সাথে একমত। তবুও লেসেডেমোনিয়ানদের দাসদের জন্য হেলট আছে, যারা দাসদের দায়িত্ব পালন করে; কিন্তু ভারতীয়দের কোন দাস নেই, কোন ভারতীয় দাস নয়।
- আরিয়ান, অ্যানাবাসিস আলেকজান্দ্রি, বই ৭ম খন্ড: ইন্ডিকা, এডগার ইলিফ রবসন (১৯২৯), পৃ. ৩৩৫।
এ
[সম্পাদনা]- যে যুগে ভারতে সত্যিকারের ইতিহাস আবির্ভূত হয়েছিল সেই যুগটি ছিল এক মহান বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক উদ্দীপনা। গঙ্গা উপত্যকায় সব ধরনের রহস্যবাদী এবং সুফিবাদীরা ঘুরে বেড়াত, সকলেই মোক্ষের উপায় হিসাবে মানসিক শৃঙ্খলা এবং তপস্যার কোনো না কোনো ধরনকে সমর্থন করত; কিন্তু বুদ্ধের যুগ, যখন অনেক শ্রেষ্ঠ মনের মানুষ তপস্বী জীবনের জন্য তাদের ঘরবাড়ি ও পেশা ত্যাগ করছিলেন, সেই সময়টাও ছিল বাণিজ্য ও রাজনীতিতে অগ্রসর হওয়ার সময়। এটি কেবল দার্শনিক এবং তপস্বীই নয়, বণিক রাজপুত্র এবং কর্মরত ব্যক্তিদেরও জন্ম দিয়েছে।
- দ্য ওয়ান্ডার দ্যাট ইজ ইন্ডিয়া (১৯৫৪) এ এএল বাশাম
ক
[সম্পাদনা]- দুঃখ কী ভাই, হারানো সুদিন ভারতে আবার আসিবে ফিরে,
দলিত শুষ্ক এ মরুভূ পুন হয়ে গুলিস্তাঁ হাসিবে ধীরে॥
কেঁদো না, দমো না, বেদনা-দীর্ণ এ প্রাণে আবার আসিবে শক্তি,
দুলিবে শুষ্ক শীর্ষে তোমারও সবুজ প্রাণের অভিব্যক্তি।
জীবন-ফাগুন যদি মালঞ্চ-ময়ূর তখতে আবার বিরাজে,
শোভিবেই ভাই, ওই তো সেদিন, শোভিবে এ শিরও পুষ্প-তাজে৷- কাজী নজরুল ইসলাম - বোধন, বিষের বাঁশি (১৯২৪)।
- যেদিন ভারত এক জাতি হবে সেইদিন ইংরেজকেও বোঁচকা-পুঁটলি বাঁধতে হবে। এ কথা শুধু যে ইংরেজ জানে তা নয়, রামা শ্যামাও জানে। “হিন্দু” “মুসলমান” এই দুটো নামের মন্ত্রৌষধিই তো ইংরেজের ভারত-সাম্রাজ্য রক্ষার রক্ষা-কবচ।
- বিপ্লবাধিপ নামক চরিত্র, কাজী নজরুল ইসলাম - কুহেলিকা, পর্ব ৩, (১৯৩১)।
- সুধাই হে কহিনুর! কহিবে স্বরূপ,
কি বিষাদে ভারতের বসতি ত্যজিলে?
কেন হলে নিজ দেশে নিদয় এরূপ?
কেন বা সাগর পারে গমন করিলে?
