বিষয়বস্তুতে চলুন

সুচিত্রা ভট্টাচার্য

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

সুচিত্রা ভট্টাচার্য ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি ভারতের বিহারের ভাগলপুরে মামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তার পিত্রালয় ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরে, তবে কলকাতা শহরে তার স্কুল ও কলেজ জীবন কাটে। তিনি কলকাতা শহরের যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে স্নাতক হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সময় তিনি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। বিভিন্ন স্থানে চাকরি করার পর তিনি সরকারী চাকরিতে যোগদান করেন। লেখিকা হিসেবে সম্পূ্র্ণ রূপে সময় দেওয়ার জন্য তিনি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৫ সালের ১২ই মে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে তার বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের জীবনাবসান হয়।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • একই পৃথিবীতে এরকম দুজন মানুষ থাকতেই পারে, একই ছাদের নিচে এদের স্থান হওয়া কঠিন, এক বিছানায় দুর্বিষহ। এই ধরনের নিকটতম সম্পর্কের মধ্যেই ভবিষ্যত প্রজন্মের ধ্বংসের বীজ লুকিয়ে থাকে। যে বিষয়ে ওঠা সম্পর্কের থেকে বীজের আবির্ভাব, সেই সম্পর্কের ছায়া তো বীজের উপর পড়বেই। সেই ছায়াই ফুটে ওঠে পরবর্তী প্রজন্মের অসন্তোষের মধ্যে দিয়ে।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৪২
  • যারা শাসন করে তারা যে কখন শাসিতের বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দেয়, নিজেরা জানতেও পারে না।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৪৩
  • অনেককেই ছেড়ে থাকা যায় না, তবু ছেড়ে থাকতে হয়। এক সময় বিচ্ছেদটাই অভ্যেস হয়ে যায়।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাছের মানুষ, আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৮
  • বুকের মধ্যে রাগ বিরক্তি দুঃখ জমাট বেঁধে গেলে মানুষ তা একা একা বয়ে বেড়াতে পারে, কিন্তু খুশির চাপ বড় অসহ্য। খুশিটাকে কারুর কাছে উজাড় করে না দিতে পারা পর্যন্ত কেমন যেন শান্তি হয় না।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাছের মানুষ, আনন্দ পাবলিশার্স, '৯৮
  • কিছু কিছু দৃশ্য ছবি হয়ে বুকে গেঁথে যায় চিরদিনের মত। দাঁতে দাঁত চেপে ভুলতে চাইলেও আচমকা চোখের সামনে এসে অস্তিত্বের মূল পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়ে যায়।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ৫১
  • পৃথিবীতে সবার ভাগেই বোধহয় ওরকম পৃথক পৃথক আলোর টুকরো থাকে। বাদ বাকি সবটাই স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার। ওই আলোটুকুর জন্যই তো বেঁচে থাকে মানুষ।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ৫২
  • আকাশ ছোঁয়ার নেশায় পেলে মানুষ মাটিকেই ভুলতে চায়। আর একটু বয়স হয়ে গেলে সেই মাটিই আবার টানতে শুরু করে। হেঁচকা টান।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ৬০
  • খুব আপন জিনিস না হারানো পর্যন্ত মানুষ তার মূল্য বুঝতে পারে না।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য,কাছের মানুষ, আনন্দ পাবলিশার্স, '৯৮
  • দীর্ঘদিনের অনভ্যাস নিকটতম সম্পর্কেও মরচে ধরিয়ে দেয়।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ৬৪
  • শাসন তো করে সব বাবা মা-ই। স্থানকালপাত্র ভেদে সেই শাসনের অর্থ পাল্টে যায়।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ৬৫
  • শোকের সঙ্গে সময়ের এক সূক্ষ্ম রেষারেষি আছে। তাদের মধ্যে এক চাপা লড়াই চলছে অবিরাম। এই দ্বৈরথের প্রথম দফায় শোকই জেতে, চকিত আঘাত হেনে সময়কে সে নিশ্চল করে দেয়। তারপর ধীরে ধীরে সময় বলবান হয়ে ওঠে, তার অদৃশ্য শরজালে হঠে যেতে থাকে শোক। ক্রমশ নির্জীব হয়ে পড়ে সে। তবে তাকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার শক্তি বুঝি সময়েরও নেই। এক শীতল বিষন্নতা হয়ে সে টিকে থাকে বহুকাল। অনেকটা যেন মেরুপ্রভার মতো। ক্ষীণ দীপ্তি, অথচ কী তার অপার বিস্তার।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাছের মানুষ, আনন্দ পাবলিশার্স, '৯৮
  • ভয়ংকর দুর্যোগের আঘাতে এভাবেই বোধহয় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় কেউ কেউ। আবার অনেকে দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়েই নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। বালির ঝড়ের ভয়ে আতঙ্কিত মরুভূমির ইঁদুরের মতো তারা গর্ত খুঁড়ে মাটির তলায় ঢুকে নিরাপত্তা খোঁজে না। উটের মত কষ্ট সহীষ্ণু হতে শেখে। পরিশ্রমীও।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৪২
