বিষয়বস্তুতে চলুন

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৫ মে ১৮১৭ – ১৯ জানুয়ারি ১৯০৫) ছিলেন একজন ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক ও দার্শনিক। তত্ত্বালোচনার উদ্দেশ্যে ১৮৩৯ সালে তিনি ‘তত্ত্বরঞ্জনী সভা’ স্থাপন করেন, পরে যার নাম হয় তত্ত্ববোধিনী সভা। ১৮৪২ সালে দেবেন্দ্রনাথ তত্ত্ববোধিনী সভা ও ব্রাহ্মসমাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরের বছর তারই অর্থে এবং অক্ষয়কুমার দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা। এই পত্রিকায় দেবেন্দ্রনাথকৃত বৃত্তি ও বঙ্গানুবাদসহ উপনিষদ প্রকাশিত হতে থাকে। তাঁর প্রধান সাহিত্যকর্মগুলি হলো-ব্রাহ্মধর্ম গ্রন্থ (১৮৫১), আত্মতত্ত্ববিদ্যা (১৮৫২), ব্রাহ্মধর্মের মত ও বিশ্বাস (১৮৬০), কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজের বক্তৃতা (১৮৬২), জ্ঞান ও ধর্মের উন্নতি (১৮৯৩), পরলোক ও মুক্তি (১৮৯৫), শ্রীমন্মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী প্রভৃতি।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • মৃত দেহের প্রত্যেক অঙ্গ, প্রত্যেক অস্থি, প্রত্যেক পরমাণু বিচ্ছিন্ন হইতেছে; কিন্তু তাহার কিছুই বিনষ্ট হইতেছে না। অতএব কোন্ উপমিতি দ্বারা ইহা সপ্রমাণ হয় যে মৃত্যুর পরে আত্মারই বিনাশ হইবে। যখন একটি জড়ীয় পরমাণু বিনষ্ট হইতে পারে না, তখন কি ঈশ্বর আত্মার বিনাশই ইচ্ছা করিবেন?
    • ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃ. ৪৭-৫৭
  • শরীর পরমাণু বিশিষ্ট, অতএব সেই সকল পরমাণু পৃথক্ হইলে সে শরীর ভগ্ন হইতে পারে, কিন্তু আত্মা একই, তাহার বিনাশও নাই এবং ভঙ্গও নাই।
    • ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ১৮৬৯, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃ. ৪৭-৫৭
  • আমাদের বুদ্ধিতে যে ধর্ম্মের ভাব আছে, তাহার মত যেমন ধার্ম্মিক পাওয়া যায় না; সেই প্রকার আমারদের সত্য ভাবের সহিত দৃশ্যমান কোন বস্তুরই ঐক্য দেখা যায় না। ঈশ্বরের লক্ষণ এবং সত্যের লক্ষণে সম্পর্ণ ঐক্য দেখিয়া ঈশ্বরকেই সত্য বলি। তিনি “সত্যজ্যোতীরসোহমৃতং।”
    • ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ১৮৬৯, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃ. ২৪-৩০

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে উক্তি

[সম্পাদনা]
  • মহর্ষি একদিন পরিপূর্ণ ভােগের মাঝখানে জাগিয়া উঠিয়া বিলাসমন্দিরের সমস্ত আলােকে অন্ধকার দেখিয়াছিলেন। সেইদিন তিনি তৃষার্তচিত্ত লইয়া পিপাসা মিটাইবার জন্য দুর্গম পথে যাত্রা করিয়াছিলেন, সে কথা সকলেই জানেন। যেখান হইতে অমৃত-উৎস নিঃসৃত হইয়া সমস্ত জগৎকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছে, সেই তীর্থস্থানে তিনি না গিয়া ছাড়েন নাই। সেই তীর্থের জল তিনি আমাদের জন্যও পাত্রে ভরিয়া আনিয়াছিলেন। এ পাত্র আজ বাদে কাল ভাঙিয়া যাইতেও পারে, তিনি যে ধর্মসমাজ দাঁড় করাইয়াছেন তাহার বর্তমান আকৃতি স্থায়ী না হইতেও পারে; কিন্তু তিনি সেই-যে অমৃত-উৎসের ধারে গিয়া নিজের জীবনকে ভরিয়া লইয়াছেন, ইহাই আমাদের প্রত্যেকের লাভ। এই লাভ নষ্ট হইবে না, শেষ হইবে না।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চারিত্রপূজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৮০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৯-১০০

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]