মমতাজ বেগম (ভাষা সংগ্রামী)
মমতাজ বেগম (২০ মে ১৯২৩ - ৩০ মার্চ ১৯৬৭)। ছিলেন মহান বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগ্রামী নারী। চরম বাঁধা এবং রক্ষনশীল পরিবেশের মধ্যেও নারীদের একত্রিত করে মিছিলে অংশগ্রহণ করা এবং ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে গোপণ কার্যক্রম চালানোর দায়ে পুলিশ তার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে কারাদণ্ড দেয়। এরপর তৎকালীন সরকার মমতাজ বেগমকে শর্তাধীন বন্ড সইয়ের মাধ্যমে মুক্তি দিতে চাইলেও তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কেননা মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় তাঁর পক্ষে কোনও আপস, সমঝোতা করা অসম্ভব ছিল। এই অস্বীকৃতি জন্য তাকে চাকরী খোয়াতে হয়। অন্যদিকে নিজের ধর্ম ত্যাগ করে ভালবেসে যাকে বিবাহ করেছিলেন,সেই ক্রুদ্ধ স্বামী আব্দুল মান্নাফ তাকে জেলখানাতেই তালাক দেন।
বেগম মমতাজ, একুশের হত্যাকান্ডের পর প্রথম নারী যিনি সর্বাধিক সময় ধরে কারাভোগ করেন। প্রায় দেড়বছর কারাভোগ শেষে মুক্তি পান তিনি। এরপর শিক্ষা বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। ২০১২ সালে ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি স্বরুপ বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- বাংলা ভাষা আমাদের মায়ের ভাষা। এটা ওরা বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। আমাদের মুখের ভাষা যদি উর্দু হয়, বাঙালির সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যাবে।
- ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ জনসভায় মমতাজ বেগম | দৈনিক বাংলা
- একুশে ফেব্রুয়ারির দুই তিন দিন পর অনেকেই আজিমপুর কলোনিতে গিয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনের চাঁদা তুলতে। সেই সময় অনেক মহিলা তাদের প্রিয় সোনার অলংকার যেমন আংটি, কানের দুল, গলার হারও দিয়ে দিয়েছিলেন
- ড. সেলিনা আখতার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | দৈনিক আজাদি
- বায়ান্নর ২২ ফেব্রুয়ারি আমি বেগম স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত করি। সেদিন ঢাকায় ছাত্র হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় তোলারাম কলেজে বিরাট জনসভার মাধ্যমে বাংলা ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
- আসিফ মহিউদ্দীন, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০১১ | মুক্তমনা
- ভাষা আনন্দলনের তীব্রতা সম্পর্কে বললে তখনকার রক্ষণশীল সমাজে মেয়ে-ছেলে একই ট্রাকে করে একসঙ্গে মিছিল ও বিক্ষোভ করে যেটা ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। নারায়ণগঞ্জ শহরে একদম আলোড়ন পড়ে যায়।
- আসিফ মহিউদ্দীন, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০১১ | মুক্তমনা
- প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্যে কুমিল্লা পুলিশ লাইনের পুলিশ বাহিনীর কথা উল্লেখ করা যায়। রামমালার আনসার বাহিনী ও প্রতিরোধ যুদ্ধে অবর্তীণ হয় ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে। লালমাই স্টেশনের সন্নিকটে কিছু সংখ্যক ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের কিছু লোক প্রায় ৫ দিন পর্যন্ত প্রতিরোধ যুদ্ধ করে। লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, কসবা ও আখাউড়া সর্বাধিক নারী নির্যাতন হয়। আমার কসবাস্থ বাসস্থান বোমাবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে পাক সামরিক জান্তা বিনষ্ট করে।