  • গভীর অরণ্যে এক সন্ন্যাসী দস্যু রত্নাকরকে বলেছিলেন ডাকাতি তো করছো; তোমার পাপের ভাগী কে হবে? বউ? ছেলে? মেয়ে? বাবা? মা? কেউ না। রত্নাকর যাচাই করতে গিয়ে দেখেছিল সেটাই সত্যিই। মিথ্যে কথা। পাপের ভাগ সবাইকেই নিতে হয় বৈকি। মা, বাবা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১০৬
  • দিনগুলি একই রকমের বর্ণহীন, সন্ধ্যগুলো সম্মোহক। এভাবেই অনন্তকাল কেটে যেতে পারত। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। নিস্তরঙ্গ পুকুর জানতেও পারে না কথা থেকে ছোট্ট ইটের কুচি এসে শান্ত জলকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১১৬
  • ন্যায়রত্ন লেনের গাছকে টালিগঞ্জের টবে এনে পুঁতলেই কি তার চরিত্র বদলে যায়? গাছ সেই গাছই থাকে। শুধু ফুল ফল হয় না। উপড়ানো শিকড় নিয়ে শুকিয়ে মরে তাড়াতাড়ি।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১২৯
  • শৈশব যে মসলিন বুনে দেয়, বড় হয়ে তাকেই কী নিষ্ঠুরভাবে ছেঁড়ে মানুষ ! কেন ছেঁড়ে ? ছিঁড়ে কি পায় ? কথায় বলে, স্মৃতি সতত সুখের। কথাটা যে কী ভয়ঙ্কর মিথ্যে !
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাছের মানুষ, আনন্দ পাবলিশার্স, '৯৮
  • একটা ইচ্ছার সঙ্গে আরেকটা ইচ্ছা কেন যে ঠিকঠাক মিলতে চায় না! দুটো চাওয়া যদি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু করে তবে মাঝের মানুষটা শুধুই পুড়তে থাকে। এ এক অসহায় দহন।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৩৪
  • ভয়ংকর ভূমিকম্পের ইঙ্গিত প্রথম টের পায় পশুপাখি, জীবজন্তুরা। হয়তো তাদের প্রাকৃতিক অসহায়তার জন্য অথবা মানসিক বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ না হওয়ার জন্য। এই অপূর্ণতা থেকেই জন্ম নেয় এক প্রখর অনুমানশক্তি।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৪২
  • শহর জীবনের একটা মস্ত গুণ অনেক ঘটনা দিনের আলোতে ঘটলেও অপ্রকাশ্য থেকে যায় বহুদিন। তেমন আবার বড় দোষ যত গোপনেই ঘটে যাক না কেন, বিশেষ করে সেই ঘটনায় যদি কেলেঙ্কারির গন্ধ থাকে, কেউ না কেউ তার সাক্ষী থাকবেই।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৬৮
  • আধুনিক সভ্যতার নিয়ম মেনে প্রতিটি বাড়ি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে উদাসীন স্ট্রীটলাইটের মত। কখনও কখনও একটা বাতি নিভু নিভু হলে অন্যের আলো এসে পড়ে তার ওপর। সৌজন্যের। তার বেশি কিছু করা এসব পাড়ায় প্রাচীন গ্রাম্যতা বলে মনে করা হয়। কৌতূহল এখানে ভীষণ চাপা। চাকরবাহী।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ৩৭
  • শুধু একটা দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সম্পর্ককেই বিচার করা যায় না। করাটা বোকামি। প্রতিটি মানুষ কোনো এক নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে নিজের কাছেই অসহায়।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৮৩
  • বিষুব রেখা থেকে শুরু করে দুজন মানুষ যদি দুই মেরুর দিকে হাঁটতে শুরু করে, তবে তারা কোনোদিন মিললেও মিলতে পারে। কিন্তু যদি তারা পাশাপাশি দুটো রেলের লাইন ধরে হেঁটে চলে তবে তারা হাঁটতেই থাকে অনন্তকাল, মেলে না কখনই, দূরত্বও কমে না এক চুল।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৪২
  • মনের ছবি আড়াল করতে সামনে একটা চলমান ছবি তো রাখতেই হয়।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, ছেঁড়া তার।
  • মন খারাপের মুহূর্তে হঠাৎ যদি কেউ হারিয়ে যাওয়া নাম ধরে ডেকে ওঠে, মনটা যেন লহমায় ভাল হয়ে যায়। সংসারের মালিন্য, বেঁচে থাকার জটিলতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হাহুতাশ কিছুই যেন আর স্মরণে থাকে না। বুকের ভেতর ঘুমিয়ে আছে এক টাইম মেশিন, সোঁ সোঁ করে ছুটতে থাকে সে, হু হু করে কমে যায় বয়স।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাছের মানুষ, আনন্দ পাবলিশার্স, '৯৮
  • তাহলে আগে খুঁজতে হবে ক্রাইসিসটা কেন এলো, কিভাবে এল। এখন আমরা এমন একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যেখানে অর্ধেক মানুষই যা বিলিভ করে সেটা করে না। এক ধরনের হিপোক্রেসি....
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৪১৮
  • দ্যাখো গে যাও, যে ব্যাটা দিনে মার্ক্সিস্ট, রাত্রে সেই ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট-এর পেয়ালা থেকে মাল খাচ্ছে। চল্লিশ বছর আগেও, এ দৃশ্য কল্পনা করা যেত? তাদের অনড় ভ্যালুজ যদি বদলে যেতে পারে, মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ ভাঙবে না কেন? চোখের সামনে মানুষ যা দেখে, তাতেই রিয়াক্ট করে।
    • সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১১৮

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]