বিষয়বস্তুতে চলুন

দুর্ভিক্ষ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
একদা দুর্ভিক্ষ এল
ক্ষুধার ক্ষমাহীন তাড়নায়
পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি সবাই দাঁড়ালে একই লাইনে
সুকান্ত ভট্টাচার্য

দুর্ভিক্ষ হলো কোন এলাকার ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি। সাধারণত ফসলহানি, যুদ্ধ, সরকারের নীতিগত ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গবাদিপশুর মড়ক, পোকামাকড় আক্রমণ ইত্যাদি কারণেও দুর্ভিক্ষ হওয়ার ঘটনা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে। ১৭৭০ সালে অর্থাৎ ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বঙ্গদেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। বিংশ শতাব্দীতে সারা বিশ্বে আনুমানিক ৭০ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের কারণে মারা যায়।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • একদা দুর্ভিক্ষ এল
    ক্ষুধার ক্ষমাহীন তাড়নায়
    পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি সবাই দাঁড়ালে একই লাইনে
    ইতর-ভদ্র, হিন্দু আর মুসলমান
    একই বাতাসে নিলে নিঃশ্বাস।
    • সুকান্ত ভট্টাচার্য, ঐতিহাসিক, ছাড়পত্র কাব্যগ্রন্থ, সুকান্ত সমগ্র- সুকান্ত ভট্টাচার্য, প্রকাশক- সারস্বত লাইব্রেরী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৫
  • ইহার মধ্যে একবার বাঙ্গালার ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হইল। পূর্ব বাঙ্গালার সেই সকল স্থান অতিশয় উর্বরা বলিয়া প্রসিদ্ধ। অন্য স্থানে যখন ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হয়, তখনও সেখানকার লোকেরা না খাইয়া মরে না। কিন্তু যে বারের কথা বলিতেছি, তখনকার মতন দুর্ভিক্ষ বুঝি আর কখনও হয় নাই। অতিশয় বৃদ্ধ লোকদের মুখে শুনিয়াছি—তাঁহারাও আবার তাঁহাদের ছেলেবেলার বৃদ্ধদের নিকট শুনিয়াছিলেন—যে সেই সময়ে ভদ্রলোকেরাও বনের কচু সিদ্ধ করিয়া খাইয়া জীবনধারণ করিয়াছিলেন।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, রামজীবন, বিবিধ প্রবন্ধ, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯০৯
  • সেই দুর্ভিক্ষ-পীড়িত প্রদেশে সে সময়ে প্রকৃত সন্ন্যাসী বড় ছিল না। কেন না তাহারা ভিক্ষোপজীবী; লোকে আপনি খাইতে পায় না, সন্ন্যাসীকে ভিক্ষা দিবে কে? অতএব প্রকৃত সন্ন্যাসী যাহারা তাহারা সকলেই পেটের দায়ে কাশী প্রয়াগাদি অঞ্চলে পলায়ন করিয়াছিল।
  • ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে বঙ্গদেশের দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ নরনারী যখন মৃত্যুমুখে পতিত হইতেছিল, তখন দেশগৌরব সুভাষচন্দ্র সিঙ্গাপুর হইতে রেডিও যোগে জানাইয়াছিলেন, ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট সম্মত হইলে তিনি আজাদ গভর্ণমেণ্টের প্রতিনিধিস্বরূপ দুর্ভিক্ষের প্রতিকার কল্পে এক লক্ষ টন চাউল এদেশে পাঠাইতে পারেন। ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট এ প্রস্তাব অনুমোদন করেন নাই।
    • মহেন্দ্রনাথ গুহ, দুর্ভিক্ষে সাহায্য, বাঙ্গালীর প্রতিভা ও সুভাষচন্দ্র - মহেন্দ্রনাথ গুহ, প্রকাশসাল- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৭-১০৮
  • স্তব্ধতা নেমেছে রাত্রে থেমেছে নির্ভীক তীক্ষস্বর—
    অথবা নিরন্ন দিন, পুথিবীতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা;
    উদ্ধত বঞ্জের ভয়ে নিঃশব্দে মৃত্যুর আনাগোনা,
    অনন্ত মানবসত্তা ক্রমান্বয়ে স্বল্পপরিসর।
    • সুকান্ত ভট্টাচার্য, অলক্ষ্যে, ঘুম নেই কাব্যগ্রন্থ, সুকান্ত সমগ্র- সুকান্ত ভট্টাচার্য, প্রকাশক- সারস্বত লাইব্রেরী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৫
