মহাকাশ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

মহাকাশ বা মহাশূন্য বলতে পৃথিবীর বাইরে অবস্থিত এবং খ-বস্তুসমূহের মধ্যে প্রসারিত স্থানকে বোঝায়। মহাকাশ সম্পূর্ণরূপে ফাঁকা একটি শূন্যস্থান নয়। এটিতে খুবই কম ঘনত্বের কণা থাকে যাদের সিংহভাগই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের প্লাজমা দিয়ে গঠিত। এছাড়াও মহাকাশে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ, চৌম্বক ক্ষেত্রসমূহ, নিউট্রিনো, মহাজাগতিক ধূলি ও মহাজাগতিক রশ্মিসমূহ বিদ্যমান।

পৃথিবীর পৃষ্ঠ এবং বাইরের মহাকাশের মধ্যে ইন্টারফেস।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • তোমরা হয়ত ভাবিতেছ, মহাকাশে আবার এরকম ঠোকাঠুকি হইবে কি রকমে! কিন্তু আকাশে বড় জিনিসের অভাব নাই। যে সব আলোহীন লক্ষ লক্ষ ঠাণ্ডা নক্ষত্র মরিয়া গিয়া ভূতের মত আকাশের অন্ধকারে বেড়াইতেছে, তাহাদের কথা মনে কর। তাহাদের সব গিয়াছে, কেবল গতিটুকুই আছে। কাজেই ভয়ানক বেগে ইহারা যখন পরস্পরকে ধাক্কা দেয়, তখন কি কাণ্ড হয় ভাবিয়া দেখ দেখি। দু’খানা রেলের গাড়ীতে ঠোকাঠুকি হইলে কি হয়, তোমরা শুন নাই কি?
    • জগদানন্দ রায় ,গ্রহ-নক্ষত্র ,১৯১৫ (পৃ. ২১৮)
  • কিন্তু চাঁদে ত একটুও বাতাস নাই এবং জলের বাষ্পও নাই। কাজেই সূর্য্যের আলোর সঙ্গে যে তাপ চাঁদের উপরে আসিয়া পড়ে, নিমেষের মধ্যে তাহা চাঁদ ছাড়িয়া আবার মহাকাশের দিকে ছুটিয়া যায়। কাজেই সকল সময়ে মহাশূন্যের মতই চাঁদ ঠাণ্ডা থাকে। দিনের তাপে চাঁদ যদি এত ঠাণ্ডা থাকে, তাহা হইলে উহার যে আধ্‌খানায় পনেরো দিন ধরিয়া রাত্রি থাকে, তাহা যে আরো ঠাণ্ডা হইবে, তোমরা ইহা অনায়াসে বুঝিতে পারিতেছ।
    • জগদানন্দ রায় ,গ্রহ-নক্ষত্র ,১৯১৫ (পৃ.৯০)
  • মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে

আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে॥ তুমি আছ, বিশ্বনাথ, অসীম রহস্যমাঝে নীরবে একাকী আপন মহিমানিলয়ে॥ অনন্ত এ দেশকালে, অগণ্য এ দীপ্ত লোকে, তুমি আছ মোরে চাহি— আমি চাহি তোমা-পানে। স্তব্ধ সর্ব কোলাহল, শান্তিমগ্ন চরাচর— এক তুমি, তোমা-মাঝে আমি একা নির্ভয়ে॥