ভারতের অতিধন, মণিশিরোমণি!- কৃষ্ণকিশোর বন্দ্যোপাধ্যায় - কহিনুর, কবিতাকুসুমাঞ্জলি, ১৮৬৮ (পৃ. ৫৬-৫৮)।
গ
[সম্পাদনা]- ইংরেজরা আমাদের শিখিয়েছে যে, আমরা আগে এক জাতি ছিলাম না এবং এক জাতি হতে আমাদের শতাব্দীর পর শতাব্দী লেগে যাবে। এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। তারা ভারতে আসার আগেই আমরা এক জাতি ছিলাম। একটি ভাবনা আমাদের অনুপ্রাণিত করত। আমাদের জীবনযাত্রার ধরণ ছিল অভিন্ন। আমরা এক জাতি ছিলাম বলেই তারা এখানে এক রাজত্ব স্থাপন করতে পেরেছিল। পরে তারাই আমাদের বিভক্ত করেছে।
- মহাত্মা গান্ধী, হিন্দ স্বরাজ, নবম অধ্যায়।
জ
[সম্পাদনা]- দেখা যাচ্ছে, ঐ প্রাচীন যুগেও ভারতের ব্যবসাবাণিজ্য পাশ্চাত্যে ইউরোপ আর পশ্চিম-এশিয়া এবং প্রাচ্যে চীন অবধি বিস্তার লাভ করেছিল, এবং তা বজায় ছিল হাজার বৎসরেরও অধিক কাল। এর কারণ কী? সে যুগে ভারতবাসীরা যে উৎকৃষ্ট নাবিক আর ব্যবসায়ী ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই, শিল্পনৈপুণ্যও তাদের ছিল। কিন্তু শুধু ঐ কারণেই যে বিদেশের বাজারে তারা একচেটিয়া ব্যবসা করত তা নয়। আসল কারণ হল এই, ভারতবর্ষ তখন রসায়ন-শাস্ত্রে চরম উৎকর্ষ লাভ করেছিল, বিশেষত রঞ্জনশিল্পে। সে যুগের ভারতবাসীরা পাকা রঙ তৈরি করতে জানত এবং তা দিয়ে বস্ত্রাদি রঙাত।
- জওহরলাল নেহরু - বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ, অনুবাদ: সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, ১৯৫১ (পৃ. ৯৬-৯৭)।
ন
[সম্পাদনা]- আমার স্বপ্ন স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আপনার প্রভায় গৌরবান্বিত সমুজ্জল ভারতের স্বপ্ন। আমি চাই—এই ভারতে স্বাধীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হউক, তাহার সৈন্য, তার নৌবল, তার বিমানপোত, তাহার সমস্তই স্বাধীন হউক। আমি চাই পৃথিবীর স্বাধীন দেশ সমূহে স্বাধীন ভারতের দূত প্রেরিত হউক।
- নৃপেন্দ্রনাথ সিংহ - নেতাজীর জীবনী ও বাণী (১৯৪৫), স্বাধীন ভারত।
প
[সম্পাদনা]- আজ কেন এই হিন্দু মুসলমানের বিবাদ, ব্রাহ্মণ অব্রাহ্মণের রেষারেষি দ্বেষাদ্বেষি—তাই বলছি সময় থাকিতে এখনও ঘর সামলাও। ঘর শক্রতে রাবণ নষ্ট। আমরা স্বার্থত্যাগ করবো না, নিজেদের অন্যায় আবদার অধিকার ছাড়বোনা, কি করে বড় হ’ব, জাতি গড়ে তুলবো? জাপানে যা একদিন সম্ভব হয়েছে, ভারতে কি তা হবে না? অস্পৃশ্যতা পাপ হিন্দু ভারতবর্ষ ব্যতীত কোথাও পাবেন না।
- ঘর সামলাও, আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী, লেখক- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক-চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪৫
- ধর্ম্মের পীঠস্থান, মানব-চিন্তার লীলাভূমি—সেই ভারতবর্ষে আমি এখন যাইতেছি; আমার ভয় হইতেছে পাছে সেখানে গিয়া কিছুই না পাই—পাছে সেখানে গিয়া আবার প্রতারিত হই। আত্মবিনোদনের জন্য, কিংবা শুধু একটা মনের খেয়ালে এবার আমি সেখানে যাইতেছি না; আর্য্য-জ্ঞানের রত্নভাণ্ডার যাহাদের হস্তে, তাহাদের নিকট এবার চিত্তশান্তি যাজ্ঞা করিতে যাইতেছি।
- পিয়ের লোতি - ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ, অনুবাদ: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ১৯২৭ (পৃ. ১-৫)।
ব
[সম্পাদনা]- এটাই সেই প্রাচীন দেশ, যেখানে জ্ঞান প্রথম বাসা বেঁধেছিল অন্য কোনো দেশে যাওয়ার আগে। এটাই সেই ভারত, যার আধ্যাত্মিক প্রবাহ যেন বস্তুজগতে প্রকাশ পেয়েছে সাগরের মতো বয়ে চলা নদনদীতে। যেখানে চিরন্তন হিমালয় স্তরের পর স্তর তুলে বরফঢাকা শৃঙ্গে যেন স্বর্গের গভীর রহস্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
