বিষয়বস্তুতে চলুন

অদ্বৈত মল্লবর্মণ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
তিতাস একটি নদীর নাম। তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস।
স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়।
—অদ্বৈত মল্লবর্মণ
তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসের প্রচ্ছদ

অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১ জানুয়ারি ১৯১৪ - ১৬ এপ্রিল ১৯৫১) ছিলেন বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক। তিতাস একটি নদীর নাম শিরোনামের উপন্যাসটি লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় ও অমর প্রতিভা হিসেবে সবিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেন। এই উপন্যাসটি সর্বপ্রথম 'মাসিক মোহাম্মদী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি তৎকালীন কুমিল্লা জেলার অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার গোকর্ণ গ্রামে এক দরিদ্র ধীবর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে আর্থিক সঙ্কটের কারণে কলেজের পড়া ছেড়ে দিয়ে অর্থ উপার্জন ও জীবিকার উদ্দেশ্যে কলকাতার মাসিক 'ত্রিপুরা' পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৬ সালে নরেন দত্ত পরিচালিত 'নবশক্তি' পত্রিকায় যোগ দেন। পত্রিকাটির সম্পাদক কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহকারী হিসেবে সহ-সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। নবশক্তি'র প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ'র "মাসিক মোহাম্মদী" পত্রিকার সম্পাদকের সহকারী হিসেবে যোগ দেন। এই সময়ে একই সঙ্গে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছিলেন। নবযুগ, কৃষক ও যুগান্তর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হলো: তিতাস একটি নদীর নাম (উপন্যাস), এক পয়সায় একটি (গ্রন্থ), সাদা হাওয়া (উপন্যাস), সাগরতীর্থে, নাটকীয় কাহিনী, দল বেঁধে (গল্পগ্রন্থ), রাঙামাটি, জীবনতৃষ্ণা (অনুবাদঃ লাস্ট ফর লাইফ) প্রভৃতি।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • নদীর একটা দার্শনিক রূপ আছে। নদী বহিয়া চলে। কালও বহিয়া চলে। কালের বহার শেষ নাই। নদীরও বহার শেষ নাই।
    • তিতাস একটি নদীর নাম- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- পুথিঘর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭
  • এ-শিল্পী যে-ছবি আঁকে তা বড় মনোরম। তীর-ঘেঁসিয়া সব ছোট ছোট পল্লী। তারপর জমি। তাতে অঘ্রাণ মাসে পাকা ধানের মৌসুম। মাঘ মাসে সর্ষেফুলের অজস্র হাসি। তারপর পল্লী। ঘাটের পর ঘাট। সে ঘাটে জীবন্ত ছবি। মা তার নাদুস-নুদুস ছেলেকে ডুবাইয়া চুবাইয়া তোলে। বৌ-ঝিরা সব কলসী লইয়া ডুব দেয়। পরক্ষণে ভাসিয়া উঠে।
    • তিতাস একটি নদীর নাম- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক-পুথিঘর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১
  • কত বুকের কত আগুন, কত চাপা বাতাস তার জলে নিবিয়াছে। কতকাল ধরিয়া এ-সব সে নীরবে দেখিয়াছে, দেখিয়াছে আর বহিয়াছে। আবার সে দেখিয়াছে কত শিশুর জন্ম, দেখিয়াছে আর ভাবিয়াছে। ভাবী নিগ্রহের নিগড়ে আবদ্ধ এই অজ্ঞ শিশুগুলি জানে না, হাসির নামে কত বিষাদ, সুখের নামে কত ব্যথা, মধুর নামে কত বিষ তাদের জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে।
    • তিতাস একটি নদীর নাম- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক-পুথিঘর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮
  • এতক্ষণ বৃষ্টি ছিল রিমঝিমে, ছন্দমধুর। সহসা সে-বৃষ্টি ক্ষেপিয়া গেল। মার্ মার্ কাট্‌ কাট্ শব্দে বৃষ্টি আকাশ ফাঁড়িয়া পড়িতে লাগিল। সাঁ সাঁ ঝম্ ঝম্ সাঁ সাঁ ঝম্ ঝম্‌ শব্দে কানে বুঝি তালা লাগিয়া যায়। তীর-ভূমি, তীরের মাঠ-ময়দান, ‘গাঁ-গেরাম’ আর চোখে দেখা যায় না। ধোঁয়াটে শাদা আবছায়ায় চারিদিক ঝাপসা হইয়া গিয়াছে।
    • তিতাস একটি নদীর নাম- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- পুথিঘর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২৩

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]