হাতি

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
হাতি যা দিয়ে হাতের কাজ করে, সে হচ্ছে তার নাক। সেটি যে কি আশ্চর্য জিনিস, তা তোমরা সকলেই জান। তাকে যদি হাত বলতে রাজি হও, তবে এ কথাও মানতে হবে যে, এমন আশ্চর্য হাত আর জগতে নাই। আর হাতির দাঁতের কথা ভেবে দেখ, সে জিনিসটিও কম আশ্চর্য নয়।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

হাতি একটি বৃহত্তম স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী। প্রোবোসিডিয়া (শূণ্ডধারী) বর্গের একমাত্র জীবিত বংশধর। হাতি দলবদ্ধ জন্তু। দলপতি হয় সবথেকে শক্তিশালী দাঁতাল। হাতিরা তৃণভূমিতে বসবাস করে। হাতি প্রায় সবদেশেই দেখতে পাওয়া যায়। তবে আফ্রিকার দেশগুলিতে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • হাতি যা দিয়ে হাতের কাজ করে, সে হচ্ছে তার নাক। সেটি যে কি আশ্চর্য জিনিস, তা তোমরা সকলেই জান। তাকে যদি হাত বলতে রাজি হও, তবে এ কথাও মানতে হবে যে, এমন আশ্চর্য হাত আর জগতে নাই। আর হাতির দাঁতের কথা ভেবে দেখ, সে জিনিসটিও কম আশ্চর্য নয়।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, হাতি, বিবিধ প্রবন্ধ, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৭৮
  • রাজার হাতি হাওদা পিঠে হেলেদুলে আসে—
    ‘বাপ রে!’ বলে ব্যাঙ বাবাজি গর্তে ঢোকেন ত্রাসে!
    রাজার হাতি, মেজাজ ভারি হাজার রকম চাল;
    হঠাৎ রেগে মটাং করে ভাঙলো গাছের ডাল৷
    গাছের মাথায় চড়াই পাখি অবাক হয়ে কয়—
    ‘বাস রে বাস! হাতির গায়ে এমন জোরও হয়!’
    • সুকুমার রায়, বড়াই, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৫৩
  • হাতির যদি ঠিক ময়ুরের মতো পেখম হয় তাহা হইলে কি তাহার সৌন্দর্যবৃদ্ধি হয়। আবার ময়ুরের পক্ষেও হাতির লেজ শোভা পায় না।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভদ্রতার আদর্শ, পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৬
  • মেজদা, নিরুদা, আমার পিসতুত ভাই, তাঁরও শখ ছিল ঘড়ি মেরামতের আর হাতির দাঁতের উপর কাজ করবার। একতলার ঘরে এসে তিনি হাতির দাঁতে ছবি আঁকতেন; এক দিল্লিওয়ালা আসত তাঁকে শেখাতে।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জোড়াসাঁকোর ধারে, জোড়াসাঁকোর ধারে- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৯
  • কুমারের খুব শিকারের শখ, একদিন তাঁর হাতিকে বাঘে ঘায়েল করলে। হাতির ঘা দিন-কুড়ির মধ্যে সেরে গেল, কিন্তু তার ভয় গেল না। হাতি নড়ে না, ডাঙশ মারলেও ওঠে না। কুমার সায়েবের হ‍ুকুম নিয়ে কানাই হাতিকে সের-টাক চাঙ্গায়নী খাওয়ালে। পরদিন ভোরবেলা হাতি চাঙ্গা হয়ে পিলখানা থেকে গটগট ক’রে হেঁটে চলল, জঙ্গল থেকে একটা শালগাছের রলা উপড়ে নিলে, পাতাগুলো খেয়ে ফেলে ডাণ্ডা বানালে, তার পর পাহাড়ের ধারে গিয়ে শ‍ুড়ঁ দিয়ে সেই ডাণ্ডা ধ’রে বাঘটাকে দমাদম পিটিয়ে মেরে ফেললে।
    • রাজশেখর বসু, রাজভোগ, গল্পকল্প - পরশুরাম, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৪০
  • যে দুর্বল, সবলের পক্ষে সে তেমনি ভয়ংকর, হাতির পক্ষে যেমন চোরাবালি। এই বালি বাধা দিতে পারে না বলেই সম্মুখের দিকে অগ্রসর করে না, কেবলই নীচের দিকে টেনে নেয়।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাতায়নিকের পত্র, কালান্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৪
  • মশা বললে, ‘সে আবার একটা কথা! এখুনি যাচ্ছি! দেখব হাতি বেটার কত শক্ত চামড়া!’ বলে, সে সকল দেশের সকল মশাকে ডেকে বলল, ‘তোরা আয় তো রে ভাই, দেখি হাতি বেটার কত শক্ত চামড়া।’ অমনি পীন্‌-পীন্‌-পীন্‌-পীন্‌ করে যত রাজ্যের মশা, বাপ বেটা ভাই বন্ধু মিলে হাতিকে কামড়াতে চলল। মশায় আকাশ ছেয়ে গেল, সূর্য ঢেকে গেল।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, টুনটুনি আর নাপিতের কথা, টুনটুনির বই- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- দেব সাহিত্য কুটীর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১