এটাই সেই ভারত, যার মাটিতে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঋষিদের পদচিহ্ন পড়েছে। এখানেই মানুষ এবং তার অন্তর্জগত নিয়ে প্রথম অনুসন্ধান শুরু হয়। এখানেই প্রথম আত্মার অমরত্ব, এক সর্বক্ষমতাধর ঈশ্বরের অস্তিত্ব, প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে বিরাজমান ঈশ্বরের ধারণা জন্ম নিয়েছিল। আর এখানেই ধর্ম ও দর্শনের সর্বোচ্চ আদর্শ চূড়ান্ত উৎকর্ষে পৌঁছেছিল।- স্বামী বিবেকানন্দ, লেকচারস ফ্রম কলম্বো টু আলমোড়া, দ্য ফিউচার অব ইন্ডিয়া (মূল থেকে অনূদিত)
- হে বীর, সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল-আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই, বল, মূখ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই; তুমিও কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত হইয়া, সদর্পে ডাকিয়া বল—ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বাৰ্দ্ধক্যের বারাণসী; বল ভাই, ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বৰ্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ, আর বল দিন রাত, "হে গৌরীনাথ, হে জগদম্বে, আমায় মনুষ্যত্ব দাও, মা, আমার দুৰ্বলতা কাপুরুষতা দূর কর।”
- স্বামী বিবেকানন্দ, বর্ত্তমান ভারত- স্বামী বিবেকানন্দ, প্রকাশক- উদ্বোধন কার্য্যালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩১২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৫-৬৬
র
[সম্পাদনা]- হে মোর চিত্ত, পুণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।
হেথায় দাঁড়ায়ে দু বাহু বাড়ায়ে নমি নরদেবতারে,
উদার ছন্দে পরমানন্দে বন্দন করি তাঁরে।
ধ্যানগম্ভীর এই-যে ভূধর, নদী-জপমালা-ধৃত প্রান্তর,
হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - ভারততীর্থ, সঞ্চয়িতা - ১৯৫৫ (পৃ. ৫০৬-৫০৮)
- একদা এ ভারতের কোন্ বনতলে
কে তুমি মহান্ প্রাণ, কী আনন্দবলে
উচ্চারি উঠিলে উচ্চে, ‘শোনো বিশ্বজন,
শোনো অমৃতের পুত্র যত দেবগণ
দিব্যধামবাসী, আমি জেনেছি তাঁহারে,
মহান্ত পুরুষ যিনি আঁধারের পারে
জ্যোতির্ময়। তাঁরে জেনে, তাঁর পানে চাহি
মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পারো, অন্য পথ নাহি।’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - একদা এ ভারতের কোন্ বনতলে, নৈবেদ্য, ১৯৫১ (পৃ. ৭১)
- আমাদের দেশে কল্যাণশক্তি সমাজের মধ্যে। তাহা ধর্ম্মরূপে আমাদের সমাজের সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইয়া আছে। সেইজন্যই এতকাল ধর্ম্মকে, সমাজকে বাঁচানোই ভারতবর্ষ একমাত্র আত্মরক্ষার উপায় বলিয়া জানিরা আসিয়াছে। রাজত্বের দিকে তাকায় নাই, সমাজের দিকেই দৃষ্টি রাথিয়াছে। এইজন্য সমাজের স্বাধীনতাই যথার্থভাবে ভীরতবর্ষের স্বাধীনতা। কারণ, মঙ্গল করিবার স্বাধীনতাই স্বাধীনতা, ধর্ম্মরক্ষার স্বাধীনতাই স্বাধীনতা।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - আত্মশক্তি (১৯০৫)।
- বিদেশের সংঘাতে ভারতবর্ষের এই প্রাচীন স্তব্ধতা ক্ষুব্ধ হইয়াছে। তাহাতে যে আমাদের বলবৃদ্ধি হইতেছে, এ কথা আমি মনে করি না। ইহাতে আমাদের শক্তিক্ষয় হইতেছে। ইহাতে প্রতিদিন আমাদের নিষ্ঠা বিচলিত, আমাদের চরিত্র ভগ্নবিকীর্ণ, আমাদের চিত্ত বিক্ষিপ্ত এবং আমাদের চেষ্টা ব্যর্থ হইতেছে। পূর্বে ভারতবর্ষের কার্যপ্রণালী অতি সহজ সরল, অতি প্রশান্ত, অথচ অত্যন্ত দৃঢ় ছিল।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - ভারতবর্ষ, নববর্ষ, ১৯০৫ (পৃ. ১-১৬)।
স
