সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড
সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড (সাগর-রুনি হত্যা মামলা নামেও পরিচিত) হল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, যেখানে প্রখ্যাত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি তাদের পেশাগত দৃঢ় কর্মকাণ্ডের কারণে ঢাকায় নিজ বাসভবনে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কর্তৃক উভয়েই ছুরিকাঘাতে নিহত হন। মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে এবং ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে যে দু'জন ব্যক্তি হত্যার সাথে জড়িত থাকতে পারে। এই দম্পতির হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশে উচ্চ-স্তরের রাজনৈতিক মনোযোগ ও গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলে এবং সরোয়ার জার্মানিতে থেকে ডয়চে ভেলের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জার্মানির আগ্রহও প্রকাশ পায়। ফলে মামলাটি নিয়ে সাংবাদিক সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংস্থাগুলিও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এই দম্পতির হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশী সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলিকেও একীভূত করে তোলে যারা একসময় বিভিন্ন দলে বিভক্ত ছিল।
উক্তি
[সম্পাদনা]- সাংবাদিকরা এখন সকলে মিলে আন্দোলন করছেন। কিন্তু, সরকারের পক্ষে তো কারো বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়।তবে ওই হত্যাকান্ডের ঘটনার যথাযথ তদন্ত হচ্ছে। ‘আজ এই সাংবাদিক-দম্পতি হত্যার ব্যাপারে সাংবাদিকরা এক হয়েছেন; কিন্তু অতীতে সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবীর বালু হত্যাকাণ্ডের পর যদি সাংবাদিকরা এভাবে নামত, তাহলে হয়তো আজ এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তাই সকলে মিলে নামেনি। আমরা ক্ষমতায় তাই সকলে মিলে নেমেছে।” “গণমাধ্যম এখন মুক্ত-স্বাধীন। স্বাধীনভাবে অনেক কথা লিখছে। আবার, অনেক অসত্য তথ্যও পরিবেশন করছে,” যেখানে সাগর-রুনি খুন হয়েছিল। সেখানে এত বেশি লোক গিয়েছিল যে অনেক আলামতই নষ্ট হয়ে গেছে। পা দিয়ে মাড়িয়ে আলামত নষ্ট করে দিয়েছে।” “এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছাড়া অন্য কেউ আগে যাবেন না। ঘরে ঢুকে আলামত নষ্ট করবেন না,” “বাচ্চাটাকে সংবাদিকরা যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তা ঠিক হয়নি। সাংবাদিকদের কাজ জিজ্ঞাসাবাদ নয়। জিজ্ঞাসাবাদ গোয়েন্দাদের কাজ।” “আপনারা এটা কীভাবে পারলেন? বাবা-মা মারা গেছে, তার ইন্টারভিউ করতে? দয়া করে শিশুটাকে রেহাই দিন,” জীবিতের সাক্ষাৎকার নেওয়ায় খুনিরা আড়ালে চলে গেছে
- শেখ হাসিনা, ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০১২ [১]
- অবশ্যই, আপনারা রাজপথে থেকে আমাদের চাপে রাখবেন। এই বিচার না হলে জাতির কাছে আমরা দায়ী থাকবো। আমি বিশ্বাস করতে পারি না, এমন একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে কীভাবে প্রহসন করা হয়।
- ১৪ আগস্ট ২০২৪, সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাগর-রুনি হত্যার বিচার গতি পাবে কিনা; জানতে চাইলে প্রশ্নের জবাবে। [২]
- সাগর রুনি হত্যাকাণ্ড খুবই বেদনাদায়ক, খুবই নির্মম এবং এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে কী পরিমাণ প্রহসন করা হয়েছে। বার বার তার প্রতিবেদনগুলা পেছানো হয়েছে। এই সাগর রুনি হত্যাকাণ্ডসহ এই ধরনের যে হত্যাকাণ্ডগুলো হয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন হয়েছে এই বিষয়গুলোর তদন্ত করতে হবে এবং সরকারের জায়গা থেকে যে ভূমিকা বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে যে ভূমিকা তা আমরা অবশ্যই পালন করব।'
- ১৮ আগস্ট ২০২৪, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে দপ্তর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের [৩]
- রুনি যে ভিডিও প্রতিবেদন করেছিল, সেই ভিডিওতে একটা সুড়ঙ্গ দেখা যায়, সেই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে রুনি হেঁটে যাচ্ছে বিশাল একটা পাইল লাইন ধরে। আর সেই পাইপ লাইনটা সামিটের ফার্নেস ওয়েলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে গ্যাস সরবাহের কাজে ব্যবহৃত হতো, বিদ্যুৎ তৈরি হতো তিতাস থেকে পাওয়া গ্যাসে, সামিটকে হাসিনা বিল দিত ফার্নেস ওয়েল থেকে তৈরি বিদ্যুৎ এর মূল্য। আর সেই ভিডিওর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে তথ্যটি ছিল, তাহলো সেই সুড়ঙ্গ পথে সেই সময়ে ভারতের দিকেও পাইপ লাইন ছিল। সেই পাইপ লাইন দিয়ে ভারতেও গ্যাস পাচার করতো, ভারতে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাগজে কলমে গ্যাস দেয়ার বহু বছর আগে থেকেই হাসিনা গ্যাস দেয়া শুরু করে। এই রিপোর্ট টাই মূলত করতে চেয়েছিলেন রুনি। তবে তখন এটিএন বাংলা এর সত্ত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান তাতে বাধা দেয় এবং তোলপাড় শুরু হয় এটিএন নিউজ অফিসের অভ্যন্তরে। রুনি তার মাছরাঙা টিভিতে কর্মরত তার স্বামী সাগরকে এই ভিডিও দেন তা প্রকাশের জন্য। এজন্যই মাহফুজুর রহমান 'রঞ্জু' কে ওইদিন রাতেই পাঠায় সাগর-রুনির বাসায়, তার ল্যাপটপ থেকে যেন যেকোনো মূল্যেই এই ভিডিও উদ্ধার করা যায়। ওইদিন রাতেই সাগর-রুনীর হত্যা হয় এবং পরদিন রঞ্জু গ্রেফতার হয়। মাহফুজুর রহমান তার প্রভাব খাটিয়ে রঞ্জুকে বের করে এবং সে বিদেশে পালিয়ে যায়। এর পিছনে হাসিনার চরম স্বার্থ ছিলো। এজন্যই তাদের এভাবে হত্যা করা হয়।
- ২০ আগস্ট ২০২৪, ইলিয়াস হোসাইন, একুশের চোখ নামক একুশে টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও সাংবাদিক, একটি ফেসবুক পোস্টে [৪]