পূর্ববঙ্গ
পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব বাংলা নামটি ঐতিহাসিকভাবে বঙ্গ অঞ্চলের পূর্বাঞ্চলকে বুঝিয়ে থাকে। ১৯০৫ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের পূর্বাংশ পূর্ববঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। পূর্ববঙ্গ বলতে সেই সময় যে এলাকাকে বুঝানো হত তা বর্তমানে বাংলাদেশ নামে পরিচিত। তবে ব্রিটিশ আমলের পূর্ববঙ্গের সীমানা বর্তমান বাংলাদেশের থেকে ছোট ছিলো। মূলত অবিভক্ত বঙ্গের একটি নির্দিষ্ট অংশ এই নামে পরিচিত ছিল। বঙ্গভঙ্গের পরে অবিভক্ত বঙ্গের পূর্বাংশ পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯১১ সালে আসাম আলাদা হয়ে বঙ্গপ্রদেশ পুনরায় যুক্ত হলে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানের সৃষ্টি হলে এই অঞ্চলটি পুনর্নির্ধারণ হয়ে আগের তুলনায় একটু সংকুচিত হয়ে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ প্রদেশে রূপ নেয়। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার পূর্ববঙ্গের নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান রাখে, যাকে পাকবাংলা বলেও ডাকা হতো। আবার এই পূর্ব পাকিস্তান ১৯৭১ সালে স্বাধীন হলে এই অঞ্চলটি বর্তমান বাংলাদেশের সীমানায় রূপ নেয়।
উক্তি
[সম্পাদনা]- পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গে আমাদের একই সংস্কৃতি একই ইতিহাস একই ঐতিহ্য। আমাদের আলাদা করে রাখা যাবে না।
- ১৯৫৪ সালে কলকাতার একটি জনসভায় আবুল কাশেম ফজলুল হকের ভাষণের অংশবিশেষ [১]
- বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা রোধ করা যেত যদি পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং পূর্ববঙ্গ মিলে সকল সম্প্রদায়ের একটি স্বাধীন দেশ হতো।
- আমাদের মনে এই বিশ্বাস আছে, পূর্ববঙ্গে যদি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলে হিন্দিভাষীদের দ্বারা শাসিত এবং নির্যাতিত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাও একসময় স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে ইচ্ছুক হবে।
- বাংলাদেশ বিপ্লবী পরিষদের আঁকা স্বাধীন বাংলার পতাকা প্রসঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান [৩]
- পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গের মধ্যে আরও দৃঢ়তার ভ্রাতৃত্ববন্ধন আবশ্যক।
- নেতারা যদি নেতৃত্ব দিতে ভুল করে, জনগণকে তার খেসারত দিতে হয়। যে কলকাতা পূর্ব বাংলার টাকায় গড়ে উঠেছিল, সেই কলকাতা আমরা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলাম। কেন্দ্রীয় লীগের কিছু কিছু লোক কলকাতা ভারতে চলে যাক এটা চেয়েছিল বলে আমার মনে হয়।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা: ৭৯
- মানিকদা আদি বাংলার মূল অংশ আপনি কাকে বলছেন? পশ্চিমবঙ্গের নাম তো বঙ্গও ছিল না। অঙ্গ, বঙ্গ, কলিম্পের যুগেও আদি বঙ্গ ছিল বর্তমানের বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে দেশ ভাগ হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গ দিল্লির আধিপত্য মেনে নিয়েছে, হিন্দি ভাষার কাছে বাংলা ভাষাকে নতিস্বীকার করিয়েছে। তখন পূর্ব বাংলা করাচি বা পিন্ডির দাসত্ব মেনে নেয়নি। বাংলা ভাষা উর্দু ভাষার কাছে মাথা নত করেনি। আরও দেখুন, পশ্চিমবঙ্গ পূর্ববঙ্গ থেকে আলাদা হওয়ার পরও পূর্ববঙ্গের লোকেরাই পশ্চিমবঙ্গে রাজত্ব করছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন প্রফুল্ল সেন কি পূর্ববঙ্গের নন? রবীন্দ্রনাথের আদি পৈতৃক নিবাস কোথায়? আপনিও তো পূর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জের মানুষ। আপনাকে নিয়ে কি আমরা দুই বাংলার মানুষ গর্ব করি না?
- সত্যজিৎ রায়কে উদ্দেশ্য করে আবদুল গাফফার চৌধুরী এটি বলেছিলেন।[৫]