গোবিন্দ চন্দ্র দেব
অবয়ব
গোবিন্দ চন্দ্র দেব (১ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৭ - মার্চ ২৬, ১৯৭১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনবিদ্যার একজন অধ্যাপক ছিলেন। বুদ্ধিজীবী-সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার একটি পরিকল্পনার অংশ রূপে পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্ষণজন্মা মনীষী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন উল্লেখযোগ্য দার্শনিক ড.গোবিন্দ চন্দ্র দেবকে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে হত্যা করে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- জীবনে পঞ্চাশের কোঠা বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেছি। যারা আগে থেকে আমাকে জানেন না তাঁদের মধ্যে সহজবুদ্ধি কেউ কেউ আমার বয়স সাতের কোঠায়ও ফেলতে চান। তাঁরা যে বিশেষ ভুল করেন তা মনে হয় না।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ৭ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- যদি বা আমার আয়ু একশ'র কোঠায় পৌঁছয় তবুও জীবনের যে এক বড় সতেজ অংশ আমি পেরিয়ে গেছি একথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ৮ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- আমার জীবন-দর্শন আমার একলার সম্পত্তি নয়। বহুজনের হৃদয়তন্ত্রীতে তার সুর আজ বেজে উঠেছে। এ কথাই প্রকাশ করার চেস্টা করেছি আমার দার্শনিক রচনায়।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ৯ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- জীবন-দর্শন কথার পেছনে আরও একটি গভীর সত্য রয়েছে। যার দিকে এই দর্শন-বিতৃষ্ণার যুগে সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন । সারাজীবন দর্শনের সঙ্গে আন্তরিক যোগ স্থাপনের চেষ্টা করে এই সত্য উপলব্ধি করেছি যে, সার্থক দর্শন মাত্রেই জীবন-দর্শন । দর্শন কথাটি তাই জীবন-দর্শন কথারই একটি প্রতিশব্দ। তথাপি এই অতিভাষণের আজ প্রয়োজন।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ১০ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- দর্শন আজ ভাব বিলাসীদের মগজের এক জোরালো খোরাক— তত্ত্বালোচনার নামে নানা নীরস, দুর্বোধ্য যুক্তির কসরৎ। একেই চলতি কথায় বলে, অন্ধলোকের অন্ধকার ঘরে কালো বেড়াল হাতড়ে বেড়ানো, যদিও সে ঘরে আসলে সাদা কালে। কোনো বেড়ালই নেই ।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ১০ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- বস্তুত, কাণ্ডারীবিহীন নৌকার মতে। দর্শন যখন জীবনের দরিয়ায় ডুবু ডুবু তখন সফল জীবনযাত্রার তাগিদেই প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে তার যোগসূত্র আবিষ্কার করা খুবই প্রয়োজন। তাই বাংলা উক্তি হলেও জীবন-দর্শন কথাটা সার্থক।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ১০ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- একদিকে আধুনিক উগ্র জড়বাদ আর অন্যদিকে আত পুরোনো অধ্যাত্ম- বাদ। প্রথমটি এক নিশ্বাসে অসংকোচে উড়িয়ে দেয় পরকাল আর ইহকালের সুখকেই মানুষের উন্নতির মাপকাঠি মনে করে। দ্বিতীয়টি তার ঠিক উল্টো। তার কাছে ইহকালের মূল্য অতি নগা। আর পরকালই প্রধান। সে এক নিশ্বাসে মানুষকে বলে ইহকালের সব বেচাকেনা বন্ধ রেখে সব সময় পরকালের জন্য তৈরী থাক। অথচ প্রয়োজনের নিক্তিতে এ দুটির ওজনই সমান।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ১২ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- জড়বাদ ও অধ্যাত্মবাদকে আমি পরস্পরবিরোধী মনে করি না। আজকের দিনের বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবেশে সহাবস্থিতির ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ১৯ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- যাঁরা মনে করেন শুধু দেহবাদের ওপর আস্থা রেখে, শুধু দেহসেবার সুষ্ঠু ব্যবস্থার যারা আগামী দিনের সভ্যতাকে ভাস্বর ও মহীয়ান করে তোলা সম্ভব, তাঁরাও আবেগের আতিশয্যে ভুল পথে চলেছেন। মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে, তার স্বায়ী কল্যাণের জন্মেই এই যৌবন জলতরঙ্গে গা ভাসিয়ে না দিয়ে তাকে সংযত ও সুপথে পরিচালিত করা প্রয়োজন।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ১৯-২০ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- ক্রেতা জুটলে পসার ভালোই জমবে। নাহলে দেউলিয়া হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ২০ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
- অভিজ্ঞতার আলোকে এবার আমার জীবন দর্শন যাচাই করে দেখবার পালা। যে সমস্ত মহাপ্রাণ পুরুষদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে শুভপ্রেরণা পেয়েছি, তাঁদেরকে সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাচ্ছি। তাদের জীবন ও বাণী সব সংকীর্ণতার, জাতি-বর্ণ-সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র গণ্ডীর বহু ঊর্ধ্বে - তাঁদের বাণী, জীবন সব দেশের সব মানুষের সম্পত্তি। পৃথিবীর অগণিত সাধারণ মানুষেরই একজন আমি, সে বাণীতে আর দশজনের মত আমারও সমান অধিকার । সবার মতো আমিও তাঁদের জীবনকে, বাণীকে শ্রদ্ধা করি । আর তা থেকেই সফল, সার্থক জীবন-যাত্রার অনুপ্রেরণা পেতে চাই।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী, পৃষ্ঠা ২১ গোবিন্দ চন্দ্র দেব রচনাবলী
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় গোবিন্দ চন্দ্র দেব সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।