কনক চাঁপা চাকমা

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

কনক চাঁপা চাকমা (জন্ম ৬ মে, ১৯৬৩) একজন বাংলাদেশি চাকমা শিল্পী যিনি তাঁর কর্মজীবনের সাফল্যের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন এবং তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংখ্যালঘুদের জীবনকে চিত্রকর্মের জন্য বিখ্যাত। চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২৩ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করে।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • আদিবাসী নারীরা সব কাজই করছে কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা থাকে না। তখন আমি মনে করলাম তাদের একটা মঞ্চ দেওয়া উচিৎ। একটা প্রতিকৃতি ছবির মাধ্যমেও বলা যায় নারীর না বলা কথা। এ কারণেই আমার আঁকায় নারীর প্রাধান্য। এখানে সৌন্দর্যের জন্য নয়, তাদের যে সংগ্রাম, বিষন্নতা আছে এবং অনেক বেশি বঞ্চিত সমাজ, দেশ থেকে- এই বিষয়গুলো তুলে ধরতেই নারীর প্রতিকৃতি ব্যবহার।
  • অনেক শিল্পী তাঁর দেখা বিভিন্ন বিষয় সরাসরি আঁকে, মারামারি, রক্ত, সহিংসতা নানান বিষয়; কিন্তু আমি সরাসরি কখনো আঁকি না। আমার চিত্রে সবসময় তা প্রতীকীভাবে এসেছে। আমি লাল রং ব্যবহার করেছি প্রতিবাদ হিসেবে, কালো রং ব্যবহার করেছি একদম দুঃখ যন্ত্রণায় ভরা জীবন বোঝাতে। সেখানে আমি দেখিয়েছি মানুষ, বেদনাহত মুখ, কালোর ভিতর থেকে এগিয়ে যাচ্ছে আলোর দিকে।
  • সততার মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি এবং সেটা আমার কাজের ক্ষেত্রে ছাপ ফেলে। আমার কাজের সঙ্গে আমি অনেক সৎ, কারণ মনে করি সততা না থাকলে জীবন কখনো সুন্দর হয় না। স্বস্তি আসে না, সুন্দরভাবে জীবন পরিকল্পনা করা যায় না, আর ছবি আঁকার ক্ষেত্রেও যদি সৎ প্রচেষ্টা না থাকে সেটা কিন্তু একটা ভালো ছবি হয়ে ধরা দেবে না। সেই ছবি স্নিগ্ধ হবে না, ভালো হবে না, তখন নিজের কাছে নিজের প্রতারণা বলে মনে হবে।
  • আমি আমার শিল্পকর্ম দিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার সবাইকে বোঝাতে পারি, দেখুন, আদিবাসীদের জীবন হুমকির মুখে। কারণ তারা মূলধারার সঙ্গে টিকতে পারছে না। তাদের যে অধিকার পাওয়ার কথা, তারা তা পাচ্ছে না। নিজেদের জায়গা থেকে সরতে সরতে তারা অনেক গহিনে চলে যাচ্ছে। আদিবাসীদের সাথে দেশের মূলধারার সংঘাত কারো কাম্য নয়।
  • অঙ্কন কিন্তু পোস্টার নয় যে হত্যা, লুণ্ঠনের মতো বিষয় সরাসরি তুলে ধরব। শিল্পকলার মাধ্যমে আমি আমার নীরব প্রতিবাদটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। দর্শক আমার ছবি ও রঙের ব্যবহার দেখলে বুঝতে পারবে কোথাও কোথাও বেদনা লুকিয়ে আছে। মোটকথা, নন্দনতাত্ত্বিকভাবে আমি আমার ভাবনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করি।
  • চিত্রকর্মে নারীর জীবনের নানান দিক বিভিন্ন রঙে ফুটিয়ে তুলে নারীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। নারীর বঞ্চনা, তাদের কষ্ট, সমাজে উপেক্ষিত হওয়া—সব মিলিয়ে তাদের লড়াইটা তুলে ধরার চেষ্টা করি সব সময়। তাদের শ্রম, মেধা কখনোই সমাজ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। একটি সংসারের অর্ধেক ভার যখন নারীর কাঁধে, তখন তাদের সঠিক মূল্যায়ন জরুরি। নারীর দৈহিক আর বাহ্যিক ছন্দের বাইরেও তাদের মন, ভালোবাসা, বিকশিত হওয়ার ইচ্ছাশক্তি আছে তা আমার চিত্রকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরি।
  • আদিবাসীদের জীবনের সঙ্গে প্রকৃতি ও রোদ্দুরের সরাসরি সখ্য রয়েছে। সেই রোদের খেলা একেক সময় একেক রকমভাবে দেখা দেয়। আলো ও ছায়ার বৈচিত্র্যময়তা নানারূপে আমার ছবিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে।
  • পাহাড় ও বনভূমি ডুবিয়ে যখন কর্ণফুলী লেক, যৌবনের প্রাচুর্যে মগ্ন তখন অনেক মানুষের জল, মনোবেদনা সে কি শুনেছিল? কর্ণফুলী, তুমি এক হাতে অনেক আলোর জন্ম দিলে, আরেক হাতে অনেক জীবনের আশার আলো কেড়ে নিলে, সেটা কি তুমি জানো? আমি সেই ছবি অাঁকি যে-জীবন আমি হারিয়েছি। আমি সেই ছবি অাঁকি যে-জীবন আমি ফিরে পেতে চাই।
  • সমতল এবং পাহাড়ে, মহিলারা একইভাবে কোণঠাসা, যদিও তারা প্রায়শই তাদের পরিবারে পুরুষদের চেয়ে বেশি অবদান রাখে। তাই আমি আমার কাজে নারীদের কেন্দ্রীভূত করতে পছন্দ করি।
  • আদিবাসী পোশাকের উজ্জ্বল রঙ, পাহাড়, বন, 'ঘুম' চাষ, আদিম নীল জলপ্রপাত, নাচ এবং সঙ্গীত; অন্য কথায়, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের জীবনকে সংজ্ঞায়িত করে এমন কিছু আমার কাজের জন্য প্রধান অনুপ্রেরণা।

