সিরাজউদ্দৌলা (নাটক)

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

সিরাজউদ্দৌলা হলো সিকানদার আবু জাফর রচিত একটি করুণরসাত্মক নাটক। বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব মির্জা মুহম্মদ সিরাজউদ্দৌলার জীবনের উপরে ভিত্তি করে রচিত এই নাটকটিতে পলাশীর যুদ্ধে নবাবের ভূমিকা বর্ণনা করা হয়েছে। একদিকে বাংলার স্বাধীনতা হরণে ইংরেজদের প্রচেষ্টা, অপরদিকে নবাবকে সিংহাসন থেকে সরাতে নিকটাত্মীয়দের ষড়যন্ত্র— এহেন পরিস্থিতিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কীভাবে লড়াই চালিয়ে গেছেন এবং অবশেষে যুদ্ধে হেরে গিয়ে নিজের প্রাণ হারিয়েছেন— সেই বর্ণনাই উঠে এসেছে এই নাটকটিতে।

সিরাজউদ্দৌলা[সম্পাদনা]

  • নবাবের হুকুম অমান্য করা রাজদ্রোহিতার শামিল।
    • প্রথম অংকের তৃতীয় দৃশ্য।
  • আমি দেখতে চাই, আমার রাজত্বে হৃদয়হীন জালিমের বিরুদ্ধে অসহায় মজলুম কঠিনতর জালিম হয়ে উঠছে।
    • দ্বিতীয় অংকের প্রথম দৃশ্য।
  • (ঘসেটি বেগমকে ইঙ্গিত করে) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সময়ে কোন ক্ষমতাভিলাষী, স্বার্থপরায়ণ নারীর পক্ষে রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা দেশের পক্ষে অকল্যাণকর।
    • তৃতীয় অংকের প্রথম দৃশ্য।
  • (পলাশির যুদ্ধ চলাকালীন) আজ আমার ভরসা আমার সেনাবাহিনীর শক্তিতে নয়। আমার একমাত্র ভরসা আগামীকাল যুদ্ধক্ষেত্রে বাংলার স্বাধীনতা মুছে যাবার সূচনা দেখে মীরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লুৎফদের মনে যদি দেশপ্রীতি জেগে ওঠে সেই সম্ভাবনাটুকু।
    • তৃতীয় অংক দ্বিতীয় দৃশ্য।
  • ভীরু প্রতারকের দল চিরকালই পালায়। কিন্তু তাদের বীরের মনোবল ক্ষুন্ন হয় না।
    • তৃতীয় অংক চতুর্থ দৃশ্য।

ঘসেটি বেগম[সম্পাদনা]

  • (লুৎফুন্নেসাকে) সুখী ও সৌভাগ্যবতী হও এমন দোয়া করলে সেটা আমার পক্ষে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সে দোয়া করতে পারলুম না।
    • তৃতীয় অংকের প্রথম দৃশ্য।
  • যদি জানতাম বড় হয়ে সে একদিন আমার সৌভাগ্যের অন্তরায় হবে, যদি জানতাম অহরহ সে আমার দুশ্চিন্তার একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়াবে, জীবনের সমস্ত সুখ-শান্তি সে গ্রাস করবে রাহুর মতো, তাহলে দুধের শিশু সিরাজকে প্রাসাদ-চত্বরে আছড়ে মেরে ফেলতে কিছুমাত্র দ্বিধা করতাম না।
    • তৃতীয় অংকের প্রথম দৃশ্য।

মিরজাফর[সম্পাদনা]

  • আমি নিস্তব্ধ হয়েছি আগ্নেয়গিরির মতো প্রচন্ড গর্জনে ফেটে পড়বার জন্য তৈরি হচ্ছি। বুকের ভেতর আকাঙ্ক্ষার আর অধিকারের লাভা টগবগ করে ফুটে উঠছে ঘৃণা আর বিদ্বেষের অসহ্য উত্তাপে। এবার আমি আঘাত হানবই।
    • দ্বিতীয় অংকের দ্বিতীয় দৃশ্য।
  • সিরাজকে বন্দী করা হয়েছে। যথাসময়ে তার বিচার হবে। আমি আশা করি কেউ তার জন্য সহানুভূতি দেখিয়ে নিজের বিপদের টেনে আনবেন না।
    • চতুর্থ অংকের প্রথম দৃশ্য।

অন্যান্য চরিত্র[সম্পাদনা]

  • উই হ্যাভ কাম টু আর্ন মানি অ্যান্ড নট টু গেট ইনটু পলিটিক্স।
    • আমরা টাকা উপার্জন করতে এসেছি, রাজনীতিতে ঢুকতে আসিনি।
    • ওয়াটস, প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে।
  • মেজাজ বুঝে যথাসময়ে কিছু উপঢৌকনসহ হাজির হয়ে আবার একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
    • ওয়াটস, প্রথম অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে।
  • দওলত আমার কাছে ভগবানের দাদামশায়ের চেয়েও বড়। আমি দওলতের পূজারী।
    • উমিচাঁদ, প্রথম অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে।
  • আই অ্যাম শিওর নবাব ক্যান কজ নো হার্ম টু আস।
    • আমি নিশ্চিত নবাব আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
    • ক্লাইভ, দ্বিতীয় অংকের তৃতীয় দৃশ্যে।
  • এ দেশে থেকে এ দেশকে ভালবেসেছি। গুপ্তচরের কাজ করেছি দেশের স্বাধীনতার খাতিরে। সে কি বেইমানের চেয়ে খারাপ? মোনাফেকির চেয়ে খারাপ?
    • নারান সিং ওরফে রাইসুল জুহালা, তৃতীয় অংকের তৃতীয় দৃশ্যে।

সংলাপ[সম্পাদনা]

(নবাব সৈন্য দুর্গ আক্রমণ করে ইংরেজদের কোনঠাসা করার পরে)

ওয়ালি খান: এখুনি যুদ্ধ বন্ধ করুন। নবাব সৈন্যের কাছে আত্মসমর্পণ না করলে দুর্গের একটি প্রাণীকেও তারা রেহাই দেবে না।
ক্লেটন: চুপ বেইমান। কাপুরুষ বাঙালির কাছে যুদ্ধ বন্ধ হবে না।
ওয়ালি খান: ও সব কথা বলবেন না সাহেব। ইংরেজের হয়ে যুদ্ধ করছি কোম্পানির টাকার জন্যে। তা বলে বাঙালি কাপুরুষ নয়। যুদ্ধ বন্ধ না করলে নবাব সৈন্য এখুনি তার প্রমাণ দেবে।

আমিনা: সিরাজ তোমার কোনো ক্ষতি করেনি, বড় আপা।
ঘসেটি: তার নবাব হওয়াটাই তো আমার মস্ত ক্ষতি।
আমিনা: নবাবি সে কারো কাছ থেকে কেড়ে নেয়নি। ভূতপূর্ব নবাবই তাকে সিংহাসন দিয়ে গেছেন।
ঘসেটি: বৃদ্ধ নবাবকে ছলনায় ভুলিয়ে তোমরা সিংহাসন দখল করেছ।
আমিনা: আমরা?
ঘসেটি: ভাবছো যে বিস্মিত হওয়ার ভঙ্গি করলেই আমি তোমাকে বিশ্বাস করব— কেমন? তোমাকে আমি চিনি। তুমি কম সাপিনী নও।