বিদআত

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

বিদআত (আরবি: بدعة অর্থ: নবসৃজন ইসলামি শরিয়তের অন্যতম বিতর্কিত, জটিল ও স্পর্শকাতর একটি মৌলিক হুকুম। ধ্রুপদি আরবী সাহিত্যে (আদব) এটি এটি গদ্য এবং কবিতার অসামান্য রচনাগুলির জন্য প্রশংসার একটি রূপ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে ইসলামের ভেতর বিভিন্ন বিভাজন, দল ও উপদলের মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাসংঘাত ও মতবাদগত অনৈক্যের সৃষ্টি করেছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাথে ওয়াহাবিবাদের মৌলিক দ্বন্দ্ব। উনবিংশ শতাব্দিতে উসমানী খেলাফতের সাথে সৌদি বংশের বিদ্রোহ, ওয়াহাবিবাদের উত্থান পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ এবং সৌদি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রধান মতবাদগত অস্ত্র হিসেবে বিদআতকে ব্যবহার করা হয়।

উক্তি[সম্পাদনা]

وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا
  • যারা কুফরী করে (সত্য প্রত্যাখ্যান করে) তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকার ন্যায়, পিপাসার্থ যাকে পানি মনে করে; কিন্তু সে ওর নিকট উপস্থিত হলে দেখে তা কিছুই নয়।
    • (সূরা নুর ৩৯ আয়াত)
  • বিদআতীরা আল্লাহর উপর বিনা ইলমে অনুমান-প্রসূত কথা বলে। সাধারণতঃ বাতেনী দাবীদাররা এই রোগের রোগী। যারা কলবে জ্ঞানার্জন করে থাকে, কুরআন হাদীস ও তফসীরের ইলমে কোন প্রকারের অনুরাগ প্রকাশ করে না, সলফের পথ জানার কোন ইচ্ছা রাখে না। বরং মনগড়া বাতেনী ইলম দ্বারা স্বপ্ন ও পরিকল্পিত কাশফ দ্বারা এবং ত্রিশ এর অধিক পারা কুরআন (?) দ্বারা ভক্তদের মনোরঞ্জন করে থাকে। শরীয়তের উর্ধ্বে থেকে মারেফতীর দাবী করে সবকাজে ফুর্তি মারে। আর এ সবের মাধ্যমে প্রকৃত ইলম ছাড়াই আল্লাহ ও তদীয় রসূলের উপর হলাহল মিথ্যা বলে। যা বান্দার জন্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
    • (সূরা আ'রাফ ৩৩ আয়াত)।
  • সে যদি কিছু রচনা করে আমার নামে চালাতে চেষ্টা করত, তবে আমি তাকে কঠোর হস্তে দমন করতাম এবং তার কণ্ঠশিরা কেটে দিতাম, তখন। তোমাদের কেউই তাকে রক্ষা করতে পারত না।
    • (সূরা হাক্কাহ ৪৪-৪৯ আয়াত)।
  • আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকত আমার উপর মিথ্যা বলে, সে যেন। নিজের ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়।” (বুখারী ও মুসলিম)। অনুরূপভাবে শির্ক ও কুফরীর মূলও আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা। যেহেতু মুশরিক অজ্ঞভাবেই মনে করে যে, সে যার পুজা করে সেই মা'বুদ তাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করবে, তাঁর সামীপ্য দান করবে, তাঁর নিকট সুপারিশ করবে এবং অসীলা বা মাধ্যম হয়ে তাঁর নিকট থেকে তার প্রয়োজন মিটাবে। এ সব অমূলক ধারণা তার কল্পনাপ্রসূত। তাই প্রত্যেক মুশরিক আল্লাহর উপর মিথ্যা ধারণা ও রচনা করে থাকে। আর এইরূপ ধারণা ও অনুমানই বিদআতীকে বিদআতে উৎসাহিত করে। (মাদারেজুস সালেকীন)।


  • আর “যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা তাঁর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে তার অপেক্ষা বড় অত্যাচারী আর কে?
    • (সূরা আ'রাফ ৩৭ আয়াত)।

হাদিস[সম্পাদনা]

‘বিদআত’ কাকে বলে? কখন কোন কাজকে ‘বিদআত’ বলে আখ্যায়ন করা হবে?[সম্পাদনা]
  • বিদআত বলা হয় দ্বীন ও ইবাদতে নব আবিষ্কৃত কাজকে। অর্থাৎ দ্বীন বা ইবাদত মনে করে করা এমন কাজকে বিদআত বলা হবে, যে কাজের কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর কোন দলীল নেই। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, তোমরা (দ্বীন) নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।
    • ৮১ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)
  • যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কিছু উদ্ভাবন করল--- যা তাঁর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
    • ৮২ (বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যাক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যপারে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।” বলা বাহুল্য, নব আবিষ্কৃত পার্থিব কোন বিষয়কে বিদআত বলা যাবে না। যেমন শরীয়াতে নিষিদ্ধ কোন কাজকে বিদআত বলা হয় না। বরং তাকে অবৈধ, হারাম বা মাকরূহ বলা হয়।

বিদআত’ কাকে বলে? ‘বিদআতে হাসনাহ’ বলে কি কোন বিদআত আছে?[সম্পাদনা]
  • বিদআত বলা হয় দ্বীন বিষয়ক কোন নতুন কর্মকে, যার কোন দলীল শরীয়তে নেই। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ অবশ্যই তোমাদের মধ্যে যারা আমার বিদায়ের পর জীবিত থাকবে তাঁরা অনেক রকমের মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব তোমরা আমার ও আমার সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো, তা দাঁত দ্বারা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো। (তাতে যা পাও মান্য কর এবং অন্য কোনও মতের দিকে আকৃষ্ট হয়ো না।) আর (দ্বীনে) নবরচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান! কারণ, নিশ্চয় প্রত্যেক বিদআত (নতুন আমল) হল ভ্রষ্টতা।
    • (আবু দাঊদ ৪৪৪৩, তিরমিযী ২৮১৫, ইবনে নাজাহ ৪২ নং)

আর নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, “ আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে(নিয়ে যায়)।” উক্ত হাদিস থেকে এ কথাও প্রমাণ হয় যে, বিদআতে হাসানাহ (ভাল বিদআত) বলে কোন বিদআত নেই। কারণ মহানবী (সঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]