ফরজ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

ফরজ (আরবি: فَرَضْ) সরাসরি মুসলিম সমাজের সাথে সম্পৃক্ত, একটি আরবি শব্দ যা অবশ্য কর্তব্য কোন ধর্মীয় আচারকে নির্দেশ করে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনের সূরা আন-নূর এর ১নং আয়াতে ব্যবহারের কারণে, ফরজকে একটি কুরআনিক শব্দেও অভিহিত করা হয়।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ[সম্পাদনা]

ফার্সি, তুর্কি, উর্দু, হিন্দি ভাষায়ও ফরজ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইসলাম ধর্মে ফরজ বলতে বুঝায়– আল্লাহ তাঁর অনুসারীদের উপর যেসব কাজ আবশ্যক করেছেন। যে সকল মুসলমান এই আবশ্যক কাজগুলো পালন করবেন তারা মুক্তি ও সওয়াব অর্জন করবেন।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • একটি সূরাহ্ --এটি অবতারণ করেছি এবং এটিকে অবশ্য-পালনীয় (ফরজ) করেছি, আর এত অবতারণ করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
    • [সূূূরা আন-নূূর, আয়াত ১
  • রোজা অন্যতম ফরজ ইবাদত। যে মুমিন ব্যক্তি রোজা বর্জন করল সে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করল। কারণ সে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে
    • (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
  • তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজার মাসে উপস্থিত থাকে, সে যেন রোজা রাখে
    • (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
  • বিবেকবান, বয়ঃপ্রাপ্ত, মুসলিম নিসাবের মালিকের ওপর বছরান্তে জাকাত আদায় করা ফরজ। যে ব্যক্তি এই ফরজ পরিত্যাগ করবে, সে ইহকাল ও পরকালে শাস্তির যোগ্য হবে। যে ব্যক্তি জাকাত ফরজ হওয়া অস্বীকার করবে, তার শাস্তি হবে অন্যান্য ইবাদত ত্যাগকারীর মতো। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত অলসতাবশত জাকাত পরিহার করবে, তার জন্য রয়েছে ঐহলৌকিক ও পারলৌকিক কঠোর শাস্তি। জাকাত প্রদান না করলে রহমতের বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়, দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কোরআন মাজিদে জাকাত বর্জনকারীর জন্য জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ও গলদেশে বিষধর সাপ হার হয়ে দংশনের কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে
    • (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫,
    • (সূরা : ফুসসিলাত, আয়াত : ১১০,
    • (সূরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১৮০,
    • (সূরা : তাওবা, আয়াত : ২৫৮)

হাদিস[সম্পাদনা]

  • আল্লামা ইবনু আবিল ওয়ারদ (রহ.) বলেন, ‘ইসলামের মূলভিত্তি তার ফরজ বিধানগুলো। আর ফরজ বিধান দুই প্রকার * এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা করার নির্দেশ দিয়েছেন, দুই. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা করতে নিষেধ করেছেন।’
    • হিলয়াতুল আউলিয়া, পৃষ্ঠা. ২৪২
  • ফরজ ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নৈকট্য লাভ করতে পারে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওলির সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। বান্দা যা কিছুর মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করে তার মধ্যে আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমি তার ওপর যা ফরজ করেছি।
    • (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)
  • আল্লাহভীরু ব্যক্তিরাই ফরজ ইবাদতের প্রতি সবচেয়ে বেশি যত্নবান। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলতেন, ‘রাতে তাহাজ্জুদ আর দিনে রোজা রাখা প্রকৃত আল্লাহভীতি নয়; বরং আল্লাহভীতি হলো আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা আদায় করা এবং তা নিষিদ্ধ করেছেন তা পরিহার করা। এগুলো আদায় করার পর যদি কোনো নেক আমল করা হয় তবে কল্যাণের ওপর কল্যাণ বলে বিবেচিত হবে।
    • (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২/২৬৮)
  • আল্লাহ আমার ওপর কোন রোজা ফরজ করেছেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজান মাসের রোজা; তবে তুমি যদি কিছু নফল রোজা আদায় করো তা ভিন্ন কথা। সে বলল, বলুন! আল্লাহ আমার ওপর কী পরিমাণ জাকাত ফরজ করেছেন? বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর লোকটি বলল, ওই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার ওপর যা ফরজ করেছেন, আমি এর মধ্যে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।
    • (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯১)
  • জুন-নুন (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আমরা কেন নফল আদায়ের (মানসিক) শক্তি পাই না? তিনি বলেন, কারণ তোমরা ফরজগুলো ঠিকমতো আদায় করো না।
    • (আলামুত-তাসাউফ, পৃষ্ঠা. ৬৭)
  • ইবনু আবিল ওয়ারদ (রহ.) বলেন, ‘দুটি কাজে বান্দার বিপদ : এক. নফল নিয়ে ব্যস্ত হওয়া এবং ফরজ ইবাদত নষ্ট করা, দুই. অন্তরের সংযোগ ছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইবাদত। তারা মূল নষ্ট করে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার পথ বন্ধ করে দেয়।
    • (তাহজিবু হিলয়াতুল আউলিয়া, পৃষ্ঠা. ৪১৩)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]