শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ - ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮) একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। তিনি বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক।
উক্তি
[সম্পাদনা]- এ পৃথিবীতে এক সম্প্রদায়ের লোক আছে, তাহারা যেন খড়ের আগুন। দপ্ করিয়া জ্বলিয়া উঠিতেও পারে, আবার খপ্ করিয়া নিবিয়া যাইতেও পারে। তাহাদিগের পিছনে সদা-সর্ব্বদা একজন লোক থাকা প্রয়োজন,—সে যেন আবশ্যক অনুসারে, খড় যোগাইয়া দেয়।
- বড়দিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রথম পরিচ্ছেদ, অষ্টম সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১
- বন্ধুর যখন হবে সত্যিকারের প্ৰয়োজন তখন ভগবান আপনি পৌঁচে দেবেন তাকে দোর-গোড়ায়।
- বিপ্রদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮০
- পেটে খেলে পিঠে সইতে হয়, রাগারাগি করা মুর্খতা।
- বিপ্রদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩২
- সত্যের স্থান বুকের মধ্যে, মুখের মধ্যে নয়। কেবল মুখ দিয়ে বার হয়েছে বলেই কোন জিনিস কখনো সত্য হয়ে উঠে না। তবুও তাকেই যারা সকলের অগ্রে, সকলের ঊর্ধ্বে স্থাপন করতে চায়, তারা সত্যকে ভালবাসে বলেই করে না, তারা সত্যভাষণের দম্ভকেই ভালবাসে বলে করে।
- যাহাকে ভালবাসি, সে যদি ভালো না বাসে, এমনকি ঘৃণা ও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়, কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছি, সেইখানে ভুল ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন। পূর্বের টা ব্যাথাই দেয়, কিন্তু শেষের টা ব্যাথাও দেয়, অপমানও করে। আবার এ ব্যাথার প্রতিকার নাই, এ অপমানের নালিশ নাই। যাহার ভালবাসিবার কথা নহে, সে ভালবাসে না — ইহাতে কাহার ও কি বলিবার থাকে! তাই, এই না থাকাতে লাঞ্ছনা এত বেশী বাজে— বেদনার হেতু খুঁজিয়া মিলে না বলিয়াই ব্যাখ্যা এমন অসহ্য হইয়া পড়ে।
- যাকে তাকে গছিয়ে দেওয়ার নামই বিবাহ নয়! মনের মিল না হলে বিবাহ করাই ভুল।
- আজকের দিনে আমার সবচেয়ে মনে পড়ে এর কতটুকুতে আমার আপন দাবি, আর কত বড় এর ঋণ। ঋণ কি শুধু পূর্ববর্তী পূজনীয় সাহিত্যচার্য্যগণনের কাছেই? সংসারে যারা শুধু দিলে, পেলে না কিছুই, যারা বঞ্চিত, যারা দুর্বল, উৎপীড়িত, মানুষ হয়েও মানুষের চোখের জলের কখনো হিসেব নিলে না, নিরুপায় দুঃখময় জীবনে যারা কোনওদিন ভেবেই পেলে না, সমস্ত থেকেও কেন তাদের কিছুতেই অধিকার নেই, তাদের কাছেও কি ঋণ আমার কম? তাদের বেদনাই দিলে আমার মুখ খুলে, এরাই পাঠালে আমাকে মানুষের কাছে মানুষের নালিশ জানাতে। —৫৭তম জন্মদিনে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষণ
- যে কাল আজও আসেনি, সেই অনাগত ভবিষ্যতে আমার লেখার মূল্য থাকবে, কি থাকবে না, সে আমার চিন্তার অতীত। আমার বর্তমানের সত্য উপলব্ধি যদি ভবিষ্যতের সত্য উপলব্ধির সঙ্গে এক হয়ে মিলতে না পারে, পথ তাকে তো ছাড়তেই হবে। তার আয়ুষ্কাল যদি শেষ হয়ে যায়, সে শুধু এর জন্যই যাবে যে, আরো বৃহৎ, আরো সুন্দর আরো পরিপূর্ণ সাহিত্যের সৃষ্টিকার্যে তার কঙ্কালের প্রয়োজন হয়েছে। ক্ষোভ না করে বরঞ্চ এই প্রার্থনাই জানাবো যে, আমাদের দেশে আমার ভাষায় এত বড় সাহিত্যই জন্ম লাভ করুক যার তুলনায় আমার লেখা যেন একদিন অকিঞ্চিৎকর হয়ে যেতে পারে।
- সাহিত্যের নানা কাজের মধ্যে একটা কাজ হইতেছে জাতিকে গঠন করা, সকল দিক দিয়া তাহাকে উন্নত করা। Idea পশ্চিমবঙ্গের কি উত্তরের, ইহা বড় কথা নয়, স্বদেশের কি বিদেশের তাহাও বড় কথা নয়, বড় কথা ইহা ভাষার ও জাতির কল্যাণ কর কিনা।
- সত্য আর সাহিত্য আলাদা। সত্য সাহিত্যের বনেদ, কিন্তু সেইটাই সব নয়। সাহিত্যে একটা শিল্প- যেমন করলে সাজালে মানুষের মনে সেটা একটা দাগ ফেলতে পারে, যা অনেকদিন আকে। — লাহোরের ভাষণ
- মানুষ যখন সাহিত্যরচনায় নিবিষ্টচিত্ত সে ঠিক হিন্দুও নয়, মুসলমানও নয়, তখন সে তার সর্ব্বজন পরিচিত, ‘আমি’-টাকে বহু দূরে অতিক্রম করে যায়, নইলে তার সাহিত্য সাধনা ব্যর্থ হয়।
- সহজ বুদ্ধিই দুনিয়ায় সবচেয়ে অসহজ।
- লজ্জা নারীর ভূষণ, কিন্তু দুর্বলতা নয়।
- গৃহদাহ
নারীর আত্মমর্যাদা ও শক্তি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি।
- জীবনে অনেক কিছু হারাতে হয়, তবেই মানুষ অনেক কিছু পায়।
- বিন্দুর ছেলে (ছোটগল্প)
আত্মত্যাগ ও অভিজ্ঞতার গুরুত্ব।
- মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্ম—মানবতা।
- পল্লীসমাজ
ধর্ম ও মানবিকতার মধ্যে পার্থক্য ও মানবতাকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে তুলে ধরা।
- যে ভালোবাসে সে কখনো স্বার্থপর হতে পারে না।
- চরিত্রহীন
নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রকৃতি।
- ভালোবাসা কোনো বন্ধনে বাঁধা যায় না, ভালোবাসা স্বাধীনতা চায়।
- দত্তা
প্রেমের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্বের মর্যাদা নিয়ে বক্তব্য।
- যাহাকে ভালোবাসি সে যদি ভালো না বাসে,
এমনকি ঘৃণাও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়! কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করেছি, সেইখানে ভুল ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন। পূর্বের টা ব্যাথা দেয়। কিন্তু শেষের টা ব্যাথাও দেয়, অপমান ও করে।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন)
- নিজের অট্টালিকায়, তাহার শয়নকক্ষে, বড়দিদির কোলে মাথা রাখিয়া সুরেন্দ্রনাথ শুইয়া আছে, পা – দুটি শান্তি কোলে করিয়া অশ্রুজলে ধুইয়া দিতেছে।
পাবনায় যতগুলি ডাক্তার -কবিরাজ সমবেত চেষ্টা ও পরিশ্রমেও রক্ত বন্ধ করিতে পারিতেছে না। পাঁচ বছরের পূর্বেকার সেই আঘাত রক্ত বমন করিতেছে।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (বড়দিদি)
- মনের দুঃখ দেহের দুঃখের চেয়ে অনেক বেশি কষ্টদায়ক, কারণ শরীরের কষ্ট নিরাময়ের জন্য ওষুধ আছে, কিন্তু মনের কষ্টের নিরাময় শুধুমাত্র ভালোবাসা এবং সহমর্মিতা।
- চরিত্রহীন
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]