মমতাজ বেগম সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- "জন্মসূত্রে বাংলাদেশী না হয়েও মমতাজ বেগম বাংলা ভাষার জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন তা আর কেউ করেনি। ভাষার প্রশ্নে সব কিছু ছেড়ে দিতে যিনি কুণ্ঠাবোধ করেননি, বরং সহাস্যে সকল বিষাদ আকুণ্ঠে পান করেছেন। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর পরিবার-পরিজন কেউ না থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনও ভেঙে পড়েননি, উল্টো এ বঙ্গের সকলকেই তিনি পরিবার মন করে তাদের জন্য আজীবন শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে গিয়েছেন।"
- রেজওয়ান শাকিল, ১০ই এপ্রিল, ২০২০ | roar media
- সে একাধারে মমতাময়ী মা, দরদী বোন, যত্নশীল স্ত্রী, পিপাসু প্রেমিকা আবার অন্যেিক ায়িত্বশীল কর্মজীবী, শ্রমজীবী, ব্যবসায়ী; কখনো কখনো এই নারীই আবার যোদ্ধা, বীর সৈনিক।
- শান্তা ফারজানা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | FnS
- “মমতাজ বেগমের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে জানা যায়: স্থানীয় পুলিশ নারায়ণগঞ্জের মর্গান বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষয়িত্রী মিসেস মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে মহকুমা হাকিমের আদালতে হাজির করে। সংবাদ পেয়ে একদল ছাত্র ও নাগরিক আদালতে হাজির হয় এবং বিনা শর্তে শিক্ষয়িত্রীর মুক্তি দাবি করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। মহকুমা হাকিম ইমতিয়াজী তখন বাইরে এসে ছাত্রদের বলেন, শিক্ষয়িত্রীকে স্কুলের তহবিল আত্মসাতের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে তার গ্রেপ্তারের কোনোরূপ সম্পর্ক নাই। কিন্তু জনতা তা বিশ্বাস না করে বলতে থাকে, মিসেস মমতাজ বেগম নারায়ণগঞ্জে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রধান কর্মী ছিলেন বলেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
- দৈনিক আজাদ পত্রিকা, ১ মার্চ ১৯৫২ | দৈনিক বাংলা
- "ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে স্বামী সংসার হারিয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন, নানারকম কুৎসা ও গঞ্জনা সহ্য করেছেন। নিজের জীবন, সংসার বিপন্ন করেছেন কিন্তু ভাষা আন্দোলনের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি।"
- ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ঢাকা টাইমস
- "ভাষা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকায় যে শীর্ষব্যাক্তির নাম সর্বাগ্রে থাকা দরকা র তাঁর বিষয়ে বিশেষ কিছুই বলা হয়না, এমনকি অনেক আলোচনায় যাঁর নাম কোন উল্লেখই থাকেনা তিনি হলেন মমতাজ বেগম।"
- ভাষা আন্দোলন গবের্ষক ও লেখক বদরুদ্দিন উমর | নারায়ণগঞ্জ টাইমস
- "অধুনা পথে-ঘাটে অগ্নিকন্যা দাবী ভূষিত বহু নেত্রীর নাম শোনা যায়: কিন্তু তারা কি কেউ মিসেস মমতাজের ন্যায় অগ্নি অতিক্রম করে জনতার চেতনায় স্বামী ত্যাগ ও কর্মোদ্যম দ্বারা এবং জানমাল ইজ্জতের পূর্ণঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনের আগুন ছড়াতে সক্ষম হয়েছিল? সরকার মমতাজ বেগমের এ সাংগঠনিক শক্তি লক্ষ্য করেছিল।"
- সৈনিক অলি আহাদ | নারায়ণগঞ্জ টাইমস
- "এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। অবিস্মরণীয় মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মমতাজ বেগম। শুধু যে ছাত্রী-শিক্ষিকা যোগ দিয়েছিলেন তা নয় বহু গৃহবধূরা এই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। আমার মেজবুবু হাসিনা রহমানও যোগ দিয়েছিলেন। তার হাতে ছিল আমার আঁকা কার্টুন পোস্টার।"
- ভাষা সংগ্রামী ও চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার | newsg24
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]