বিয়ে পাগলা বুড়ো

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬) হলো ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার দীনবন্ধু মিত্র রচিত অন্যতম একটি প্রহসনমূলক নাটক। সমাজের প্রাচীনপন্থীদের ব্যঙ্গ করে রচিত নাটকটি ১৮৭২ সালে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। স্কুলের অপরিপক্ব ছেলেরা বিবাহবাতিকগ্রস্ত এক বৃদ্ধের নকল বিয়ের আয়োজনের মাধ্যমে কীভাবে তাকে নাস্তানাবুদ করে, এ প্রহসনে সে কাহিনীই আবর্তিত হয়েছে।

সংলাপ[সম্পাদনা]

  • রাজী: বিধুমুখি! তুমি আমায় আনন্দ-সাগরে সাঁতার শেখাবে- আহা আহা কি মধুর বচন! প্রেয়সি! আমায় বুড়ো বলে ঘৃণা করো না।
    রতা: প্রবীণ কি দীন হয় কিবা কদাকার,
    ভকতিভাজন ভর্ত্তা অবশ্য ভার্য্যার।
    রাজী: সুন্দরী আমাকে তোমার ভক্তি হয়?
    রতা:দেবতা সমান পতি সাধনের ধন,
    হৃদয়মন্দিরে রাখি করিয়ে যতন।
    নানা আরাধনা করি মন করি এক,
    সরল বচন জলে করি অভিষেক।
    বিলেপন করি অঙ্গে আদর চন্দন,
    হেম উপবীত দিই সুখ আলিঙ্গন।
    রসের হে’য়ালি ছলে বলি শিব ধ্যান,
    কপোল কমল করি দেব অঙ্গে দান।
    অবলা সরলা বালা আমি অভাজন,
    দিবানিশি থাকে যেন পতিপদে মন।


  • রাজী: সোনার চাঁদ তুমি আমার স্বর্গে তুল্যে, আমি আর বাড়ী যাব না, এইখানে পড়ে থাকবো। বিধুবদনী একটা ছড়া বলো।
    রতা: মাথার উপর ধরি পতির বচন,
    বলিব ললিত ছড়া শুন হে মদন।
    কণক কিশোরী, পিরিতের পরি,
    রসের লহরী, বসে আলো করি,
    নিকুঞ্জ বন,
    মন উচাটন, মুদিত নয়ন,
    ভাবে মনে মন, কোথায় সে ধন,
    বংশীবদন।
    কুলের অবলা, অবলা সরলা,
    বিরহে বিকলা, সতত চপলা,
    বাঁচিতে নারি,
    বিনে প্রাণ হরি, হার হলো হরি,
    কুসুম কেশরি, আহা মরি মরি,
    মরে গো নারী।
    রমণীর মন, কি জানি কেমন,
    এত অযতন, তবু তো রতন,
    পুরুষে ভাবে,
    কি করি উপায়, অরি পায় পায়,
    পথে যদু রায়, পড়ে প্রেম দায়,
    মজেচে ভাবে।
    বৃন্দে বলে রাই, লাজে মরে যাই,
    এসেচে কানাই, দোহাই দোহাই,
    কথা কস্ নে,
    রাই বলে সখি, সে মানে হবে কি,
    পিপাসী চাতকি, নীরদ নিরখি,
    বাধা দিস্ নে।
    কামিনীর মান, সফরির প্রাণ,
    মানে অপমান, বিধাতা বিধান,
    আন গোবিন্দে,
    করি আলিঙ্গন, মদনমোহন,
    স্মর হুতাশন, করি নিবারণ,
    যাও গো বৃন্দে।
    নূপুরের ধ্বনি, শুনি উঠে ধনী,
    দীনে পায় মণি, পদ্মে দিনমণি,
    ধরিল করে,
    সহজ মিলন, সুখ সন্তরণ,
    সুবোধ সুজন, ললনা কখন,
    মান না করে।
    রাজী:আহা মরি এমন মধুর বচন কখন শুনি নি, সুন্দরীর মুখ যেন অমৃতের ছড়া দিচ্চে। আহা! প্রেয়সি বিচ্ছেদজ্বালা এমনি বটে, পুরুষেরা বিচ্ছেদ-বাঁটুল খেয়ে ঘুরে মাটিতে পড়ে, হনুমান যেমন ভাতের বাঁটুল খেয়ে গন্ধমাদন মাথায় করে ঘুরে পড়েছিল। মেয়ে পুরুষের সমান জ্বালা, পুরুষে চেঁচামেচি করে, মেয়েরা গুমরে গুমরে মরে।
    রতা:অনঙ্গ অঙ্গনা অঙ্গ বিনা পরশনে,
    প্রহারে প্রসূন বাণ বিরহিণী মনে;
    কামিনী বিরহ বাণী আনে না অধরে,
    বিরলে বিকল মন মনসিজ শরে,
    লাবণ্য বিষন্ন নয় বিদরে অন্তর,
    কীটক কুলায় যথা রসাল ভিতর।
    রাজী:আহা আহা এমন মেয়ে ত কখন দেখি নি, আমার কপালে এত সুখ ছিল, এত দিন পরে জান্লেম, বুড়ো বিটি আমার মঙ্গলের জন্য মরেচে, “বক্তার মাগ মরে, কম বক্তার ঘোড়া মরে।” প্রেয়সি! তুমি আমার গালে একবার হাত দাও।
    রতা:বয়সে বালিকা বটে কাজে খাট নই,
    প্রাণপতি গাল দুটি করে করি লই।


  • রাজী: সুন্দরি, আমার ঘুম গিয়েচে, রাত আমার দিন বোধ হচ্যে-প্রেয়সি! তুমি একবার আমার কাছে এস, তোমারে গোটা কত কথা জিজ্ঞাসা করি।
    রতা: কথার সময় নয় রসময় আজ,
    এখনি আসিবে তব শ্যালকী শ্যালাজ।
    রাজী: কারো আসতে দেব না, তুমি উতলা হও কেন, এস, এস, এস না- এই এস (অঞ্চল ধরিয়া টানন)।
    রতা:“রসরাজ কি কাজ সলাজ মরি!
    মম অঞ্চল ছাড় দু পায় ধরি।
    ক্ষম জীবন যৌবন হীন বলে,
    ভ্রমরা কি বসে কলিকা কমলে;
    নব পীন পয়োধর পাব যবে,
    রস সাগর নাগর শান্ত হবে।
    রহ মানস রঞ্জন ধৈর্য্য ধরে,
    সুখ নূতন নূতন লাভ পরে।”

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • বিয়ে পাগলা বুড়ো