বেদ
অবয়ব
বেদ হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। মোটামুটিভাবে ৪,০০০ - ৭,০০০ খ্রিষ্টপূর্ব বা তার বেশি বয়সের এই গ্রন্থ। এজন্য এটিকে প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ হিসাবে গণ্য করা হয়।
ঋগ্বেদ
[সম্পাদনা]- এসো প্রভুর সেবক হই! গরীব ও অভাবীদের দান করি। [ঋগবেদঃ ১.১৫.৮]
- বিশ্বাসীর হৃদয়েই প্রভু বসবাস করেন। আমাদের দেহই হোক প্রভূর মন্দির। আমরা যেন চিরদিন তাঁর সত্যিকারের দাস হিসেবে থাকতে পারি। আমাদের জীবনের সকল অর্জন তার চরণে সমর্পণ করতে পারি। [ঋগবেদঃ ১.৯১.১৩]
- নিঃশর্ত দানের জন্য রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আর্শীবাদ ধন্য দীর্ঘ জীবন ও অমরত্ব। [ঋগবেদঃ ১.১২৫.৬]
- হে প্রভু! আমাদের সর্বোত্তম সম্পদ দান করো; দান করো কালজয়ী মন, আত্নিক সুষমা, অনন্ত যৌবন, আলোকজ্জ্বল রূপ আর মধুর বচন। [ঋগ্বেদ: ২.২১.৬]
- একজন নিরীহ মানুষের ক্ষতি যে করে সে মানুষ নয়, সে হায়েনা। তার কাছ থেকে দূরে থাকো। [ঋগবেদঃ ২.২৩.৭]
- ওম্ ভূর্ভূবঃ স্বঃ। তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।। [ঋগবেদঃ ৩.৬২.১০] অনুবাদ: পরমাত্মা প্রাণস্বরূপ, দুঃখনাশক, সুখস্বরূপ। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করেন। সেই জগনির্মাতা ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধ্যান করি। [১]
- যারা সৎপথে কঠোর পরিশ্রম করেন এবং পরস্পরকে সহযোগিতা করে তাদেরকেই প্রভূ সাহায্য করেন। [ঋগবেদঃ ৪.২৩.৭]
- শুনশ্চিচ্ছেপং নিদিতং সহস্রাদ্যূপাদমুঞ্চো অশমিষ্ট হি ষঃ। এবাস্মদগ্নে বি মুমুগ্ধি পাশান্ হোতশ্চিকিত্ব ইহ তূ নিষদ্য॥ [ঋগ্বেদ, ৫ মণ্ডল, ২ সূক্ত, ৭ মন্ত্র]
অনুবাদ: অগ্নি, হে জ্যোতির্ময় ও বিশ্ববিধাতা, আপনি শুনহ-শেপ বা ইন্দ্রিয়পরায়ণ, মোহগ্রস্ত, অসংযমীকেও রক্ষা করেন; আপনি তাকে ত্রিতাপ জ্বালা থেকে রক্ষা করুন যাতে সে শান্তি পায়। একইভাবে, হে জীবন-যজ্ঞের মহাপুরোহিত, আমাদের যজ্ঞাহুতি গ্রহণ করুন এবং আমাদের দেহ, মন এবং আত্মাকে দুঃখ ও দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করুন। [২]
- সৎকর্ম মানুষকে দৃঢ় ও সাহসী করে। দেহ মনকে রোগ ও পাপ থেকে মুক্ত রাখে। সকল প্রতিকূলতার ওপর বিজয়ী করে। [ঋগবেদঃ ৫.১৫.৩]
- মহাপ্রভূর দৃষ্টিতে কেউই বড় নয়, কেউই ছোট নয়, সবাই সমান। প্রভূর আর্শীবাদ সবারই জন্য। [ঋগবেদঃ ৫.৬০.৫]
- সমাজকে ভালোবাসো। ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও। দুর্গতকে সাহায্য করো। সত্য ন্যায়ের সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা রাখার শক্তি অর্জন করো। [ঋগবেদঃ ৬.৭৫.৯]