কনক চাঁপা চাকমা সম্পর্কে উক্তি[সম্পাদনা]

  • কনক চাঁপা চিত্রকলার মৌলিক দিক কম্পোজিশনকে সব ছবিতে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ফলে তাঁর ক্যানভাস পূর্ণতা পায়, জ্যামিতিক আকৃতির অদৃশ্য বন্ধনে তৈরি হয় শক্তি। তাঁর বিষয়ের প্রতি মনোযোগের সঙ্গে ক্যানভাসে এক কেন্দ্রে গল্পের চরিত্রগুলো হাজির করেন। কেন্দ্রবিন্দুতে রঙের প্রয়োগে ভিন্নতা তৈরি দর্শকদের স্বস্তি দেয়। আদিবাসী জীবনযাত্রার ছন্দ ছবির মাঝে কল্পনার পাহাড়ি প্রকৃতির সঙ্গে মিলে যায়।
  • আলোছায়ার প্রতি এক বিশেষ পক্ষপাত কনকের কাজকে বিশেষত্ব দিয়েছে। তাঁর ঐতিহ্যলগ্ন প্রকৃতিপ্রেমের মতোই আলোছায়ার প্রেমও এতে স্পষ্ট হয়ে উঠে। তাঁর আঁকা মুখাবয়বে মানুষের আনন্দ-বেদনা দেখা দেওয়ার সঙ্গে পাহাড়ি মানবীর মাথায়-গলায় শোভা পাওয়া বিচিত্র অলংকারের গড়ন দেখা যায়। কনকের ছবির মানুষের পোশাক আর অলংকারে ঐতিহ্যগত আচরণ প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে শিল্পী কল্পনাকে প্রধান করেছেন।
  • কনক চাঁপা বাংলাদেশের জাতীয় সংখ্যালঘুদের জীবনকে চিত্রকর্মের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। নারী জীবনের উপর মনোযোগ নিবদ্ধ করে তাদের দৈনন্দিন জীবন বাস্তবসম্মত চিত্র আঁকেন প্রতিনিয়ত। ঝুড়ি বহন কিংবা পুকুর পাড়ে স্বপ্নে বিভোরতা-একই সাথে প্রকাশ করে নারীর শক্তিমত্তা আর লাবণ্য। তাঁর চিত্রকল্পে পাহাড়িদের দৈনন্দিন জীবনচিত্র ফুটিয়ে তুলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তিনি।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]