উট

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
মরুভূমির কথা বলিতে গেলেই উটের কথা আসিয়া পড়ে। উটের শরীরটিকে মরুভূমির উপযোগী করিয়াই গড়া হইয়াছে।
সুকুমার রায়

উট একটি বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণী। মধ্যপ্রাচ্যে ভারবাহী পশু হিসেবে উটকে ব্যবহার করা হয়। প্রজাতির উপর নির্ভর করে উটের পিঠে একটি বা দুটি বড় কুঁজ থাকে। মরুভূমিবাসী মানুষেরা গরু-ছাগলের বদলে উট পালন করে থাকে। মরুভূমিতে বহুযুগ বাস করার ফলে উট সেখানকার প্রতিকূল আবহাওয়ায় নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়ে সহিষ্ণুতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। উটকে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • মরুভূমির কথা বলিতে গেলেই উটের কথা আসিয়া পড়ে। উটের শরীরটিকে মরুভূমির উপযোগী করিয়াই গড়া হইয়াছে। চ্যাটাল চ্যাটাল পা, তার আষ্টেপৃষ্টে কড়ায় ঢাকা-ঝামা দিয়া ঘসিলেও তাহাতে ফোস্কা পড়ে না। ক্ষুধা নাই, তৃষ্ণা নাই—এক পেট ঘাস খাইয়া তিন দিন উপোস থাকে—এক ঢোক জল লইয়া সারাদিন পথ চলে।
    • সুকুমার রায়, মরুর দেশে, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৯
  • সমন হয়েছে জারি, কাবুলের সর্দার
    চলে এল উটে চড়ে, পিছে ঝাডু বর্দা‌র।
    উটেতে কামড় দিল, হল তার পা টুটা—
    বিলকুল লােকসান হয়ে গেল হাঁটুটা।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাসাখানি গায়ে-লাগা আর্মানি গির্জার, ছড়া-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪
  • কতকগুলা ঘোড়সোয়ার আমাদের সম্মুখ দিয়া যাইতেছিল; হাতী দেখিয়া তাহাদের ঘোড়া ভড়্‌কাইয়া লাফালাফি করিতে লাগিল; একটা উট হঠাৎ মাথাঝাঁকানি দেওয়ায় উটের সোয়ার উষ্ট্রপৃষ্ঠ হইতে ভূতলে পতিত হইল। এই হাতীর দেশে এমন কোন জীবজন্তু নাই যে, হাতীর পাশ দিয়া গেলে ভয় না পায়।
    • পিয়ের-লোটি, জালিকাটা বেলে-পাথরের নগর, ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ, পিয়ের-লোটির ফরাসী থেকে অনুবাদ, অনুবাদক- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৮৩
  • চাঁদ ডুবে চ’লে গেলে— অদ্ভুত আঁধারে
    যেন তার জানালার ধারে
    উটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিস্তব্ধতা এসে।
    • জীবনানন্দ দাশ, আট বছর আগের একদিন, জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- নাভানা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৫
  • রাস্তা দিয়া একটা উট চলিয়া যাইতেছিল,—বিপদ দেখিয়া উষ্ট্রবাহক তাহার পিঠ হইতে লাফাইয়া পড়িল—ঘোড়াটাও হঠাৎ থামিল-আমি সেই অবকাশে নামিয়া পড়িলাম। কিন্তু এখানেই বিপদের শেষ নহে।
    • স্বর্ণকুমারী দেবী, কাহাকে?, বিংশ পরিচ্ছেদ, কাহাকে?-স্বর্ণকুমারী দেবী, প্রকাশসাল- ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৫
  • তুরস্ক দেশেও এমনি একটি বেজায় বুদ্ধিমান লোক ছিল, একবার একটা উট দেখে একজন তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘মশায়, এটা কি জন্তু?’ বুদ্ধিমান বললে, ‘তাও— জান না? খরগোশ হাজার বছরের বুড়ো হয়েছে, তাইতে তার এমনি চেহারা হয়ে গিয়েছে।’ কথাটা কিন্তু নিতান্ত মন্দ বলে নি, খরগোশ যদি হাজার বছর বেঁচে থাকতে পারত, আর সেই হিসাবে তার নাক তুবড়ে গাল বসে মুখ লম্বা হয়ে আসত, তবে তা অনেকটা উটের মত চেহারা হত বইকি।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, পণ্ডিতের কথা, গল্পমালা, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৫০