    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,গীতবিতান ,১৯৯৩ (পৃ. ৮৪৬)
  • চিত্তের মহাকাশ স্থূল আসক্তির দ্বারা জমাট হয়ে না গেলে তবেই সেই সৃষ্টির কাজ সহজ হয়। দীপশিখাকে দুই হাতে আঁকড়ে ধরে যে মাতাল বেশি করে পেতে চায়, সে নিজেও পোড়ে, আলোটিকেও নিবিয়ে দেয়।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি ,১৯৮৬ (পৃ.৮৭)
  • চাঁদে বাতাস ছিল কিনা জানি না, যদি ছিলই ভাবিয়া লওয়া যায় তাহা হইলে উহাও এক একটু করিয়া চাঁদকে ছাড়িয়া মহাকাশের দিকে পলাইতে আরম্ভ করিয়াছিল।চাঁদের যেমন দেহখানি ছোট, তাহার টানও সেই রকম অল্প। বাতাসের মত চঞ্চল জিনিসকে সে টানিয়া রাখিতে পারিবে কেন?
    • জগদানন্দ রায় ,গ্রহ-নক্ষত্র ,১৯১৫ (পৃ. ৯০)
  • অথচ, বুদ্ধির এই কৃশতা নির্জীবতা যে আমাদের প্রকৃতিগত নয় তার বর্তমান প্রমাণ: জগদীশ বসু, প্রফুল্ল রায়, ব্রজেন্দ্র শীল। আমাদের শিক্ষার একান্ত দীনতা ও পরবশতা সত্ত্বেও ইঁহাদের বুদ্ধি ও বিদ্যা বিশ্বজ্ঞানের মহাকাশে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইয়াছে। আর, অতীত কালের একটা মস্ত প্রমাণ এই যে, আমাদের প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র নানা শাখায় প্রশাখায়, নানা পরীক্ষায় ও উদ্ভাবনায় বিচিত্র বৃহৎ ও প্রাণবান হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু পরের ইস্কুলেশেখা চিকিৎসাবিদ্যায় আজ আমাদের এত ক্ষীণতা ও ভীরুতা কেন!
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,শিক্ষা ,১৯৬০ (পৃ. ২১৯)
  • আকাশের এই মূর্ত্তি কি তোমরা কখনো দেখ নাই? যদি ভাল করিয়া না দেখিয়া থাক,—যে রাত্রিতে আকাশে চাঁদ থাকিবে না, কুয়াসা ধোঁয়া মেঘ কিছুই থাকিবে না,—তখন একবার আকাশখানিকে দেখিয়া লইয়ো। এবং সেই সময়ে মনে মনে ভাবিয়ো, এই যে অসংখ্য নক্ষত্র আকাশের গায়ে রহিয়াছে, তাহারা আলোর বিন্দু নয়,—প্রত্যেকেই এক একটি মহাসূর্য্য; আমাদের সূর্য্যের চেয়ে কেহ কেহ শতগুণ বড় এবং শত শত গুণ বেশি তাপ ও আলো মহাকাশে ছড়ায়!
    • জগদানন্দ রায় ,গ্রহ-নক্ষত্র ,১৯১৫ (পৃ. ২০০)
  • আমরা আমাদের অন্তরের মধ্যে দুইটা অংশের অস্তিত্ব অনুভব করিতে পারি। একটা অংশ আমার নিজত্ব, আর-একটা অংশ আমার মানবত্ব। আমার ঘরটা যদি সচেতন হইত তবে সে নিজের ভিতরকার খণ্ডাকাশ ও তাহারই সহিত পরিব্যাপ্ত মহাকাশ এই দুটাকে ধ্যানের দ্বারা উপলদ্ধি করিতে পারিত। আমাদের ভিতরকার নিজত্ব ও মানবত্ব সেইপ্রকার। যদি দুয়ের মধ্যে দুর্ভেদ্য দেয়াল তোলা থাকে তবে আত্মা অন্ধকূপের মধ্যে বাস করে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,সাহিত্য ,১৯৫৮ (পৃ.২৬)
  • জর্ম্মান্ পণ্ডিত কাণ্ট সৃষ্টিতত্ত্বের প্রসঙ্গে আভাস দিয়াছিলেন, এই যে বুধ বৃহস্পতি মঙ্গল, প্রভৃতি গ্রহ পরিবৃত হইয়া সূর্য্য মহাকাশে বিরাজ করিতেছে তাহা কোন জ্বলন্ত বাষ্পাকার নীহারিকা-রাশি হইতেই উৎপন্ন। ফরাসী গণিতবিৎ লাপ্‌লস্ (Laplace) সাহেব কাণ্টের ঐকথারই সমর্থন করিয়া তাঁহার নীহারিকাবাদের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন।
    • জগদানন্দ রায় ,প্রাকৃতিকী ,১৯১৪ (পৃ. ২৫৮)
  • তোমাদিগকে আগেই বলিয়াছি, এই মহাকাশটি নিতান্ত ছোট জায়গা নয়, তাই তাহাতে যে-সব গ্রহ-নক্ষত্র বাস করে তাহারা খুবই দূরে দূরে থাকে। এই কারণে দু-মাইল দশ মাইল লইয়া ইহাদের দূরত্বের হিসাব করা যায় না, কোটি কোটি লক্ষ লক্ষ মাইল লইয়া হিসাবে বসিতে হয়। সেই হিসাবে শুক্রকে পৃথিবীর কাছের বস্তুই বলিতে হয়।
    • জগদানন্দ রায় ,গ্রহ-নক্ষত্র ,১৯১৫ (পৃ. ১০৫)
  • এই ঘুরপাক-খেলা হইতে বুঝা যাইতেছে যে, তুমি স্থির আছ, ধরণীই ঘুরিতেছে। পণ্ডিতেরা বলেন, পৃথিবীকে লইয়া আমাদের সূর্য্য মহাকাশে এই রকম একটা ঘুরপাক খেলা করে। সূর্য্য তোমারি মত আকাশে স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া থাকে এবং আমাদের পৃথিবী ধরণীর মত সূর্য্যের চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়ায়। কেবল ঘুরিয়া বেড়ানো নয়, ধরণী যেমন নিজে ঘুরপাক খাইতে খাইতে তোমার চারিদিকে ঘুরিয়াছিল, আমাদের পৃথিবীও ঠিক সেই রকমেই নিজে ঘুরপাক খাইতে খাইতে সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করে।
    • জগদানন্দ রায় ,গ্রহ-নক্ষত্র ,১৯১৫ (পৃ. ৭)

মহাকাশ সম্পর্কে উক্তি[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]