কাফির
কাফির শব্দটি এসেছে كَفَرَ kāfir মূল ك-ف-ر থেকে। একটি প্রাক-ইসলামিক শব্দ যার উদাহরণ অর্থে কৃষকরা মাটিতে বীজ পুঁতছে বা মাটি দিয়ে ঢেকে রাখছে ভাবে বর্ণনা করেছে।কুরআনে এর একটি প্রয়োগের অর্থও কৃষকের মতো। যেহেতু কৃষকরা বীজ রোপণের সময় মাটি দিয়ে ঢেকে রাখে,
তাই কাফির (kāfir) শব্দটি এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায় যে লুকিয়ে রাখে বা ঢেকে রাখে। আদর্শগতভাবে, এটি এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায় যে সত্যকে আড়াল করে বা ঢেকে রাখে।প্রাক-ইসলামিক ধর্মীয় বা পৌরাণিক ব্যবহারে কবিরা রাতের অন্ধকারকে কাফির হিসেবে ব্যক্ত করেছেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত ও হবে না।
- তারা বলে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা ইব্রাহীমের ধর্মে আছি যাতে বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
- আর স্মরণ কর যুন-নূন এর কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম
- তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা, আপনি আমাদের পাপ মোচনের জন্য ক্ষমা চান। নিশ্চয় আমরা ছিলাম অপরাধী’।
- ন আল্লাহ তোমার পূর্বের ও পরের পাপ ক্ষমা করেন, তোমার উপর তাঁর নিআমত পূর্ণ করেন আর তোমাকে সরল পথের হিদায়াত দেন।
- হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দন্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
হাদিস
[সম্পাদনা]আমরা দেখেছি যে, কুরআন কারীমে মহান আল্লাহর বিধান অনুসারে ফয়সালা না করাকে কুফর বলা হয়েছে। পাশাপাশি আল্লাহর বিধান বিরোধিতায় লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে মুমিন বলা হয়েছে। হাদীস শরীফে বিভিন্ন কর্মকে কুফর বলা হলেও এরূপ কর্মে লিপ্ত ঈমানের দাবিদারদের মুসলিম বলেই গণ্য করা হয়েছে।
- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: ‘‘একব্যক্তি জীবনভর সীমালঙ্ঘন ও পাপে লিপ্ত থাকে। যখন তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয় তখন সে তার পুত্রদেরকে ওসিয়ত করে বলে: আমার মৃত্যু হলে তোমরা আমাকে আগুনে পুড়াবে। এরপর আমাকে বিচুর্ণ করবে। এরপর ঝড়ের মধ্যে আমাকে (আমার দেহের বিচুর্ণিত ছাই) সমূদ্রের মধ্যে ছাড়িয়ে দেবে। কারণ, আল্লাহর কসম, যদি আমার প্রতিপালক আমাকে ধরতে সক্ষম হন তবে আমাকে এমন শাস্তি দিবেন যে শাস্তি তিনি অন্য কাউকে দেন নি। তার সন্তানগণ তার ওসিয়ত অনুসারে কর্ম করে। তখন আল্লাহ যমিনকে নির্দেশ দেন যে যা গ্রহণ করেছে তা ফেরত দিতে। তৎক্ষণাৎ লোকটি পুনর্জীবিত হয়ে তার সামনে দন্ডায়মান হয়ে যায়। তখন তিনি লোকটিকে বলেন: তুমি এরূপ করলে কেন? লোকটি বলে: হে আমার প্রতিপালক: আপনার ভয়ে। তখন তিনি তাকে এজন্য ক্ষমা করে দেন।
- [ বুখারী, আস-সহীহ ৩/১২৮৩ (কিতাবুল আম্বিয়া, বাবু আম হাসিবতা...); মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২১১০ (কিতাবুত তাওবা, বাবুন ফী সাআতি রাহমাতিল্লাহ]
- মক্কা বিজয়ের পূর্বে হাতিব ইবন আবী বালতা‘আ (রা) যুদ্ধের গোপন বিষয় ফাঁস করে মক্কার কাফিরদের নিকট একটি পত্র লিখেন। পত্রটি উদ্ধার করার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাতিব (রা)-কে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে, মুনাফিকী বা কুফরীর কারণে তিনি এরূপ করেন নি, বরং নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে এরূপ করেছেন। হাতিবের কর্ম বাহ্যত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (ﷺ) সাথে খিয়ানত ও কুফর ছিল। এজন্য উমার (রা) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি অনুমতি দিন, আমি এ মুনাফিককে হত্যা করি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ বিষয়ে হাতিবের বক্তব্যকেই চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করেছেন।
- [ বুখারী, আস-সহীহ ৩/১০৯৫ (কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার, বাবুল জাসূস); মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৯৪১ (কিতাবু ফাদাইলিস সাহাবা, বাবুন মিন ফাদাইলি আহলি বাদর ওয়া কিস্সাতি হাতিব]
- রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর তাকওয়া বা ইনসাফের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা সুনিশ্চিত কুফর। এজন্য মাজলিসে উপস্থিত খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রা) লোকটিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের অনুমতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: ‘‘না। হয়তবা লোকটি সালাত আদায় করে।’’ খালিদ (রা) বলেন: ‘‘কত মুসল্লীই তো আছে যে মুখে যা বলে তার অন্তরে তা নেই।’’ তখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘‘আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয় নি যে, আমি মানুষের অন্তর খুঁজে দেখব বা তাদের পেট ফেড়ে দেখব।
- [বুখারী, আস-সহীহ ৩/১২১৯, ১৩২১, ৪/১৫৮১, ১৭১৪, ৫/২২৮১, ৬/২৫৪০, ২৭০২; মুসলিম, আস-সহীহ ২/৭৪১-৭৪৪।]