চিত্রা দেব

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

চিত্রা দেব (১৯৪৩ - ২০১৭) ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি লেখিকা ও গবেষিকা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার পর তিনি 'আনন্দবাজার পত্রিকা'র গ্রন্থাগারে কর্মরত ছিলেন। চিত্রা দেব লেখা, অনুবাদ এবং সম্পাদনা - এই তিন ক্ষেত্রেই দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল বইয়ের জন্যে পেয়েছেন বাংলা আকাদেমি পুরস্কার। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ এর চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মশতবার্ষিকী পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছেন চিত্রা দেব। বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে নারীর ভূমিকা অনুসন্ধান ছিল তার প্রিয় বিষয়। সাবলীল ও সহজবোধ্য ভাষা এবং ঐতিহাসিক তথ্যের সাবলীল ব্যবহার তার লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চিত্রা দেব বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ঐতিহাসিক উপন্যাস ও গবেষণামূলক লেখার জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে দীর্ঘস্থায়ী খ্যাতি অর্জন করেছেন।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • প্রাচীন ভারতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সাজসজ্জা ভালবাসতেন। ভারতীয় নারীর অন্তরে ছিল আরো একটি গোপন আকাঙ্ক্ষা। সে শুধু রূপসীরূপে অপরের মনে উদ্দীপনা সঞ্চার করতে চায়নি, চেয়েছে মধুররূপে বিশেষ একজনের মনের কোণে শ্রদ্ধায় ভালবাসায় অনুরাগে আপ্লুত হয়ে একটি স্থান করে নিতে। বহ্নিশিখা হয়ে জ্বলে ওঠার চেয়েও ঘরের কোণে মাটির প্রদীপ হয়ে স্নিগ্ধ আলো দিয়ে চোখ জুড়োবার সাধ তার কম নয়। তাই নিজেকে অত্যন্ত উগ্র রূপসজ্জায় শুধুমাত্র যৌন আবেদনময়ী করে তোলায় তার অনীহা, বরং লজ্জা তার অঙ্গে সঞ্চার করেছে অতিরিক্ত লাবণ্য।
    • আবরণে আভরণে ভারতীয় নারী, কলকাতা, রণধীর পাল, ১৯৬১।
  • আমাদের মনে যে শালীনতার প্রশ্ন ওঠে সেটি সবসময়ই সমাজভাবনা থেকে উদ্ভূত। সমাজতত্ত্ববিদ বেলা দত্তগুপ্ত একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমরা ইউরোপের মেয়েদের আবক্ষ-উন্মুক্ত পোশাক পরতে দেখি, যার নাম দেকলেতে। ইউরোপের মেয়েরা এ পোশাকে একটুও লজ্জিত নন। তাঁদের লজ্জা পায়ের উন্মোচনে। এদিকে চীনা মেয়েদের উচু কলারওয়ালা এবং বক্ষ আবৃত কিন্তু বাঁ পায়ের উরু পর্যন্ত একটি দিক খোলা পোশাক গ্রাহ্য ছিল। তাহলে দেখা যাচ্ছে, চীনা মেয়েদের বুক থেকে গলা পর্যন্তই সবচেয়ে সঙ্কোচের কারণ। তাহলেই দেখি যে, দুটি উন্নত মহাদেশের মেয়েদের পোশাক ও তাদের শোভনীয়তা সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গি কত বিপরীত।” এভাবেই আমাদের মনে রাখতে হবে প্রাচীন ভারতীয় যুগের রীতিনীতির কথা। আজ যদি দিদারগঞ্জের যক্ষিণীকে দেখে আমরা তাকে নির্লজ্জ ভাবি তাহলে ভুল হবে। দেশ-কাল এবং পারিপার্শ্বিক বিচার না করে কোন মন্তব্য করা যায় না।
    • আবরণে আভরণে ভারতীয় নারী, কলকাতা, রণধীর পাল, ১৯৬১।
  • ভোগবাসনাকে অত্যধিক মর্যাদা দেবার ফলে ভারতের একটি বিশেষ সময়ের সাহিত্যে, শিল্পে, ভাস্কর্যে, জীবনচর্যায় সর্বত্র শরীর চেতনার ছাপ পড়েছিল। বাৎস্যায়নের কামসূত্র ছাড়াও তার অনুকরণে লেখা হচ্ছিল রতিরহস্য, রতিমঞ্জরী, সুরদীপিকা, কামসমূহ, পঞ্চশায়ক, অনঙ্গরঙ্গের মতো অজস্র কামচর্চার গ্রন্থ। সংস্কৃত সাহিত্যের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে সেখানেও শৃঙ্গার রসের আধিক্য। অনেক সময় কাব্যের নিজের প্রয়োজনে নয়, সমকালীন পাঠকসমাজের রুচির তাগিদেই সম্ভোগবর্ণনা, জলবিহার, মধুপানোৎসব প্রভৃতির বর্ণনা কাব্যে স্থান পেয়েছে।
    • আবরণে আভরণে ভারতীয় নারী, কলকাতা, রণধীর পাল, ১৯৬১।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]