হেমেন্দ্রকুমার রায়
অবয়ব
হেমেন্দ্রকুমার রায় (প্রকৃত নাম: প্রসাদদাস রায়; জন্ম: ১৮ এপ্রিল ১৮৮৮, মৃত্যু: ১৮ এপ্রিল ১৯৬৩) একজন বাঙালি সাহিত্যিক এবং গীতিকার। তিনি কিশোরদের জন্য রহস্য রোমাঞ্চ ও গোয়েন্দা গল্প লেখার জন্য বিখ্যাত। তার কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। ছোটদের জন্য তিনি ৮০টিরও বেশি বই লিখেছিলেন। এর মধ্যে কবিতা, নাটক, হাসি ও ভূতের গল্প, অ্যাডভেঞ্চার, ও গোয়েন্দা কাহিনি, ঐতিহাসিক উপন্যাস সবকিছুই ছিল। তার সৃষ্ট দুঃসাহসী জুটি বিমল-কুমার, জয়ন্ত (গোয়েন্দা) ও সহকারী মানিক, পুলিশ ইন্সপেক্টর সুন্দরবাবু, ডিটেকটিভ হেমন্ত, বাংলা কিশোর সাহিত্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য চরিত্র।
উক্তি
[সম্পাদনা]- মধ্য-এশিয়া থেকে দক্ষিণ দিকে যখন আর্য অভিযান শুরু হয়, তখন তাদের একদল আসে ভারতবর্ষে, আর একদল যায় পারস্যে। অর্থাৎ ভারতবাসী আর্য আর পারস্যবাসী আর্যরা ছিলেন মূলত একই জাতি। প্রাচীন ভারতের ও প্রাচীন পারস্যের ধর্মের মধ্যেও এই একত্বের যথেষ্ট প্রভাব আবিষ্কার করা যায়। কিন্তু বহু শতাব্দী বিভিন্ন দেশে বাস করে ভারতবাসীরা ও পারসীরা নিজেদের এক-জাতীয়তার কথা সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেল।
- "প্রথম পরিচ্ছেদ", পঞ্চনদের তীরে, কলকাতা, ১৯৪৫।
- স্বদেশকে আমরা সবাই ভালোবাসি নিশ্চয়, কারণ, বনমানুষ ও সাধারণ জানোয়াররা পর্যন্ত স্বদেশ থেকে নির্বাসিত হলে সুখী হয় না। আফ্রিকার গরিলাদের অন্য দেশে ধরে নিয়ে গেলে প্রায়ই তারা মারা পড়ে! তাদের যত যত্নই করা হোক, যত ভালো খাবারই দেওয়া হোক, তবু তাদের মনের দুঃখ ঘোচে না। এই দুঃখই হচ্ছে তাদের স্বদেশ-প্রীতি। গরিলাদের স্বদেশ প্রীতি আছে, আমাদের থাকবে না?
- "স্থান-কাল-পাত্রের পরিচয়", পঞ্চনদের তীরে, কলকাতা, ১৯৪৫।
- ভারতবর্ষে আমরা গ্রীক-বীরত্বের যে-ইতিহাস পাই, তা বহু স্থলেই অতিরঞ্জিত, কোথাও কল্পিত এবং কোথাও অমূলক কিনা? আমার বিশ্বাস, হ্যাঁ। কারণ এক্ষেত্রে ঐতিহাসিক চিত্রকর নিজের ছবিই নিজে এঁকেছেন। এই খবরের কাগজের যুগে, সদা-সজাগ বেতার, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনের রাজ্যেও নিত্যই দেখছি যুদ্ধে নিযুক্ত দুই পক্ষই প্রাণপণে সত্যগোপন করছে, হেরে বলছে হারিনি, সামান্য জয়কে বলছে অসামান্য!
- "স্থান-কাল-পাত্রের পরিচয়", পঞ্চনদের তীরে, কলকাতা, ১৯৪৫।
- কেবল স্বদেশ-প্রীতি ও বীরত্বের দ্বারা যুদ্ধজয় করা যায় না, অসংখ্য শত্রুকে বাধা দেবার জন্যে চাই প্রচুর সৈন্যবল।
- "আবার ইতিহাস", পঞ্চনদের তীরে, কলকাতা, ১৯৪৫।
- আধুনিক বাংলা সাহিত্যের আদর্শ এসেছে ইংল্যান্ড থেকে। কিন্তু বাঙালীদের মত ইংরেজরাও সাহিত্য ও আর্টের নানা বিভাগে যাঁরা অতুলনীয় প্রাধান্য বিস্তার করেছেন, কেবল তাঁদের নিয়েই সর্বদা বড় বড় কথা বলেন না, উল্লেখযোগ্য অপ্রধান কর্মীদের জন্যেও এমন খানিকটা জায়গা করে রাখেন যেন তাঁদের নাম অতীতের অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে পারে না।
- "মনোমোহন বসু", যাঁদের দেখেছি, কলকাতা, ১৯৫১।
- বাবার একটি অনতিবৃহৎ পুস্তকাগার ছিল। ইংরেজী ও বাংলা দুইশ্রেণীর কেতাবই সাজানো থাকত আলমারিতে। সেখানে প্রায়ই অনধিকার প্রবেশ করতুম গোপনে। ইংরেজী বই পড়ে বুঝবার বয়স তখনো হয় নি। তাই প্রদীপ্ত আগ্রহে আক্রমণ করতুম বাংলা বইগুলিকেই। এই পুস্তকাগারের দৌলতে বালক বয়স পার হবার আগেই তখনকার বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে করেছিলুম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন।
- "গিরিশচন্দ্র ঘোষ", যাঁদের দেখেছি, কলকাতা, ১৯৫১।
- এমন অনেক মহিলা লেখিকা আছেন যাঁদের রচনার মধ্যে কৃতিত্বের প্রমাণ থাকলেও নারীত্বের পরিচয় পাওয়া যায় না। বোধ হয় তাঁরা মনে মনে নিজেদের পুরুষের সমকক্ষ ভেবে সাবধানে আপন আপন নারীত্বকে গোপন রাখবার চেষ্টা করেন।
- "স্বর্ণকুমারী দেবী", যাঁদের দেখেছি, কলকাতা, ১৯৫১।
- শ্রেষ্ঠ আর্ট মানুষকে মুগ্ধ করে, মৌন করে, অভিভূত করে; প্রকৃত শিল্পীর পক্ষে তাইই হচ্ছে যথার্থ অভিনন্দন। ভালো অভিনয় দেখে, ভালো সঙ্গীত শুনে যারা হাততালি বা চেঁচিয়ে বাহবা দেয়, আমি তাদের অরসিক বলে মনে করি। হাততালি ও হট্টগোল ফুটবলখেলার মাঠেই শোভা পায়।
- "করমতুল্লা খাঁ", যাঁদের দেখেছি, কলকাতা, ১৯৫১।
- সাধু ভাষার সাধুতা রক্ষা করবার জন্যে চলতি ভাষাকে চলতে দেন নি গৌড়ীয় সাধু ব্যক্তিগণ। তাঁরা মাতৃভাষাকে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন সংস্কৃতের সুদৃঢ় নিগড়ে।
- "প্রমথ চৌধুরী (বীরবল)", যাঁদের দেখেছি, কলকাতা, ১৯৫১।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় হেমেন্দ্রকুমার রায় সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।