[সম্পাদনা]- বাঙ্গালীকে এই কথা সর্ব্বদা মনে রাখতে হবে যে, ভারতবর্ষে—শুধু ভারতবর্ষে কেন—পৃথিবীতে তার একটা স্থান আছে—এবং সেই স্থানের উপযোগী কর্ত্তব্যও তার সম্মুখে পড়ে রয়েছে। বাঙ্গালীকে স্বাধীনতা অর্জ্জন করতে হবে, আর স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে নূতন ভারত গড়ে তুলতে হবে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, শিল্প কলা, শৌর্য্য-বীর্য্য, ক্রীড়ানৈপুণ্য, দয়া-দাক্ষিণ্য—এই সবের ভিতর দিয়ে বাঙ্গালীকে নূতন ভারত সৃষ্টি করতে হবে।
- সুভাষচন্দ্র বসু - তরুণের স্বপ্ন, দেশের ডাক, ১৯৩৮ (পৃ. ৬-১০)।
- আমি আমাদের সংগ্রামের ফলাফল সম্পর্কে খুব আশাবাদী, ভারতের অভ্যন্তরে একটি বিশাল আন্দোলন চলছে এবং আমাদের লক্ষ লক্ষ দেশবাসী স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সর্বাধিক দুর্ভোগ ও আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত। আমাদের আজ একটাই আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত-মৃত্যুর আকাঙ্খা, যাতে ভারত বাঁচতে পারে, যাতে শহীদের রক্তে স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত হয়।
আজ আমি তোমাদের কাছে সর্বোপরি একটি জিনিস চাই; আমি তোমাদের কাছে রক্তের দাবি করছি একমাত্র রক্তই রক্তের প্রতিশোধ নিতে পারে। রক্তই স্বাধীনতার মূল্য দিতে পারে। আমাকে রক্ত দাও এবং আমি তোমাদের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি!- ১৯৪৪ সালের ৪ জুলাই, বার্মায় ভারতীয়দের এক জনসভায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু - জাতীয় কংগ্রেস ওয়েবসাইট।
- ধর্ম ও দর্শনশাস্ত্রের প্রভাবে সমগ্রদেশে একটি নূতন জাগরণ আসিয়াছিল। গুপ্তশিল্পীরা ভারতীয় নানাদেশীয় লোকের নানাজাতীয় বেশভূষা সম্বন্ধেই পরিচিত ছিলেন এবং মানুষের দেহ সম্বন্ধেও তাঁহাদের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। সেই সঙ্গে ভারতবর্ষীয় নরনারীর শরীরের মধ্যে যে একটা স্বাভাবিক কোমলতা আছে সে বিষয়েও তাঁহাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইয়াছিল।
- সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা (১৯৪২)।
- ভারতবর্ষ অতি বিরাট দেশ ও ইহার বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্নজাতীয় লোকেরা অতি প্রাচীন কাল হইতে শিল্পসেবা করিয়া আসিতেছে এবং যুগে যুগে মনুষ্যের চিত্তবৃত্তির পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গেই শিল্পপদ্ধতিরও নানা পরিবর্ত্তন ঘটিয়াছে এবং ভারতবর্ষের প্রত্যেক বিভাগেই সেই সেই দেশের নানাবিধ শিল্পসংস্কার চলিয়া আসিয়াছে।
- সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা (১৯৪২)।
- স্বাধীন হবে ভারতবর্ষ থাকবে না বন্ধন,
আমরা সবাই স্বরাজ-যজ্ঞে হব রে ইন্ধন?
বুকের রক্ত দিব ঢালি স্বাধীনতারে,
রক্ত পণে মুক্তি দেব ভারত-মাতারে।- সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্ত সমগ্র- সুকান্ত ভট্টাচার্য, প্রকাশক- সারস্বত লাইব্রেরী, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৮৮
- ঐ দেখা যায় আমাদের মাতৃভূমি—আমাদের সাধনার মহাতীর্থ— আমাদের ভারতবর্ষ—আমাদের কামনার ধন, আমাদের বাসনার স্বর্গ, আমাদের আরাধনার নন্দন-কানন, আমাদের জন্মভূমি ভারতবর্ষ। একদিন আমরা ঐখান হইতে এই সুদূরে আসিয়াছিলাম। আবার আজ আমরা সেইখানে ফিরিয়া যাইব। ঐ শোন ভারতবর্ষের আহ্বান— ঐ শোন জন্মভূমির আহ্বান। কি মধুর, কি স্নেহ-পবিত্র সে আহ্বান। ঐ শোন। চলো।
- সুভাষচন্দ্র বসু, বাঙ্গালীর প্রতিভা ও সুভাষচন্দ্র - মহেন্দ্রনাথ গুহ, প্রকাশসাল- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৫
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় ভারত সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিমিডিয়া কমন্সে ভারত সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।

উইকিভ্রমণে ভারত সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে।