কালিদাস রায়
অবয়ব
কালিদাস রায় (২২ জুন ১৮৮৯ — ২৫ অক্টোবর ১৯৭৫) ছিলেন রবীন্দ্রযুগের বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সমালোচক এবং পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা। তিনি ‘রসচক্র’ নামে একটি সাহিত্য সংসদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং রবীন্দ্র-ভাবধারায় উজ্জীবিত হয়ে কাব্যচর্চা শুরু করেন। তাঁর মোট ১৯টি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। তাঁর রচিত কাব্যগুলির মধ্যে কিশলয়, পর্ণপুট, ক্ষুদকুঁড়া ও পূর্ণাহুতি বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। গ্রামবাংলার রূপকল্প অঙ্কনের প্রতি আগ্রহ ও তত্ত্বপ্রিয়তা ছিল তাঁর কবিতাগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি কালিদাসের শকুন্তলা, কুমারসম্ভব এবং মেঘদূতের অনুবাদ করেন। প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়, প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্য, পদাবলী সাহিত্য, শরৎ-সাহিত্য ও সাহিত্য প্রসঙ্গ তাঁর সমালোচনা গ্রন্থ। তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- এ জীবন ভেঙে গ’ড়ে শ্যামল-সরস ক’রে
ছাত্রধারা ব’য়ে চলে যায়,
ফেনিলতা উচ্ছলতা হয়ে যায় তুচ্ছ কথা,
উত্তালতা সকলি মিলায়
স্বচ্ছতায় শুধু হেরি আমার জীবন ঘেরি’
ভাসে শুধু ম্লান মুখগুলি;
ভুলে যাই হট্টগোল অট্টহাসি-কলরোল,
ম্লান মুখ কখনো না ভুলি।- ছাত্রধারা, কবিশেখর কালিদাস রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলিকাতা, প্রকাশকাল- ১৫ই আগস্ট, ১৯৬০, পৃষ্ঠা ১০
- এই জেলার পাটওয়ারী নামক স্থান গোপীচন্দ্রের পাট বলিয়া খ্যাত। তাঁহার দুই পত্নী অদিনা ও পদিনার সত্য জীবনের স্থতি স্বরূপ উদিনা পুদিনা নামক দুটী বিল এখানে বর্ত্তমান। রাণী ময়নামতীর স্থান নির্দ্দেশ সম্বন্ধে ঐতিহাসিকেরা নানা প্রকার মত প্রচার করিয়াছেন, কিন্তু তাঁহারা এই দেশের প্রবাদ, প্রসঙ্গ ও প্রদর্শিত স্মৃতিস্থলগুলির বিষয় আলোচনা করিলে তাঁহার প্রকৃত স্থান নির্দ্দেশ করিতে পারিবেন।
- রংপুর সম্বন্ধে বলেন, ঢাকা রিভিউ ও সম্মিলন, বৈশাখ ১৩২৪ বঙ্গাব্দ
- ভোগের মোহে মিথ্যা মায়াজালে
পাবেনাক তৃপ্তি কোনো কালে,
চাইতে হ’বে ধ্রুব লোকের পানে
চিরকাতর সজল রাঙা চোখে।- ধ্রুব, পর্ণপুট - কালিদাস রায়, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯
- ঘণ্টা বলে- হাতের বাকি নে সেরে।
মরীচিকার পিছন ধাওয়া দে ছেড়ে।
ঘণ্টা বলে- সকল বাঁধন করু টিলে,
গানের চরণ থাকুক পড়ে গরমিলে।- গির্জার ঘন্টা, কবিশেখর কালিদাস রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলিকাতা, প্রকাশকাল- ১৫ই আগস্ট, ১৯৬০, পৃষ্ঠা ৭২
- দুঃখ যদি দিতে হয় দাও তবে দয়াময়,
নিয়ে গিয়ে এমন ভুবনে—
যেখানে আনন্দ-গান, উৎসবের কলতান
সারাদিন না পশে শ্রবণে!- আকিঞ্চন, কাব্য-মঞ্জুষা, একবিংশ সংস্করণ, প্রকাশক- ওরিয়েন্ট সিটি বুক কোম্পানী প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশকাল- পৌষ ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১১৮
- সাহিত্যে জাতীয় গৌরবের কথা উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করিলেই এবং বিষয়বস্তু ও উপকরণ স্বদেশীয় হইলেই কোন সাহিত্য জাতীয় সাহিত্য হইয়া উঠে না। জাতীয় জীবনের সহিত তাহার যোগ থাকা চাই—জাতির অন্তর্জীবনের নিগুঢ় সুখদুঃখ তাহাতে বিম্বিত হওয়া চাই—জাতির প্রাণের গভীর বাণী তাহাতে ধ্বনিত হওয়া চাই।
- ঊনবিংশ শতাব্দীর সাহিত্য, বঙ্গ-মাহিত্য-পরিচয়- কালিদাস রায়, তৃতীয় খণ্ড, প্রকাশক- দি বুক হাউস, কলিকাতা, প্রথম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৪৭
- জোড়হাতে নেয়ে কয়, “মরিতে করি না ভয়,
মোক্ষ, মুক্তি কাজ নাই তা’তে।
রাজ্যধন নেব কেন? আমার সন্তান যেন
চিরদিন থাকে দুধে-ভাতে।”- বাঙ্গালীর সাধ, কাব্য-মঞ্জুষা, একবিংশ সংস্করণ, প্রকাশক- ওরিয়েন্ট সিটি বুক কোম্পানী প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশকাল- পৌষ ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১২০
কালিদাস রায়কে নিয়ে উক্তি
[সম্পাদনা]- তোমার এই কাব্যগুলি পড়িলে বাংলার ছায়া-শীতল নিভৃত আঙিনায় তুলসীমঞ্চ ও মাধবীকুঞ্জ মনে পড়ে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবিশেখর কালিদাস রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা বইয়ের ভূমিকায়, প্রকাশক- ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলিকাতা, প্রকাশকাল- ১৫ই আগস্ট, ১৯৬০, পৃষ্ঠা ৷৷৵৹
- কবিশেখর পঞ্চাশ বছরের উপর কবিতা লিখছেন। তাঁর অনেক কবিতা চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর পাঠক-সমাজের সম্মূথে আছে এবং আদরণীয় হয়েই আছে। বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনের যুগে এ কম সৌভাগ্যের বিষয় নয়। ধরে নিলে অন্যায় হবে না যে এই সব কবিতা বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করেছে।
- প্রমথনাথ বিশী, কবিশেখর কালিদাস রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা বইয়ের ভূমিকায়, প্রকাশক- ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলিকাতা, প্রকাশকাল- ১৫ই আগস্ট, ১৯৬০
- সম্প্রতি কবিশেখর কালিদাস রায় বর্তমান অবিনয় অসংযম আর অসামাজিকতা সম্বন্ধে একটি সার্থক প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রবন্ধটি প্রধানত ছাত্র আর অল্পবয়স্কের উদ্দেশ্যে লেখা, কিন্তু তাঁর মৃদু বেত্রাঘাত আবালবৃদ্ধবনিতা আমাদের সকলেরই পিঠে পড়েছে।
- রাজশেখর বসু, সাহিত্যিকের ব্রত, বিচিন্তা - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৫-৬৬
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় কালিদাস রায় সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।