চরকা

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
চরকা

চরকা হলো তুলো থেকে সুতো তৈরির হস্তচালিত একরকম যন্ত্র। এটি একটি লৌকিক যন্ত্রবিশেষ। চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝি উত্তর ভারতে চরকার ব্যাপক প্রচলন ছিল। তবে চৌদ্দ শতকের শেষ দিকে বাংলায় এ যন্ত্রটির প্রচলন হয়। পনেরো শতক থেকে বাংলায় মূলত মোটা সুতিবস্ত্র বয়নের জন্য যে সুতোর দরকার হতো তা চরকায় কাটা হতো। নানা সময়ে চরকার কাঠামোয় বেশ কিছু বিবর্তন হয়েছে। চরকা সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরি হয়।চরকার চাকাই হলো প্রধান অংশ। চাকার চক্কর বা ঘূর্ণনের দ্বারা সুতো তৈরি হয় বলেই এর নাম চরকা। চরকার চাকার সঙ্গে যুক্ত একটা হাতলের সাহায্যে হাত দিয়ে এই যন্ত্রটিকে ঘোরানো হয়। হাতের কুশলতায় তুলো থেকে তৈরি হয় মোটা সুতো। পরবর্তীকালে শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই কাপড়ের কল আসায় ধীরে ধীরে কমে আসে চরকার ব্যবহার। এখন অধিকাংশ তাঁতিই কলের সুতো ব্যবহার করেন। চরকায় আর সুতো কাটা হয় না।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • তখনকার সেই স্বদেশী যুগে ঘরে ঘরে চরকা কাটা, তাঁত বোনা, বাড়ির গিন্নি থেকে চাকরবাকর দাসদাসী কেউ বাদ ছিল না। মা দেখি একদিন ঘড়ঘড় করে চরকা কাটতে বসে গেছেন। মার চরকা কাটা দেখে হ্যাভেল সাহেব তাঁর দেশ থেকে মাকে একটা চরকা আনিয়ে দিলেন। বাড়িতে তাঁত বসে গেল, খটখট শব্দে তাঁত চলতে লাগল। মনে পড়ে এই বাগানেই সুতো রোদে দেওয়া হত। ছোটো ছোটো গামছা ধুতি তৈরি করে মা আমাদের দিলেন—সেই ছোটো ধুতি, হাঁটুর উপর উঠে যাচ্ছে, তাই প’রে আমাদের উৎসাহ কত।
    • ঘরোয়া- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭-২৮
  • এক যে ছিল চাঁদের কোণায়
    চরকা-কাটা বুড়ি
    পুরাণে তার বয়স লেখে
    সাতশো হাজার কুড়ি।
    সাদা সুতোয় জাল বোনে সে,
    হয় না বুনোন সারা—
    পণ ছিল তার ধরবে জালে
    লক্ষ কোটি তারা।
    • বুড়ি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিশু ভোলানাথ, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ (১৪০৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০
  • রাজার মেয়ে আস্তে আস্তে দরজা ঠেল্‌তেই অমনি দরজা খুলে গেল। সেই ঘরের ভিতর এক বুড়ী ব’সে চরকায় সুত কাট্‌ছিল। রাজার মেয়ে কখন চরকা দেখেনি, সে আশ্চর্য্য হয়ে বুড়ীকে জিজ্ঞাসা কর্‌ল, “তুমি কি কর্‌ছ? ওটা কি অম্‌নি বন্ বন করে ঘুর্‌ছে?” বুড়ী বলল, “ওটা চরকা। আমি সুত কাটছি।” মেয়েটি বল্‌ল, “আমি দেখ্‌ব চরকা কি রকম?” বুড়ী তার হতে চরকা দিল। কিন্তু যেই সে চরকা ঘুরাতে গিয়েছে, অমনি কেমন করে সেই চরকার টেকো তার হাতে বিঁধে গেল, আর তখনি সে সেইখানে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়্‌ল।
    • গল্পের বই - সুখলতা রাও, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক-ইউ, রায় এণ্ড সন্স্, কলকাতা, মুদ্রক- ব্রাহ্মমিশন প্রেস, প্রকাশসাল= ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৪
  • আমরা এখানে এসে কয়েকদিন সূতা কাটি। তারপর চরকাটা ভেঙ্গে যায় এবং যাঁর খুব বেশী উৎসাহ ছিল তিনি এখান থেকে বদলী হয়ে যান। তাই এখন ভাঙ্গা চরকাটা আলমারীর উপর তোলা আছে। একবার ইচ্ছা হয়েছিল কলকাতায় ডাক্তার পি. সি. রায়কে লিখি একটা চরকা পাঠাতে। তারপর ভাবলাম যে হয়তো পথে আসতে ২ ভেঙ্গে যাবে, তাই লেখা হ’ল না।
    • বিভাবতী বসুকে লিখিত সুভাষচন্দ্র বসুর পত্র, মান্দালয় জেল, ইং ১৬ই ডিসেম্বর (১৯২৫), পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০৭

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]