লীলা মজুমদার
অবয়ব
লীলা মজুমদার (২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯০৮ – ৫ এপ্রিল ২০০৭) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখিকা। তিনি কলকাতার রায় পরিবারের প্রমদারঞ্জন রায় ও সুরমাদেবীর সন্তান (বিবাহপূর্ব নাম লীলা রায়)
উক্তি
[সম্পাদনা]- বুকের মধ্যে খানিকটা জায়গা ফাঁকা হয়ে যায়, ফোঁপরা হয়ে যায়, দুনিয়াতে হরেক রকমের ভালো জিনিস আছে, কিন্তু কিচ্ছু দিয়েই আর সে ফাঁকা ভরানো যায় না, বোগিদাদা; ঘর ছেড়ে, ঘরের মানুষ ছেড়ে তাই বেরিয়ে পরতে হয়।
- হলদে পাখির পালক
- তোমাদের সঙ্গে আমাদের এই তফাত যে আমরা যা দেখি তাই মেনে নিই। অত 'কি করে হলো' জানতে চাই না। কিছুই মানতে চাও না, এই হলো মুশকিল। আমি একবার খোয়াইয়ের মধ্যে ঘোড়ার কংকাল পেয়েছিলাম, তাও বোধহয় বিশ্বাস করবে না?”
- হলদে পাখির পালক
- আমাদের বাড়িতেও যারা কাজকাম করত, তারা মাঝে মাঝে সরল মনে বেশ মজার কথা বলত। একবার দেখা গেল খৃশ্চান বেয়ারা খৃশ্চান রাঁধুনের হাতে খেতে রাজি নয়। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল, ‘সে কি করে খাব ? ওর যে ছােট জাত।
আমার বাবা অবাক হলেন, “তােমরা না খৃশ্চান? বেয়ারা বলল, ‘খৃশ্চান হয়েছি বলেই কি বাপ-পিতেমাে’র ধম্ম ছাড়তে হবে?”- খেরোর খাতা
- নিমাইখুড়াে আমাকে দেখে খুশি হয়ে ওই বাক্স ভরে কত হিরেমোতি দিয়েছিলো, আর সে তোরা কোথায় হারিয়ে ফেললি৷’
তাই না শুনে যারা খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে বসে পড়েছিল, তারা আবার উঠে খুঁজতে শুরু করে দিল। শুনেছি তিনদিন তিনরাত ধরে মামাবাড়িসুদ্ধ কেউ খায়ওনি ঘুমােয়ওনি। বাগান পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলেছিল। যাদের মধ্যে বিষম ভালোবাসা ছিল তারাও পরস্পরকে সন্দেহ করতে লেগেছিল।”- পদিপিসির বর্মিবাক্স
- সুন্দর জিনিস চেনো না? সাদা চোখে কালো কুচ্ছিত, নকল আলোয় চমৎকার।”
- হলদে পাখির পালক
- জানালার চাটাইয়ে, দোরের দুই পাশে আমার মা নিজের হাতে ফুল লতাপাতা মাছ শাঁখ এসব এঁকে রাখে। সে দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, বোগিদাদা, মনে হয় মনের পাখি ডানা ঝাপটানি বন্ধ করে বাসায় এসে বসুক।”
- হলদে পাখির পালক
- কিসের গাছ হয় আর কিসের হয় না তার তুমিই বা কি জানো বোগিদাদা? যারই বুকের মধ্যে শেকড়ের কলি আছে তারই গাছ হয়।”
- হলদে পাখির পালক
- দুঃখ কি আর চিরকালের মত ঘোচে, বোগিদাদা? সমুদ্রের ঢেউয়ের মত বারবার ফিরে আসে।”
- হলদে পাখির পালক
- চোখ ইজ জ্বলজলিং!”
- পদিপিসির বর্মিবাক্স
- সব পক্ষীরাজের কি ডানা গজায় ভেবেছ নাকি? দেখছ না ওর কাঁধের উপরকার হাড় কেমন উঁচু হয়ে রয়েছে? ওর যে ডানার কুঁড়ি রয়েছে, বোগিদাদা। ডানার কুঁড়ি থাকলেও সকলের
ডানা গজায় না, গায়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে থাকে, একটু খানি জিরুতে দেয় না, সারাটা জীবন জ্বালিয়ে খায়।”
- হলদে পাখির পালক
- জন্তুজানোয়ার কে ভালবাসা চারটি খানি কথা নয় দিদি। একটা কুকুর কী একটা বেড়াল ঘরে বেঁধে রেখে তাকে আদর করলেই কি আর ভালবাসা হলো?”
- হলদে পাখির পালক
- বাতাস দিলে তোমাদের বাঁশবনের শিরশির সরসর শব্দ শুনেছ, দিদি? বাতাস থামলে কোথায় থাকে সেই শব্দ?”
- হলদে পাখির পালক
- দিদিমা বলেছেন খারাপ লোকেরা নেশা করে।"
- তা বলতে পারো তোমাদের ইচ্ছা হলে, তবে কি জানো, খারাপ লোকেরা তো ভাতও খায়।”
- হলদে পাখির পালক
- একদিন একজনের টেবিল থেকে কাচের কাগজ-চাপা সরে যাওয়া খুব জরুরি কাগজপত্র পাখার হাওয়ায় ছােটখাটো একটা ঘূর্ণি তুলে, ঘরময় চক্রাকারে ঘুরতে লাগল। বােঝা গেল যে-কোনাে সময়ে তারা আকিয়াব যাত্রা করবে।
কর্মচারিণীরা ঘণ্টি বাজালেন, অনিমেষকে হাঁকডাক করলেন। দুঃখের বিষয় অনিমেষ অনুপস্থিত এবং জরুরি কাগজ সামলানাে ফরাশের কাজ নয়, কাজেই তারা চুপ করে বসে রইল। শেষটা আর টিকতে না পেরে, আমিই উঠে কাগজগুলাে কুড়িয়ে আবার চাপা দিয়ে রাখলাম।
কর্মচারিণীরা হাঁ-হাঁ করে ছুটে এলেন, ‘ও কি করছেন দিদি, ও-তো পিওনের কাজ।’ আমি বললাম, ‘শুধু কি এই? আমাদের বাড়ির গােছলখানার নালা বন্ধ হলে, অনেক সময় তা-ও সাফ করি!”- খেরোর খাতা
- এই বলি শোন। চাটাই দিয়ে জানালা বন্ধ করে ঝাঁপিঝুঁপি হয়ে শুয়ে থাকি। শরীরটা গরমের মধ্যে আরামে শুয়ে থাকে কিন্তু মনটা ওই বাইরে বাইরে শীতের মধ্যে পাতা খসার শুকনো গন্ধের মধ্যে, ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে হু হু করে বেড়ায়।"
"কেন?" "আরে চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলে শরীরের চোখ তো বন্ধ হবেই, আর শরীরের চোখ বন্ধ হলে মনের চোখ খুলবে না?”
- হলদে পাখির পালক
- উত্তর মেরুতেও ঘুরে এসেছি। ভয় কোথায় নেই বলতে পারো?”
- হলদে পাখির পালক
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় লীলা মজুমদার সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।