আবদুল গাফফার চৌধুরী

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

আবদুল গাফফার চৌধুরী (১২ ডিসেম্বর ১৯৩৪ — ১৯ মে ২০২২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী গ্রন্থকার, কলাম লেখক। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো-এর রচয়িতা। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয়বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। তিনি তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে একুশে পদক ও ২০০৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা রোধ করা যেত যদি পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং পূর্ববঙ্গ মিলে সকল সম্প্রদায়ের একটি স্বাধীন দেশ হতো।
  • ভারতের পূর্বাঞ্চলে একটি দুর্বল মুসলিম স্টেট প্রতিবেশী হিসেবে থাকুক, যে রাষ্ট্রের প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরার অমুসলিম বাঙালীরা কোনো অনুরাগ বা আনুগত্য পোষণ করবে না; বরং মুসলিম জাতীয়তা ও মুসলমান গরিষ্ঠতার সঙ্গে যুক্ত হতে তারা ভয় পাবে; পাকিস্তানী শাসনামলের কথা স্মরণ করবে। তার উপর এই দেশটি নামে মুসলিম স্টেট হলেও প্রায় চারদিকে ভারত দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এবং জাতীয় ঐক্য ধর্মের ভিত্তিতে খণ্ডিত থাকায় সহজেই দুর্বল দেশটিকে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ক্ষমতা ও শক্তির ভারসাম্যে ভারতের অনুকূলে টানার কাজে ব্যবহার করা যাবে। তদুপরি ভারতের বিগ বিজনেস বিনাবাধায় সেখানে তাদের একচেটিয়া বাজার প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবে। দেখা গেল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ব্যাপারে দিল্লী ও ইসলামাবাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে যতই পার্থক্য ও শত্রুতা থাকুক, সেক্যুলার বাংলাদেশ ও সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তাদের মনোভাব প্রায় অভিন্ন।
    • আবদুল গাফফার চৌধুরী [২]
  • বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা নেন তখন এর সঙ্গে ভারতের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গ, আসামত্রিপুরা দাবি করেননি কেন? এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কৌশল। তিনি যখন ছাত্রদের দ্বারা গঠিত 'বাংলাদেশ বিপ্লবী পরিষদের' আঁকা স্বাধীন বাংলার পতাকা দেখেন, তখন নির্দেশ দেন তাতে পূর্ববঙ্গের মানচিত্র যোগ করতে হবে। আমি তার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন, 'ভারত যদি মনে করে আমরা ভারতের অন্তর্ভুক্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলগুলোও চাই তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে আমাদের সাহায্য করবে না। আমরা দিল্লিকে বোঝাতে চাই তাদের অধীনে যেসব বাংলা ভাষাভাষী প্রদেশ আছে আমরা তাদের চাই না। কিন্তু আমাদের মনে এই বিশ্বাস আছে, পূর্ববঙ্গে যদি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলে হিন্দিভাষীদের দ্বারা শাসিত এবং নির্যাতিত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাও একসময় স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে ইচ্ছুক হবে।'
    • আবদুল গাফফার চৌধুরী [৩]
  • মানিকদা আদি বাংলার মূল অংশ আপনি কাকে বলছেন? পশ্চিমবঙ্গের নাম তো বঙ্গও ছিল না। অঙ্গ, বঙ্গ, কলিম্পের যুগেও আদি বঙ্গ ছিল বর্তমানের বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে দেশ ভাগ হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গ দিল্লির আধিপত্য মেনে নিয়েছে, হিন্দি ভাষার কাছে বাংলা ভাষাকে নতিস্বীকার করিয়েছে। তখন পূর্ব বাংলা করাচি বা পিন্ডির দাসত্ব মেনে নেয়নি। বাংলা ভাষা উর্দু ভাষার কাছে মাথা নত করেনি। আরও দেখুন, পশ্চিমবঙ্গ পূর্ববঙ্গ থেকে আলাদা হওয়ার পরও পূর্ববঙ্গের লোকেরাই পশ্চিমবঙ্গে রাজত্ব করছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন প্রফুল্ল সেন কি পূর্ববঙ্গের নন? রবীন্দ্রনাথের আদি পৈতৃক নিবাস কোথায়? আপনিও তো পূর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জের মানুষ। আপনাকে নিয়ে কি আমরা দুই বাংলার মানুষ গর্ব করি না?
    • সত্যজিৎ রায়কে উদ্দেশ্য করে আবদুল গাফফার চৌধুরী এটি বলেছিলেন।[৪]
  • ১৯৪৬ সালে ভারত ভাগের সময় তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশেম এবং কংগ্রেস নেতা শরৎচন্দ্র বসু মিলে এই স্বাধীন যুক্ত বাংলা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের চাপে তা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাফল্য এই, তিনি বাংলাদেশের অর্ধাংশকে স্বাধীন করেছেন। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে তার খণ্ডিত দেশটিকে গড়ে তোলার আগেই তাকে হত্যা করা হয়।
    • আবদুল গাফফার চৌধুরী। [৫]
  • তারপর ছয় দফার আন্দোলনকে শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা আন্দোলনে পরিণত করায় বঙ্গবন্ধু আজ বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কিন্তু যে স্বাধীন বাংলার কল্পনা তার মনে ছিল তা আজ পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানে অনবরত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা দেখে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বাঙালিদের মনে ভয় ঢুকে গেছে এবং তারাও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় রত হয়েছে।
    • আবদুল গাফফার চৌধুরী [৬]
  • আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
    আমি কি ভুলিতে পারি
    ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া-এ ফেব্রুয়ারি
    আমি কি ভুলিতে পারি
    আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
    আমি কি ভুলিতে পারি।।
    • আবদুল গাফফার চৌধুরী [৭]
  • বাংলা ভাষায় নিহিত রয়েছে অসাম্প্রদায়িকতা ও লড়াকু চেতনা।
    • আবদুল গাফফার চৌধুরী [৮]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]