ফাহিশা
অবয়ব
ফাহিশা বা ফাহাশ (আরবি: فُحْش, الفاحشة, فاحشة) হল একটি আরবি শব্দ, যার দ্বারা সাধারণত লাম্পট্য বা অশ্লীলতাকে বোঝায়। এটি ইসলামী পরিভাষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। ফাহিশার বিপরীত শব্দ হল হায়া।
উক্তি
[সম্পাদনা]- পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে অশ্লীলতার আরবি শব্দ ‘ফাহেশা’ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা ইত্যাদি। আবার পবিত্র কোরআনের কোনো কোনো জায়গায় ব্যভিচারকেও ‘ফাহেশা’ বলা হয়েছে। যেমন সুরা বনি ইসরাঈলে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না, নিশ্চয়ই তা অশ্লীল ও মন্দ পথ।
- (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)
- আপনি বলুন, আমার রব প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপকাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা এবং আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা, যার পক্ষে আল্লাহ কোনো দলিল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা, যা সম্বন্ধে তোমাদের কোনো জ্ঞানই নেই, (ইত্যাদি কাজ ও বিষয়) নিষিদ্ধ করেছেন।
- (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩৩)
- মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।
- (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)
পরিভাষা
[সম্পাদনা]ফাহিশা শব্দটি শাহওয়াত (شَهْوَة) ধাতু থেকে এসেছে যার অর্থ শক্তিশালী কামনা, যা সাধারণত নেতিবাচক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ইসলামী পন্ডিতদের মতে, ফাহিশার অর্থ দুটি হতে পারে:
- হয় এটি ব্যভিচার বা পরকীয়া (জিনা ফাহিশা মুবিন হিসেবে), যেমনটা কুরআনে বলা হয়,
- তোমরা ব্যভিচারের ধারে কাছে যেও না, কারণ এটি ফাহিশা (অশ্লীলতা), এবং এটি অনিষ্টের পথ।
- — সূরা ইসরা (১৭:৩২)
- মত হল যে কোন খারাপ কাজ যা শাস্তিযোগ্য যেমন পাথরনিক্ষেপ, হত্যা হাত কাটা ইত্যাদি।
ফাহিশায় অন্তরভূক্ত কবীরাহ গুনাহর সংখ্যা অনেক। কবীরা গুনাহ হল সেসব পাপ, যা থেকে বিরত থাকতে ইসলামে কঠোর সতর্ক করা হয়েছে, অথবা এর বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি রাখা হয়েছে, অথবাএর জন্য হদ্দ শাস্তি জারি রয়েছে। যেমন মুসলিম হওয়ার পর ধর্মত্যাগ করা, নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা, সুদ খাওয়া, বাবামার সাথে খারাপ ব্যবহার করা, ব্যভিচার, পরকীয়া ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ইত্যাদি।
হাদীস
[সম্পাদনা]- যখন কোন জাতির মধ্যে ফাহিশা (যৌন অনৈতিকতা/অশ্লীলতা/ব্যভিচার) প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে প্লেগ মহামারীর আকারে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব ঘটে, যা পূর্বেকার লোকেদের মাঝে দেখা যায় নি।
- সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৪,০১৯
ফাহিশা থেকে বাচার উপায়
[সম্পাদনা]কুরআন বলে, নামাজ অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত রাখে। কুরআনে রয়েছে,
[সম্পাদনা]- যারা কোনো পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ ছাড়া গুনাহসমূহের ক্ষমাকারী কে-ই বা আছে এবং তারা জেনে শুনে নিজেদের (পাপ) কাজের পুনরাবৃত্তি করে না।
- (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৫)
- হে রাসুল!) আপনার প্রতি যে কিতাব ওহি (নাজিল) করা হয়েছে; তা থেকে তেলাওয়াত করুন আর নামাজ প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল (ফাহিশা) ও মন্দকাজ (মুনকার) থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর।’
- [সুরা আনকাবুত: আয়াত ৪৫]
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় ফাহিশা সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।