বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্যবহারকারী:মো. মাহমুদ আলম তালুকদার

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

বঙ্গীয় বিবাহসম্পর্কিত কতিপয় বাণী:

১। * ওমর উষ্ট্র-চর্ম্ম পরিহিত হইয়া মৃত্তিকোপরি উপবেশন করিয়া আরবে দেশে যেরূপ সমাদর পাইয়াছেন, ও দেশ বিদেশে ইস্লাম ধর্ম্মের যে প্রকার প্রভুত্ব বিস্তার করিয়াছেন, এক্ষণে আর তদ্রুপ হইবার সম্ভাবনা নাই। সভ্যতার বৃদ্ধিই ইহার প্রধান কারণ।

সূত্র: শ্রী শ্রী কৃষ্ণ দাসের সম্পাদনায় ১২৮১ বঙ্গাব্দে বা ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জ্ঞানাঙ্কুর মাসিক পত্র ও সমালোচন পত্রিকা থেকে সংগৃহীত।

২। আমাদিগের দেশের অনেকেরই এই সংস্কার আছে যে, সন্তান হওয়া ঈশ্বরের হাত। আমরা স্বীকার করি, “হওয়া ঈশ্বরের হাত বটে কিন্তু না হওয়া আমাদিগের হাত।” সূত্র: শ্রী শ্রী কৃষ্ণ দাসের সম্পাদনায় ১২৮১ বঙ্গাব্দে বা ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জ্ঞানাঙ্কুর মাসিক পত্র ও সমালোচন পত্রিকা থেকে সংগৃহীত।

৩। * হিন্দুশাস্ত্রে ভক্তিমান্ পাঠক, আমাদের শাস্ত্রে সন্তান জন্মিবার পূর্ব্বে বিধবা হইলে, দেবরদ্বারা এক মাত্র পুত্রোৎপাদনের যে বিধি আছে, তাহার কত দূর গূঢ় তাৎপর্য্য এবং যাঁহারা সেই বিধি দিয়াছিলেন, তাঁহারা কত দূরদর্শী ও দেহতত্ত্বজ্ঞ ছিলেন, এবং এই প্রাকৃতিক তত্ত্বটী কেমন সুন্দর বুঝিয়া ছিলেন, তাহা একবার ভাবিয়া দেখুন। বঙ্গীয়-বিবাহ, লেখক: অজ্ঞাত,সূত্র: শ্রীকৃষ্ণদাস কর্তৃক সম্পাদিত ১২৮১ বঙ্গাব্দে “জ্ঞানাঙ্কুর” পত্রিকায় আশ^ীন ও কার্তিক সংখ্যায় প্রকাশিত।

৪। ষ্টার্কের Primitive Family নামক বইএ আছে- Among the Kafirs the parents do not use the milk of the cows which are destined to be the daughter's property until child is born. অর্থ্যাৎ কাফির জাতির মধ্যে পিতামাতারা গরুর দুধ খায় না; কারণ, কন্যার সন্তান না হওয়া পর্য্যন্ত গরু কন্যার সম্পত্তি বলিয়া গণ্য হয়। কন্যার সন্তান না হওয়া পর্য্যন্ত তাহার শ^শুরবাড়ীর কোন খাদ্য পিতা মাতা গ্রহণ করেন না, এ নিয়ম অন্ততঃ বঙ্গদেশের কোন কোন স্থলে এখনও প্রচলিত আছে। সূত্র: বিবাহ-বার্ত্তা প্রবন্ধ শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ চৌধুরী।

৫। মনুষ্যেতর প্রায় সকল জন্তুর মধ্যেই সন্তান-সঞ্চার করাইবার এক একটা নির্দ্দিষ্ট কাল বা ঋতু আছে; কিন্তু মানুষের মধ্যে এই কাল বা ঋতু সারা বছর ধরিয়াই চলে, বলিতে পারা যায়। অনেক নীচ শ্রেণীর জীবদের জোড় বাঁধার প্রকৃতির আলোচনায় উল্লেখ করিয়াছি যে যৌন আকর্ষণ বাড়ে অপরিচিত বা stranger- কে দেখিয়া, ও নিজের দল বা বাসা ছাড়িয়া অন্যত্র গিয়াই বহু শ্রেণীর জীবকে যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি করিতে দেখা যায়। যদিও পৃথিবীময় সকল জাতির সকল সমাজেই এই অভিজ্ঞতা ও সংস্কার আছে যে প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষের মধ্যে কখনও ভাই-বোনে প্রেমের আকর্ষণ জন্মে না, তবুও Westermarck প্রমুখ নৃতত্ত্ববিদেরা বিশেষভাবে বৈজ্ঞানিক আলোচনায় দেখাইয়াছেন যে ভাই-বোন ত অতি দূরের কথা, স্বাভাবিক অবস্থায় শিশুরা যাহাদের সঙ্গে অতি পরিচিত, যাহাদের সঙ্গে একত্রে খেলা করিয়া বাড়িয়াছে তাহাদের প্রতিও যৌন আকর্ষণ জন্মে না।

সূত্র: শ্রী সুধীন্দ্রনাথ দত্ত’র সম্পাদিত ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ বা ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত পরিচয় ত্রৈমাসিক পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষ, প্রথম সংখ্যা থেকে সংগ্রহীত। বিবাহ-বিধি, শ্রী বিজয়চন্দ্র মজুমদার।

