মতিউর রহমান (সাংবাদিক)

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
একটা গাছকে জানালার পাশে রাখলে তা আলোর দিকে ঝুঁকে যায়। মানুষও তেমনি ভালোর সাথে, আলোর পথে চলতে চায়—এই হলো আমাদের বিশ্বাস।

মতিউর রহমান (জন্ম: ২ জানুয়ারি, ১৯৪৬) রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার বিজয়ী প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • আজ থেকে ২৫ বছর আগের কথা। একটা নতুন কাগজের জন্য আমরা নাম খুঁজছিলাম। অনেক নামের ভিড়ে বন্ধু মফিদুল হক আর আবুল মোমেনের যৌথ প্রস্তাবিত ‘প্রথম আলো’ নামটিতে আমাদের দৃষ্টি আটকে গেল। প্রথম আলোর চরণধ্বনি যেন বেজে উঠল আমাদের মনে। অগ্রজ শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোর নামলিপিতে বসিয়ে দিলেন রশ্মিশোভিত এক লাল সূর্য।
    আমাদের জীবনে খুলে গেল এক নতুন দ্বার। প্রতিদিন সকালে আমাদের দরজায় টোকা দিতে লাগল এক নতুন সূর্য। লাখ লাখ পাঠক এই সূর্যের আলোকে ভালোবেসে গ্রহণ করলেন। আজও তা অব্যাহত আছে।
  • আসলে দেশের সরকার ও বিরোধী দলের রাজনীতিকদের সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট বা অচলাবস্থা দূর করতে হবে সংসদের ভেতরে এবং বাইরে আলোচনার মাধ্যমে। এই সংকটের সমাধান শুধু রাজপথের আন্দোলনের জয়-পরাজয়ে নিষ্পত্তি হওয়ার নয়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট যেমন রাজনীতিবিদদের নিজেদের তৈরি, তেমনি সমাধানও তাঁদেরই করতে হবে। অন্য কেউ তা করতে পারবে না। এমনকি রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদও নন। তাহলে তাঁকে বিব্রত করা কেন?
  • এইভাবে ‘যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো’—এই কথার সঙ্গে আমরা বলতে থাকি, ‘ভালোর সাথে/আলোর পথে/প্রথম আলো’। একটা গাছকে জানালার পাশে রাখলে তা আলোর দিকে ঝুঁকে যায়। মানুষও তেমনি ভালোর সাথে, আলোর পথে চলতে চায়—এই হলো আমাদের বিশ্বাস। প্রিয় পাঠক, বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী, দেশের সব ভালো কাজে আপনাদের আমরা পাশে চাই।
  • প্রথম আলোর ২৫ বছর শুধু নয়, ষাটের দশক থেকে সেই ছাত্র ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং স্বাধীনতা–পূর্ববর্তী সাংবাদিক–জীবনের শুরু থেকে কত কবি–লেখক, শিল্পী–সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক সংগঠকদের সঙ্গে যে পথ চলেছি, তার হিসাব মেলানো কঠিন। শুধু লেখালেখি আর আঁকাআঁকি নয়, ছোট–বড় নানা কাজে প্রথম আলোর শুরু থেকেও তাঁরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। সেসব মানুষের কথা মনে হলে আজ শ্রদ্ধায়–কৃতজ্ঞতায় মাথা নত হয়ে আসে।
  • বাংলাদেশের এক চরম দুঃসময়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশ্বনন্দিত শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি বা গায়কেরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন হূদয় দিয়ে। তাঁরা গলা খুলে চিত্কার করে গান করেছেন বাংলাদেশের পক্ষে। সে চিত্কারে এগিয়ে এসেছেন বিদেশিরা। বাংলাদেশকে নিয়ে বাঁধা তাঁদের সুর পৌঁছেছে বিশ্ববাসীর কাছে। দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই বন্ধুদের অনেক কিছুই আমাদের কাছে পৌঁছায়নি, আমরা জানতে পারিনি। ওভালে অনুষ্ঠিত ‘গুডবাই সামার’ কনসার্ট ছিল তেমন একটি কার্যক্রম। সেই বিদেশি গায়কদের জন্য আমাদের ভালোবাসা অমলিন থাকবে।
  • প্রথম আলোর এক অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে বসে ছিলেন দেশসেরা মানুষগুলো। তাঁদের উদ্দেশে বলেছিলাম, ‘আপনাদের সম্মিলিত আদর্শ ও লক্ষ্য যা, আমরা সেটাই অনুসরণ করব। আপনারা যে কাজ করতে বলবেন, আমরা সেটাই করব।’ সেই আদর্শ ও মূল্যবোধ ধরে রাখার চেষ্টা করে চলছি নিরন্তর। কারণ, আমরা স্বপ্ন দেখি একটি মানবিক সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার।
  • এবার করোনা মহামারিকালে পত্রিকার বিক্রি কিছুটা কমে এসেছিল। তবু যেটুকু চলেছে, এজেন্ট–হকার ভাইয়েরা ঝুঁকি নিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন বলেই। ধীরে ধীরে আবার পত্রিকা বিক্রি বেড়েছে—এ কৃতিত্বও তাঁদের। এটা আমাদের মানতেই হবে, নিজেদের সমস্ত শক্তি ও সময় তাঁরা ব্যয় করেছেন অফিস–বাসাবাড়িতে পত্রিকা পৌঁছাতে। তাঁরাই আমাদের ‘লাস্ট ম্যান’।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]