  • উত্তর হইতে সহসা পালে পালে ইঁদুর ত্রিপুরার শস্যক্ষেত্রে আসিয়া পড়িল। শস্য সমস্ত নষ্ট করিয়া ফেলিল, এমন-কি, কৃষকের ঘরে শস্য যত-কিছু সঞ্চিত ছিল তাহাও অধিকাংশ খাইয়া ফেলিল– রাজ্যে হাহাকার পড়িয়া গেল। দেখিতে দেখিতে দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হইল। বন হইতে ফল মূল আহরণ করিয়া লোকে প্রাণধারণ করিতে লাগিল।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজর্ষি, ত্রিংশ পরিচ্ছেদ, রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১০
  • রাজার রাজ্যে দুর্ভিক্ষ লাগল, পূর্ব সীমানার লোকেরা অনাহারে মরতে বসল। রাজার কাছে খবর এল, রাজা বললেন, “এ-সমস্ত দৈবে ঘটায়, এর উপর আমার কোন হাত নাই।”
    • সুকুমার রায়, দানের হিসাব, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৬
  • পথে পথে দলে দলে কঙ্কালের শোভাযাত্রা চলে,
    দুর্ভিক্ষ গুঞ্জন তোলে আতঙ্কিত অন্দরমহলে!
    • সুকান্ত ভট্টাচার্য, বিবৃতি, ছাড়পত্র কাব্যগ্রন্থ, সুকান্ত সমগ্র- সুকান্ত ভট্টাচার্য, প্রকাশক- সারস্বত লাইব্রেরী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৬
  • বিধাতার রুদ্ররােষে
    দুর্ভিক্ষের দ্বারে বসে
    ভাগ করে’ খেতে হবে সকলের সাথে অন্নপান।
    অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হে মোর দুর্ভাগা দেশ যাদের কারেছ অপমান, গীতাঞ্জলি -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- এলাহাবাদ-ইন্ডিয়ান্‌ প্রেস্‌, ইন্ডিয়ান্‌ পাব্‌লিশিং হাউস, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৪
  • ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দের মে ও জুলাই মাসে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ আবির্ভূত হইয়াছিল। সে দুর্ভিক্ষের কথা স্মবণ হইলে শরীর শিহরিয়া উঠে এবং মস্তক ঘুরিয়া পড়ে। কত লোককে শাক, কচু সিদ্ধ করিয়া খাইতে হইয়াছে; কত লোক অনাহারে মরিয়াছে;
    • বিহারীলাল সরকার, বিদ্যাসাগর- বিহারীলাল সরকার, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪১৮
  • দুর্ভাগ্যক্রমে, ১৭৮৩ খৃষ্টাব্দে শীতকালে, ঐ প্রদেশে দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হওয়াতে, তাহাদের দিনান্তেও আহার পাওয়া দুর্ঘট হইয়া উঠিল। ফলতঃ, এই সময়ে শীতে ও অনাহারে, তাহারা যৎপরোনাস্তি কষ্ট পাইতে লাগিল।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অদ্ভুত পিতৃভক্তি, আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক-শ্রীকার্ত্তিক চন্দ্র দে, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২
  • দুর্দিনের দুর্বোধ্যতায় সে উন্মাদ হয়ে ওঠে দিনের পর দিন। অজন্ম নয়. প্লাবন নয়। তবু দুর্দিন, তবু দুর্ভিক্ষ? শিশুর মতো সে অবুঝ হয়ে ওঠে; জানতে চায় না, বুঝতে চায় না—কেন দুর্দিন, কেন দুর্ভিক্ষ—শুধু সে চায় ক্ষুধার আহার্য।
    • সুকান্ত ভট্টাচার্য, দুর্বোধ্য, অপ্রচলিত রচনা, সুকান্ত সমগ্র- সুকান্ত ভট্টাচার্য, প্রকাশক- সারস্বত লাইব্রেরী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬৬
  • যে কয় মাস দুর্ভিক্ষ প্রবল ছিল এবং যে কয় মাস অন্নসত্রের কাজ চলিয়াছিল, বিদ্যাসাগর মহাশয় সেই কয় মাস প্রতি মাসে একবার করিয়া বাড়ী যাইতেন। তাঁহার অনুপস্থিতিতে তাঁহার ভ্রাতা, পুত্র প্রভৃতি আত্মীয় স্বজনের উপর অন্নসত্রপরিদর্শনের ভার ছিল।
    • বিহারীলাল সরকার, বিদ্যাসাগর- বিহারীলাল সরকার, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪২০
  • দুর্ভিক্ষে যখন দলে দলে মানুষ মরিতেছে তখন সেটাকে প্রহসনের বিষয় বলিয়া কাহারও মনে হয় না। কিন্তু আমরা অনায়াসে কল্পনা করিতে পারি, একটা রসিক শয়তানের নিকট ইহা পরম কৌতুকাবহ দৃশ্য।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কৌতুকহাস্যের মাত্রা, পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৬

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]