নীলদর্পণ
অবয়ব
নীলদর্পণ হলো ১৮৬০ সালে দীনবন্ধু মিত্রর বাংলায় রচিত একটি সামাজিক নাটক। এই নাটকের কাহিনী আবর্তিত হয় সাধারণ কৃষকদের উপর ফসলের পরিবর্তে নীল চাষের জন্য ইংরেজ শাসকদের অত্যাচার ও নিপীড়ন নিয়ে।
সংলাপ
[সম্পাদনা]'প্রথম অঙ্ক'
প্রথম গর্ভাঙ্ক
- নবীন: আজ্ঞে, জননীর পরিতাপ বিবেচনা করে কি কালসর্প ক্রোড়স্থ সিসুকে দংশন করিতে সঙ্কুচিত হয়? আমি অনেক স্তুতিবাদ অরিলাম, তা তিনি কিছুই বুঝিলেন না। সাহেবের কথা সেই, তিনি বলেন পঞ্চাশ টাকা লইয়া ষাট বিঘা নীলের লেখাপড়া করিয়া দাও, পরে একবারে দুই সনের হিসাব চুকাইয়া দেওয়া যাবে।
- গোলক: ষাট বিঘা নীল কর্ত্তে হলে অন্য ফসলে হাত দিতে হবে না। অন্ন বিনাই মারা যেতে হলো।
- নবীন: আমি বলিলাম, সাহেব আমাদিগের লোকজন লাঙ্গল গরু সকলি আপনি নীলের জমিতে নিযুক্ত রাখুন, কেবল আমাদিগের সম্বৎসরের আহার দিবেন, আমরা বেতন প্রার্থনা করি না। তাহাতে উপহাস করিয়া কহিলেন, তোমরা ত যবনের ভাত খাওনা।
দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক
- সাধু: রাইচরণ, তুই এত সকালে যে বারী এলি?
- রাই: দাদা, আমিন শালা সাঁপোলতলার জমিতি দাগ্ মেরেচে। খাব কি, বচ্চোর যাবে কেমন করে? আহা, জমি তো না, য্যান সোনার চাঁপা। এক কোন্ কেটে মহাজন কাৎ কত্তাম্। খাব কি, ছেলেপিলে খাবে কি, এতডা পরিবার না খাতি পেয়ে মারা যাবে। ও মা! রাত পোয়ালি যে দু'কাটা চালির খরচ; না খাতিপেয়ে মরবো, আরে পোড়া কপাল, আরে পোড়া কপাল; গোড্ডর নীলি, কল্লে কি? য়্যাঁ! য়্যাঁ!
তৃতীয় গর্ভাঙ্ক
- উড: তুমি ভয় পাইয়াছ,হাম্ বোলা কি নেই, তুমি বড় নালায়েক আছ। তোমসে্ কাম হোহা নেই।
- গোপী: হুজুর ভয় পাওয়ার মতো কি দেখিলেন, যখন এ পদবীতে পদার্পণ করিয়াছি, তখন ভয়, লজ্জা, সরম, মান, মর্য্যাদার মাথা খাইয়াছি। গোহত্যা, ব্রহ্মহত্যা, স্ত্রীহত্যা, ঘর জ্বালান, অঙ্গের আভরণ হইয়াছে, আর জেলখানা শিওরে করে বসে আছি।
- উড: আমি কথা চাইনে, কাজ চাই।
চতুর্থ গর্ভাঙ্ক
- সর: দিদি, দ্যাখ দেখি আমি সিকের তলাটি বুনতে পেরেছি কি না? - হয় নি?
- সৈরি: (অবলোকন করিয়া) হ্যাঁ, এইবার দিব্বি হয়েছে। ও বোন এইখানটি যে ডুবিয়েছো, লালের পর জরদ তো খোলে নয়া।
- সর: আমি তোমার সিকে দেখে বুন্ছিলাম-
- সৈরি: তাতে কি লালের পর জরদ আছে?
- সর: না, তাতে লালের পর সবুজ আছে। কিন্তু আমার সবুজ সূতা ফুরিয়ে গিয়েছে, তাই আমি ওখানে জরদ দিয়েছি।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় নীলদর্পণ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।