বিষয়বস্তুতে চলুন

সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার ( ১৮৯১ - ১৭ অক্টোবর, ১৯৫৪) প্রাক-স্বাধীনতার সময় বাংলায় তথা ভারতবর্ষের একজন নির্ভীক সাংবাদিক ও লেখক। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথমদিকের সম্পাদক ছিলেন তিনি। তারই সময় বাংলা সাহিত্য পত্রিকা দেশ প্রথম প্রকাশিত হয়। যৌবনে তিনি আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের সাহচর্য লাভ করেন। পরে কলকাতায় এসে কিছুদিন বেলুড় মঠে যাতায়াত করে শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষা লাভ করেন। এই সময়ে স্বামী সারদানন্দের ইচ্ছানুসারে স্বামী বিবেকানন্দর জীবনচরিত লেখেন। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে পরিচিত হন, সান্নিধ্যে এসে দেশবন্ধু সম্পাদিত "নারায়ণ " পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজে ব্রতী হন। তাঁর প্রধান সাহিত্যকর্মগুলি হলো- বিবেকানন্দ চরিত, আমার দেখা রাশিয়া, স্ট্যালিন, স্বৈরিণী, জওহরলালের আত্মচরিত প্রভৃতি।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • জনসাধারণের সৃজনীশক্তির উপর অবিশ্বাস (তাহাদের বুদ্ধি যথোচিত বিকশিত হয় নাই এই অছিলায়) মারাত্মক। যদি তাহাদিগকে উপযুক্তভাবে শিক্ষা দেওয়া যায়, তাহা হইলে তাহারা নিজেদের চালিত করার সঙ্গে সঙ্গে নেতাদেরও পরিচালিত করিতে পারিবে। জনসাধারণের উপর নেতৃত্বের আভিজাত্য প্রতিষ্ঠা চলিবে না। কেননা, জনসাধারণ যেমন পুরাতন ব্যবস্থা ধ্বংস করিয়াছে, তেমনি নূতনকেও গঠন করিবে। জনসাধারণের সহিত ধাত্রী বা স্কুলমাষ্টারের মত ব্যবহার করিও না। কেননা আমাদের পুঁথি-পুস্তক হইতে তাহারা যতটা শিক্ষালাভ করে তাহাদের নিকট হইতে আমরা তাহাপেক্ষা অধিকতর শিক্ষা লাভ করি। অতএব জনসাধারণের সহিত একত্র হইয়াই আমরা প্রকৃত শাসনতন্ত্র গঠন করিতে পারিব।
    • ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা-১০১
  • গ্রামের বাংলো থেকে রোজ তাসকেণ্ট সহরে দু’বার যাতায়াত করছি। কিণ্ডারগার্টেন, ম্যুজিয়ম, রাষ্ট্রের বৃহৎ গ্রন্থাগার, পাঠভবন দেখে মনে হচ্ছে এ এশিয়ার অনগ্রসর দেশ নয়, আধুনিক বিজ্ঞানের সমৃদ্ধি এর সর্বাঙ্গে ঝলমল করছে। এই বৃহৎ সহরের চারদিকে বহু শিল্প কেন্দ্র রয়েছে। তুলোর দেশ বলে, কয়েকটি কাপড়ের কল আছে। একটি বৃহৎ কাপড়ের কল দেখলাম, নাম “টেক্সটাইল কম্বাইন”। বোম্বাই বা আমেদাবাদের আট দশটা কারখানা একত্র করলেও এর সমান হবে না। সাদা রঙ্গীন এবং নক্সাদার ছিট তৈরী হচ্ছে। সমস্ত মধ্য এশিয়ার কাপড়ের চাহিদা এখান থেকেই জোগান দেওয়া হয়।
    • আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৩
  • পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার এই অভূতপূর্ব্ব সাফল্যে রাশিয়ার প্রধান সমস্যা কৃষক ও কৃষিকার্য্যের সমস্যা সম্পূর্ণরূপে সমাধান হইয়াছিল একথা বলা যায় না। শ্রমিক-সমস্যা ও কৃষক-সমস্যা এক বস্তু নহে। বিপ্লবের পর সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠন, রক্ষণশীল ও আত্মকেন্দ্রিক কৃষক সমাজের নিকট হইতে প্রবল বাধা পাইতে লাগিল।
    • ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা-১১৩
