ফিতনা

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

ফিতনা (বা fitnah, pl. ফিতান ; আরবি: فتنة, فتن‎‎ fitan : "প্রলোভন, বিচার; রাষ্ট্রদ্রোহ, গৃহযুদ্ধ, সংঘাত") একটি আরবি শব্দ যার বিস্তৃত অর্থ বিচার, কষ্ট বা কষ্ট। গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক অর্থ সহ একটি শব্দ, এটি আধুনিক আরবীতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কুরআনে ফিতনার অর্থ: পরীক্ষা ও যাচাইকরণ, পথ অবরোধ এবং মানুষকে বিমুখ করা।

ধ্রুপদী আরবীতে ব্যবহৃত ফিতনার অর্থ এবং আধুনিক প্রমিত আরবি এবং বিভিন্ন কথোপকথন উপভাষায় ব্যবহৃত ফিতনা অর্থের মধ্যে পার্থক্য করা যেতে পারে। কুরআনে ফিতনার ধারণাগত গুরুত্বের কারণে, সেই কাজে এর ব্যবহারকে আলাদাভাবে বিবেচনা করার প্রয়োজন হতে পারে, যদিও ক্লাসিক্যাল আরবি ভাষায় শব্দের সাধারণ আভিধানিক অর্থ।

কুরআনে এর ব্যবহার ছাড়াও, ফিতনা শব্দটি ৭ম থেকে ৯ম শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামী খেলাফতের মধ্যে চারটি ভারী গৃহযুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত হয়।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • মুহম্মদ প্রাথমিকভাবে সেই কাজটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং নিষিদ্ধ মাসগুলির কারণে উট এবং দুই বন্দীর বিষয়ে যে কোনও পদক্ষেপ স্থগিত করেছিলেন। আরব পৌত্তলিকরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুসলমানদেরকে ঐশ্বরিকভাবে অলঙ্ঘন করার জন্য অভিযুক্ত করে (আরব পৌত্তলিকদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত মাসগুলিতে যুদ্ধ করা )। এই অলস কথাবার্তা মুহাম্মদের সাহাবীদের জন্য একটি বেদনাদায়ক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, শেষ পর্যন্ত তারা স্বস্তি লাভ করে যখন মুহাম্মদ পবিত্র মাসগুলিতে যুদ্ধ সম্পর্কিত একটি আয়াত নাজিল করেন।
    •  সূরাঃ আল-বাকারা: আয়াতঃ ২৭১
  • সুদ সমাজে এতটাই ব্যাপক হয়ে গেছে যে, মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে- সুদবিহীন অর্থনীতি চিন্তা করা যায় না। সুদ ব্যবস্থা বন্ধ করতে গেলে অর্থনীতিই ভেঙে পড়বে। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে করেছেন হালাল এবং সুদকে করেছেন হারাম।
    • -সূরা বাকারা : ২৭৫
  • মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর কাছে ফিতনা হত্যা অপেক্ষা মারাত্মক।
    • (সূরা বাকারা, আয়াত : ২১৭)

হাদিস[সম্পাদনা]

  • হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল ফিতনা থেকে পরিত্রাণ চাই।
    • -মুসনাদে আহমাদ : ২৭৭৮
  • ইলম উঠে যাওয়া কিয়ামতের অন্যতম আলামতগুলোর একটি। পাশাপাশি এটি উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ একটি ফিতনা। মানুষ আলেমদের অবমূল্যায়ন করতে শুরু করবে। ফলে প্রকৃত ইলম আস্তে আস্তে উঠে যাবে। মানুষ বিভ্রান্ত হতে থাকবে। সবাই নিজেকে আল্লামা ভাবতে শুরু করবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অবশ্যই কিয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসবে যখন সব জায়গায় মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে।
    • -সহিহ বোখারি : ৭০৬২
  • হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে এমন বিবাদে জড়ানোকে ফিতনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। আহনাফ ইবনে কায়স (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (সিফফিনের যুদ্ধে) এক ব্যক্তিকে (আলী রা.)-কে সাহায্য করতে যাচ্ছিলাম। আবু বাকরাহ (রা.)-এর সঙ্গে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, কোথায় যাচ্ছ? বললাম, আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছি। তিনি বললেন, ফিরে যাও। কারণ আমি আল্লাহর রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, দুই জন মুসলমান তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী), কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন, (নিশ্চয়ই) সেও তার সাথিকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল।
    • -সহিহ বোখারি : ৩১
  • হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, দুনিয়া ধ্বংস হবে না যে পর্যন্ত না মানুষের কাছে এমন এক যুগ আসে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে কি দোষে সে অন্যকে হত্যা করেছে এবং নিহত লোকও জানবে না যে কি দোষে তাকে হত্যা করা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করা হলো, কিভাবে এমন অত্যচার হবে? তিনি জবাবে বললেন, সে যুগটা হবে হত্যার যুগ। এরূপ যুগের হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামি হবে।
    • -সহিহ মুসলিম : ৭১৯৬
  • ফিতনার যুগে প্রযুক্তিগত দিক থেকে মানুষ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বড় বড় দালানকোঠা হবে, পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করা হবে। যা বর্তমানে আমরা খুব স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই দেখছি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন মক্কা শরিফের টিলার উদর বিদীর্ণ করা হবে আর নির্মিত ভবনগুলো মক্কা শহরের পাহাড়গুলোর চেয়ে উঁচু হবে তখন মনে কর ফিতনার সময় সন্নিকটে।
    • -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৭/৪৬১
  • হজরত আলী (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন আমার উম্মতের মাঝে বারোটি (কোনো কোনো বর্ণনায় পনেরোটি) কাজ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদের ওপর মসিবতের পাহাড় ভেঙে পড়বে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, কাজগুলো কী? উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন-
  1. যখন রাষ্ট্রীয় সম্পদকে লুটের মাল মনে করা হবে।
  2. যখন আমানতের মালকে লুটের মাল মনে করা হবে এবং তাতে খেয়ানত করবে।
  3. যখন লোকেরা জাকাতকে জরিমানা এবং ট্যাক্স মনে করবে।
  4. মানুষ স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্যতা করবে অর্থাৎ মানুষ স্ত্রীকে খুশি করার জন্য মাকে অসন্তুষ্ট করবে।
  5. মানুষ বন্ধুর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে এবং বাবার সঙ্গে অসদ্ব্যবহার করবে অর্থাৎ বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করবে কিন্তু বাবার সঙ্গে রূঢ় ও কঠোর আচরণ করবে।
  6. মসজিদে শোরগোল হবে।
  7. সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও নীচ ব্যক্তিকে নেতা বানানো হবে।
  8. অনিষ্টের ভয়ে মানুষকে সম্মান করা হবে।
  9. ব্যাপকভাবে মদ পান করা হবে।
  10. ব্যাপকভাবে রেশমি কাপড় পরিধান করা হবে।
  11. ঘরে নর্তকী ও গায়িকা রাখা হবে এবং বাদ্যযন্ত্র ও নাচ-গানের উপকরণকে যত্নসহকারে রাখা হবে।
  12. এ উম্মতের পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের ওপর অভিসম্পাত করবে।

ইবনে কাইয়্যিমের মতে, তিনি বলেন, "অধিকাংশ আলেম এখানে ফিতনা শব্দের অর্থ শিরক হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

মুসলিম মুফাসসির ইবনে কাসীর তার তাফসীর ইবনে কাসীর গ্রন্থে এই আয়াতের ভাষ্য নিম্নরূপ: অর্থাৎ, মুসলমানদেরকে তাদের দ্বীন থেকে ফিরে যেতে এবং ঈমান আনার পর পুনরায় কুফর গ্রহণ করতে বাধ্য করার চেষ্টা করা আল্লাহর কাছে হত্যার চেয়েও খারাপ।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]