খান আতাউর রহমান (১১ ডিসেম্বর ১৯২৮ - ১ ডিসেম্বর ১৯৯৭) খান আতা নামে বহুল পরিচিত ছিলেন। তিনি একাধারে একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, এবং প্রযোজক। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র জাগো হুয়া সাভেরা। নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা (১৯৬৭) এবং জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০) চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। সুজন সখী (১৯৭৫) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরে এখনো অনেক রাত (১৯৯৭) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।
দুনিয়া বড় এলোমেলো
দুনিয়া ঘোরে কাটার চাকায়,
সাহেব যায় গাড়ি হাঁকায়,
সবাই তাকে সালাম জানায়,
টাকাই যদি সবার বড়,
ধর্ম কর্ম কেন করো?
আসল কথা হলো,
কাজের বেলায় তুমি ভালো,
কাজ ফুরোলেই তুমি কালো,
দুনিয়া বড় এলোমেলো,
লম্বা বেঁটে সাদা কালো,
সবাই বলে আমি ভালো,
তুমি ভালো আমি ভালো,
মন্দ তবে কাকে বলো?
এখন রাত্রি, কুয়াশার কোলে পৃথিবী ঘুমায়
জীবনে বেঁধেছে মিলনের সুর,
পেখম মেলেছে মনের ময়ূর,
এখন রাতের হয়েছে দুপুর,
এই তো সময়,
এই তো সময় ভালোবাসবার,
ভালোবাসি – সেই কথাটি বলার,
এই তো সময়,
পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে
দয়া নাই তোমার মায়া নাই,
তবু জনম দুখি আমি,
তোমায় আপন জানি,
পথে পথে দিলাম ছড়াইয়ারে,
সেই দুঃখে চোখেরও পানি,
ও আমার চক্ষু নাই,
মন যদি ভেঙ্গে যায় যাক
কি আছে না হয় আমি কেঁদেই কাটাবো এ জীবন,
না হয় ছলনা দিয়ে বুঝিয়ে রাখবো এ মন,
তোমার জীবন তৃষা পেয়েছি পথের দিশা,
এগিয়ে চলেছো সেই পথে,
সেই তো অনেক বড় সান্ত্বনা,
মন যদি ভেঙ্গে যায়, যাক, যাক, কিছু বলবো না,
এক নদী রক্ত পেরিয়ে
এক নদী রক্ত পেরিয়ে,
বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা,
তোমাদের এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না,
না না না শোধ হবে না,
হয়তোবা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না,
বড় বড় লোকেদের ভীড়ে,
জ্ঞানী আর গুণীদের আসরে,
তোমাদের কথা কেউ কবে না,
থাক ওরা পড়ে থাক ইতিহাস নিয়ে,
জীবনের দীনতা হীনতা নিয়ে,
দিন যায় কথা থাকে
মন পাখি তুই থাকরে খাঁচায় বন্দি,
আমি তো করেছি দুঃখের সঙ্গে সন্ধি,
কি আছে পাওনা, কার কাছে দেনা,
যাক সে হিসাব চুকে,
দিন যায় কথা থাকে,
সে যে কথা দিয়ে রাখলো না,
ভুলে যাবার আগে ভাবলো না,
হায়রে আমার মন মাতানো দেশ
যখন তোর অই আকাশ নীলে,
পাল তুলে যায় সাত সাগরের পসরা,
নদীর বুকে হাতছানি দেয়,
লক্ষ ঢেউয়ে মানিক জ্বালা ইশারা,
রূপ দেখে তোর কেন আমার,
নয়ন ভরে না,
তোরে এত ভালোবাসি তবু,
পরান ভরে না,
হায়রে আমার মন মাতানো দেশ,
পাখি রে তুই দূরে থাকলে
মনে মনে তোমায় ডাকি সারা বেলা,
তা কি জানো না?
পাখি রে, তুই দূরে থাকলে,
কিছুই আমার ভালো লাগে না,
যদি কোনোদিন আমার পাখি,
ফেলে আমায় উড়ে চলে যায়
তবে এক একা রবো নিরালায়,
এমন পিতাও তাহলে হয়? এমন উকিল নামক বুদ্ধিজীবীও তাহলে হয়, সেই ধাঙ্গর ছেলেদের মতো বেপরোয়া কিশোরও তাহলে হয়, সর্বজন নিন্দিত পুলিশ সমাজে সেই হৃদয়বান দারোগাটিও হয়?