  • একদিন সে বনের মধ্যে গিয়ে ফিরে এসে গুরুকে বলল, “আজ একটা হাতি দেখলাম।” গুরু বললেন, “হাতিটা কিরকম?” শিষ্য বললে, “ঠিক যেন লাঙ্গলের ঈষ্‌।” গুরু ভাবলেন, ‘হাতিটাকে লাগলদণ্ডের মতো বলছে কেন? ও বোধহয় শুঁড়টাকেই ভালো করে দেখেছে। তা তো হবেই—শুঁড়টাই হল হাতির আসল বিশেষত্ব কিনা। ও শুধু হাতি দেখেছে তা নয়, হাতির মধ্যে সবচাইতে যেটা দেখবার জিনিস, সেইটাই আরো বিশেষ করে দেখেছে।’
    • সুকুমার রায়, বুদ্ধিমান শিষ্য, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৩৬
  • আজ বিশাল হাতিতে চড়িয়া ভীম যুদ্ধে নামিয়াছে। যাহার সহিত প্রথমে তাহার যুদ্ধ হইল, তাহার নাম ক্ষেমমুর্তি,তিনিও হাতির উপরে এবং অসাধারণ বীরও বটে, প্রথমে যুদ্ধ অনেকটা সমানে সমানেই চলিল;এমনকি, ক্ষেমমূর্তিই আগে নারাচের গায়ে ভীমের হাতিকে মারিয়া ফেলিলেন। ভীম সেই হাতি পড়িবার পূর্বেই তাহা হইতে লাফাইয়া পড়িয়া ক্ষেমমূর্তির হাতিকে এমনি লাথি মারিলেন যে, হাতি তাহাতে চেপ্টা হইয়া মাটির ভিতর ঢুকিয়া গেল।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, কর্ণপৰ্ব, ছেলেদের মহাভারত, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩০৩
  • হাতিমির দশা দেখ-তিমি ভাবে জলে যাই,
    হাতি বলে, “এই বেলা জঙ্গলে চল ভাই"।
    সিংহের শিং নেই, এই তার কষ্ট-
    হরিণের সাথে মিলে শিং হল পষ্ট।
    • সুকুমার রায়, খিচুড়ি, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ২২
  • গ্রামের পথে জল দাঁড়াইয়া গেছে। হাতির পা বসিয়া যায়, গাড়ির চাকা ঠেলিয়া তোলা দায় হইল। তখনো বৃষ্টির বিরাম নাই। বরযাত্রগণ ভিজিয়া, কাদা মাখিয়া, বিধি-বিড়ম্বনার প্রতিশোধ কন্যাকর্তার উপর তুলিবে বলিয়া মনে মনে স্থির করিয়া রাখিল।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ, পূর্ব-বাংলার গল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৯
  • এই মহাদেশে এশীয় হাতি আদৌ ছিল না; এই প্রজাতিটা অনেককাল পরে এসেছে। অর্থাৎ বেদখল নিয়ে কথা বলতে হলে বলতে হবে যে হাতি মানুষের বাসস্থান বেদখল করেছে।
    • মাধব গাডগিল, প্রকৃতির ভারসাম্য, প্রকৃতি বনাম মানুষঃ একটি পরিকল্পিত সংঘাত - মাধব গাডগিল, অনুবাদক- মৈত্রী দাস, প্রকাশক- ‘একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ (ফামা)’, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০২২ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২
  • হাতিরা তাকে মাথায় করে নদীতে নিয়ে যেত, শুঁড়ে করে জল ছিটিয়ে গা ধুইয়ে দিত, তারপর তাকে সেই সাপের পিঠে বসিয়ে দিত—এই তার রাজসিংহসন। দুদিকে দুই হাতি পদ্মফুলের চামর ঢোলাত, অজগর ফণা মেলে মাথায় ছাতা ধরত।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজপুরে, শকুন্তলা- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- সিগনেট প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫১-৫২
  • এখন আমরা মোটে দুরকমের হাতি দেখতে পাই, আমাদের দেশের হাতি, আর আফ্রিকার হাতি। কিন্তু সেকালে নানারকমের হাতি ছিল। কোনটার চার দাঁত, কোনোটার দুই দাঁত কোনোটার দাঁত উপরের চোয়ালে, কোনোটার দাঁত নিচের চোয়ালে; কোনোটার শুঁড় লম্বা, কোনোটার শুড় ছোট; কোনোটার রোঁয়া নেই, কোনোটা রোঁয়ায় ভরা; কোনোটার বাড়ি গরমের দেশে।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, হাতি, বিবিধ প্রবন্ধ, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৭৮
  • যুবরাজের জানুতে এক তীর, পৃষ্ঠে এক তীর এবং তাঁহার বাহন হাতির পঞ্জরে এক তীর বিদ্ধ হইল। মাহুত হত হইয়া পড়িয়া গিয়াছে। হাতি যুদ্ধক্ষেত্র ফেলিয়া উন্মাদের মতো ছুটিতে লাগিল। যুবরাজ তাহাকে ফিরাইবার অনেক চেষ্টা করিলেন, সে ফিরিল না। অবশেষে যন্ত্রণায় ও রক্তপাতে দুর্বল হইয়া যুদ্ধক্ষেত্র হইতে অনেক দূরে কর্ণফুলি নদীর তীরে হাতির পিঠ হইতে মূর্ছিত হইয়া পড়িয়া গেলেন।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মুকুট, দশম পরিচ্ছেদ, গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চতুর্থ খণ্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৯৪

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]