৫। বিবাহ-ঘটিত আচার-ব্যবহার গড়ে উঠেছে প্রধানতঃ তিনটে জিনিস নিয়ে। প্রথমটি মানুষের প্রবৃত্তিমূলক, দ্বিতীয়টি অর্থনৈতিক এবং শেষেরটি ধর্ম্মসম্বন্ধীয় সমস্যা। সূত্র: বাট্রেন্ড রাসেলের “ম্যারেজ এণ্ড মরাল্স” পুস্তক অবলম্বনে লিখিত, এই প্রবন্ধটি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত, ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ বা ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত পরিচয় ত্রৈমাসিক পত্রিকার প্রথমবর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে সংগৃহীত। বিবাহ-নীতি শ্রী পদ্মাবসু| ৬। ভারতবর্ষেও কোনও কোনও শাস্ত্রকার পতিপরিত্যাগ ও পুনর্বিবাহের বিধান দিয়াছেনÑ নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে ক্লীবে চ পতিতে পতৌ। পঞ্চস্বাপৎসু নারীণাং পতিবন্যো বিবীয়তে\ বিবাহ-সমস্যা, লেখক: শান্তিসুধা ঘোষ সূত্র: লেখকের ১৩৪৭ বা ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত নারী নামের গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত।

৭। ইংরেজি ১৯৪১ সালে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় গভর্ণমেন্ট যে ‘হিন্দু-আইন কমিটি’ নিয়োগ করেন এ খসড়া সেই কমিটি প্রস্তুত করেছেন। এ কমিটির সভাপতি হচ্ছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শ্রীযুক্ত বেনেগল নরসিংহ রাও, এবং সভ্য আছেন ্ওই হাইকোর্টের ভুতপূর্ব বিচারপতি শ্রীযুক্ত দ্বারকানাথ মিত্র, বোম্বাই-এর শ্রীযুক্ত ঘরপুরী ও শ্রীযুক্ত যোশী। এই খসড়া অনুসারে আইন পাশ হলে তা কার্যকরী হবে ইংরেজি ১৯৪৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে, অর্থাৎ এখন থেকে তিন বছর পরে। *

  • এই রচনাটি সন ১৩৪৯ সালের কার্তিক মাসে লিখিত। সমাজ ও বিবাহ, লেখক: অতুলচন্দ্র গুপ্ত

সূত্র: প্রকাশকাল অজ্ঞাত। অভিজিৎ গুপ্ত সম্পাদিত “অতুলচন্দ্র গুপ্ত রচনা সংগ্রহ” থেকে সংগ্রহীত।

৮। বিবাহের বিভিন্ন রকম ফলাফল বিভিন্ন ধর্মের স্বীকৃতি আছে, স্ত্রীর নাম পুরুষের মত এবং পুরুষের নাম স্ত্রী মত, থাকিলে বিবাহে বর কন্যা উভয়েই দরিদ্র হয়। বিবাহের ফলাফল ( প্রাচীন দৈবজ্ঞদিগের গণনা) শ্রীধর্ম্মানন্দ মহাভারতী সূত্র: রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ১৩০৯ বঙ্গাব্দে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত প্রবাসী সচিত্র মাসিক পত্রের দ্বিতীয় ভাগ ষষ্ঠ সংখ্যা থেকে সংগ্রহীত।

৯। বায়ূপুরাণের ৫৮তম অধ্যায়ে, যেখানে কলির দোষ সম্বন্ধে ভবিষ্যৎবাণী আছে, সেখানে লিখিত আছে, যে কলিকালে অনেক দুর্নীতি এবং ভ্রাষ্টাচার দেখিতে পাওয়া যাইবে; তাহার মধ্যে একটি এই যে ষোড়শী হইবার পূর্ব্বেই অনেক রমণী গর্ভধারণ করিবেন। প্রাচীন বিবাহপ্রথা, শ্রীবিজয় চন্দ্র মজুমদার, সূত্র: রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ১৩১২ বঙ্গাব্দে বা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত প্রবাসী সচিত্র মাসিক পত্রের চতুর্থ সংখ্যা পঞ্চম ভাগ থেকে সংগ্রহীত।

১০। ভারতবর্ষে এক সময় গোষ্ঠী বিবাহ প্রচলিত ছিল। গোষ্ঠী-বিবাহ, শ্রী বিমানবিহারী মজুমদার, সূত্র: সূধীন্দ্রনাথ দত্তের সম্পাদনায় ১৩৩১ বঙ্গাব্দে বা ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পরিচয় পত্রিকার চতুর্থবর্ষ, প্রথম সংখ্যা থেকে সংগ্রহীত।

১১। বিবেকের অনুসরণ করুন, সকল বিপদ কাটিয়া যাইবে। সকল দোষ বরের পিতার খাড়ে চাপাইলে চলিবে না। পণ গ্রহণ যদি অন্যায় হয় পণ প্রদান অন্যায় হইবে না কেন? উৎকোচ দান ও গ্রহণ উভয়ই দোষ। সকলে জাগ্রত বিবেকের অনুসরণ করুন, তাহাকে অগ্রাহ্য না করিয়া মুক্তকণ্ঠে বলুন, ঘুষ দিয়া মেয়ের বিবাহ দিব না, তাহা অন্যায়; তাহাতে আমার মেয়ের না হয় বিবাহ না হইবে। বাল্যবিবাহ ও বর-পণ, শ্রীধীরেন্দ্রনাথ চৌধুরী, সূত্র: রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পদনায় ১৩২০ বঙ্গাব্দে বা ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত প্রবাসী সচিত্র মাসিক পত্র থেকে সংগ্রহীত।