  • আরবদের বিশ্বাস যে উট যদি একবার রাগ করে তবে একদিন হউক, এক বৎসর হউক, সে প্রতিহিংসা না লইয়া ছাড়িবে না। সেইজন্য কোনো উটের মেজাজ বিগড়াইতে দেখিলেই তাহার মাটির উপর নানারকম পোশাক ছড়াইয়া উটকে তাহার মধ্যে ছাড়িয়া দেয়। উট তখন ঐগুলার উপর মনের সুখে লাথি চাঁটি মারিয়া মেজাজ ঠাণ্ডা করে।
    • সুকুমার রায়, মরুর দেশে, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৯
  • চলেছে উটের আরোহী চলেছে সীমাহীন প্রান্তরে,
    বিঘ্ন বিপদ পদে পদে তার চিত্ত সজাগ করে।
    • আবু আল ফৈজ ইবন মুবারক, মরু-যাত্রী, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত অনূদিত, তীর্থরেণু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৮
  • আমাদের ডানদিকের বালুকারাশির মধ্যে দিয়ে একদল আরব শ্রেণীবদ্ধ উট বোঝাই করে নিয়ে চলেছে। প্রখর সূর্যালোক এবং ধূসর মরুভূমির মধ্যে তাদের নীল কাপড় এবং সাদা পাগড়ি দেখা যাচ্ছে। কেউ-বা এক জায়গায় বালুকাগহ্বরের ছায়ায় পা ছড়িয়ে অলসভাবে শুয়ে আছে, কেউ-বা নমাজ পড়ছে, কেউ-বা নাসারজ্জু ধরে অনিচ্ছুক উটকে টানাটানি করছে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, য়ুরোপযাত্রী, সংকলন-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯১
  • জেগে-জেগে স্বপ্ন দেখি অদূরেই মরুদ্যান
    দেখি, অবিরল উটের প্রবাহ চলেছে সেদিকে
    সারি-সারি তাঁবুর ভেতর থেকে ছিটকে আসছে সুরের লহরী
    যেন আরব্যরজনী থেকে উঠে আসছে মায়াবী গল্পের রেশ
    • তপোধীর ভট্টাচার্য, কবিতাসংগ্রহ- তপোধীর ভট্টাচার্য, তৃতীয় খণ্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- এবং মুশায়েরা, কলকাতা, প্রকাশসাল-২০১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৪২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০০
  • সমুচ্চ বুরুজশ্রেণীর তল দিয়া একটি দুর্গ-সেতু পার হইতে হয়, তাহার পর একটি ভিতরকার প্রাঙ্গণ, সেই প্রাঙ্গণে উটেরা বোঝা খালাস করিবার জন্য হাঁটু গাড়িয়া বসিয়াছে। এই প্রাঙ্গণ পার হইবামাত্র গীতিনাট্যের দৃশ্য-পটের ন্যায় হঠাৎ একটা অদ্ভুত অপরূপ, কুয়াশাবৎ, বর্ণনাতীত দৃশ্য নেত্রসমক্ষে উপস্থিত হয়।
    • আঁদ্রে শেভ্রিয়োঁ, ভারতবর্ষে—জয়পুর, ভারতবর্ষে- আঁদ্রে শেভ্রিয়োঁ, অনুবাদক- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশসাল- ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩১০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৩
  • গ্রামের কয়েকটি লোক বরফ পরিষ্কার করছিল এবং অদূরে কতকগুলি লোক একটা উটের মাংস ভাগাভাগি করছিল। ওদের সংগে মোটর ড্রাইভার ইরানি ভাষায় কথা বলছিল। ড্রাইভার আমাকে বুঝিয়ে দিলে, যদিও এরা হিন্দু বলেই পরিচয় দেয় তবুও হিন্দুস্থানের হিন্দুদের সংগে এদের কিছুই মিল নেই।
    • রামনাথ বিশ্বাস, কাবুল হতে বিদায়, আফগানিস্থান ভ্রমণ - রামনাথ বিশ্বাস, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- অশোক পুস্তকালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩০
  • এই খোর্ম্মার বলে ও ধর্ম্মের বলে বলীয়ান হইয়া তাহারা মরুতরী উষ্ট্র লইয়া নানা দিগ্‌দেশে চলিয়া যায়। উট তাহাদের পিপাসার সময় জল অন্বেষণ করিয়া দেয়, এবং প্রচণ্ড বাতাস যখন মরুভূমির বালুকারাশি উড়াইয়া উড়াইয়া স্তূপ করিয়া তাহাদের জীবনের খেলা শেষ করিয়া দিতে ভীষণ উন্মত্ত হয়, এই বিপদে তখন উষ্ট্রই তাহাদিগকে রক্ষা করে।
    • রাহাতুন্নেছা খাতুন, দেবী রাবিয়া, দেবী রাবিয়া - রাহাতুন্নেছা খাতুন, প্রকাশক- মকদুমী লাইব্রেরী, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২-৩

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]