  • একজন বলে উঠলেন, সমস্ত ধনতন্ত্রী জগতের বিরুদ্ধতায় বেষ্টিত হয়ে যে বৈপ্লবিক আবেগে এরা সমাজতন্ত্র থেকে কমিউনিজমের পথে যাত্রা করেছে তা যখন সিদ্ধিলাভ করবে তখন এই বৈপ্লবিক আবেগ শিথিল হয়ে যাবে। তারপর আজকের এই নিবিড় ঐক্য যাবে ভেঙ্গে আবার শ্রেণীভেদ সমাজে মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠ্‌বে।
    • আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭১
  • রাশিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিপর্য্যস্ত, সাম্রাজ্যবাদী মহাযুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সমাজব্যবস্থা ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে; বিপ্লববিরোধী দলগুলি অসন্তোষকে নূতন উপায়ে জাগাইয়া তুলিবার জন্য গোপন আন্দোলনে রত; দুর্ভিক্ষ তাহার করাল ছায়া বিস্তার করিতেছে।
    • ষ্ট্যালিন- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা ৬২
  • আমাদের দেশে হলিউডের নকলে চলচ্চিত্র-শিল্পের দিনে-দিনে যে কত অধঃপতন হচ্ছে, তা নিয়ে বিলাপ করাও নিষ্ফল। আমি রাষ্ট্রের সাহায্যের কথা বলেছি, কিন্তু এখানে সিনেমা নাটকের ওপর রাষ্ট্র বা কমিউনিস্ট পার্টির দরদ আছে, খবরদারী নেই। চলচ্চিত্র এবং অভিনয়ের গল্প ও নাটক নির্বাচন করেন লেখক ও শিল্পীসঙ্ঘ। এঁদের ইউনিয়ন থেকেই এগুলো সাধারণের সম্মুখে উপস্থিত করা হয়, লোকে পয়সা দিয়ে দেখে এবং যে আয় হয়, তা থেকে শিল্পীরা মজুরী পান এবং তৈরী ও পরিচালনার খরচাও উঠে আসে।
    • আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫-২৬
  • সাম্যবাদ যে বিপ্লবে রূপান্তরিত হইয়া প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে ইহা লেনিনের প্রতিভার এক অপূর্ব্ব দান। অবশ্য তিনি পূর্ব্ব-নির্দ্দিষ্ট কোন প্রণালীবদ্ধ কর্ম্মপদ্ধতি বলশেভিকদের গ্রহণ করিতে অনুরোধ করেন নাই। দলকে যন্ত্রবং পরিচালনা করিতে তিনি কখনই প্রয়াসী হন নাই। তবে রাজনীতিক্ষেত্রে তথাকথিত শিথিল উদারনীতি সযত্নে পরিহার করিয়া তিনি অবস্থানুযায়ী ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন।
    • ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা-২৩
  • ভোজন আরম্ভ হ’ল। বারম্বার ‘স্বাস্থ্যপান’ এবং পানপাত্র এক চুমুকে নিঃশেষ করতে হবে। এখানে ভোজসভা এক বিরাট ব্যাপার, সন্ধ্যায় আরম্ভ হয়ে শেষরাত্রি পর্যন্ত পান ভোজন নৃত্য গীত বিরামহীন ভাবে চলে। গল্প শুনলাম, কোন গ্রামে এক ‘তামাদা’ তিন দিন তিন রাত সমানে ভোজসভায় নৃত্য গীত চালিয়েছিলেন। আমাদের ‘তামাদা’ এতটা নিষ্ঠুর না হলেও সহজে রেহাই দিলেন না; রাত্রি এগারটায় নিয়ে গেলেন পর্বতচূড়ার ওপরে এক সুরম্য প্রমোদ নিকেতনে।
    • আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা-১১৪
  • ইউরোপের ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের অসামঞ্জস্য ও স্ববিরোধিতা, সাম্রাজ্যভোগী ও সাম্রাজ্যলোভীর সংগ্রামকে আসন্ন করিয়া তুলিল। বিভিন্ন রাষ্ট্র সঙ্ঘবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়া যে বৈপ্লবিক গণশক্তি আন্তর্জাতিক মহারাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিতেছিল— নেতাদের দুর্ব্বলতায় সে স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেল। জাতির বিরুদ্ধে জাতির জিঘাংসাপ্রবৃত্তি রণোন্মাদনায় রক্তপিপাসু হইয়া উঠিল।
    • ষ্ট্যালিন- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ,পৃষ্ঠা ৪৬

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]