- সবুজ উপত্যকার নির্জনতায় ঋষিরা লাভ করেন সজ্ঞা / প্রজ্ঞা। [ ঋগবেদ – ৮.৬.২৮]
- স্রষ্টা প্রেমের অমিয়ধারা প্রবাহিত হোক আমাদের অন্তরে, আমাদের শিরায় শিরায়। তাহলেই আমরা সকল প্রতিকূলতার মুখোমুখি দাড়াতে পারব প্রশান্ত হৃদয়ে। [ঋগবেদঃ ৮.৩২.১২]
- হে নেতা ! হে পুরোধা ! নির্ভীকভাবে সত্য ভাষণের নৈতিক শক্তিতে তোমাকে বলীয়ান হতে হবে। [ঋগবেদঃ ৮.৪৮.১৪ ]
- অলস মস্তিস্ক কু-চিন্তার সহজ শিকার। [ঋগবেদঃ ১০.২২.৮]
- কখনো জুয়া খেলবে না। পরিশ্রমলব্ধ সম্পদ ভোগ কর ও পরিতৃপ্ত থাকো। পরিশ্রমলব্ধ সম্পদই সত্যিকারের সুখ দিতে পারে। [ঋগবেদঃ ১০.৩৪.১৩]
- তন্তুং তন্বন্ রজসো ভানুমন্বিহি জ্যোতিষ্মতঃ পথো রক্ষ ধিয়া কৃতান্। অনুল্বণং বয়ত জোগুবামপো মনুর্ভব জনয়া দৈব্যং জনম্॥ (ঋগ্বেদ, ১০ মণ্ডল, ৫৩ সূক্ত, ৬ মন্ত্র।) অনুবাদ: তন্তুর বুননে যেমন বুনটের বিস্তার হয় ঠিক তেমনি আলোর পথে চলে জীবনপথ ও কর্মের বিস্তার করো। হৃদয় অন্তরীক্ষে জ্যোতির প্রকাশক পরমাত্মার পথ অনুসরণ কর, বিবেক দিয়ে কাজ করো, জ্ঞানীদের প্রদর্শিত চেতনাকে রক্ষা ও অনুসরণ করো, মানুষ হও এবং অন্যকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলো।[৩]
- মন চলে যায় আকাশে, পাতালে, পাহাড়ে, সাগরে। মনকে নিয়ে আসো নিজেরই অন্তরে, যেন তা থাকে তোমারই নিয়ন্ত্রণে। [ঋগবেদঃ ১০.৫৮.২]
- হে প্রভূ ! সামর্থ্য দাও উদ্দীপনাময় সুন্দর ও সাবলীল কথা বলার। [ঋগবেদঃ ১০.৯৮.৩]
- যে ক্ষুধার্ত সঙ্গীকে অভুক্ত রেখে একাই ভূরিভোজ করে এবং যে স্বার্থপর তার সাথে কখনো বন্ধুত্ব করো না। [ঋগবেদ-১০.১১৭.৪]
- ধনীদের উচিত দুঃস্থদের দান করা,তাদের দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া উচিত কেননা ধনসম্পদ হল রথের চাকার মত,এখন যা এখানে পরমূহুর্তেই তা অন্যখানে গতিশীল হয়। [ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৫]
সামবেদ
[সম্পাদনা]- সত্যিকারের ধার্মিক সব সময় মিষ্টভাষী ও অন্যের প্রতি সহমর্মী। [সামবেদঃ ২.৫১]
- ঈর্ষা থেকে হৃদয়কে মুক্ত করো। সহিংসতা থেকে বিরত থাকো। [সামবেদ-২৭৪]
- জীবনের প্রতিটি স্তরে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থেকো। [সাববেদঃ ৩০৭]
যজুর্বেদ
[সম্পাদনা]- হে নেতা ! হে পুরোধা ! ঈশ্বরের গুণাবলীতে গূণান্বিত হও। [যজুর্বেদঃ ১.১৮]
- স্বর্গীয় জ্যোতি ও আনন্দ উপলব্ধির প্রতীক ‘ওম’ স্পাপিত হোক তোমার হৃদয়ে অনন্তকালের জন্য। [যজুর্বেদঃ ২.১৩ ]
- কর্কশ স্বরে কথা বলো না, তিক্ত কথা যেন মুখ ফসকে বেরিয়ে না যায়। [যর্জুবেদঃ ৫.৮]
- হে মানুষ স্বনির্ভর হও ! বাইরের সাহয্যের দাসে পরিণত হয়ো না। [যর্জুবেদঃ ৬.১২]
- নিজের শত্রুকে বিনাশে সক্ষম এমন উপদেশাবলির প্রতি মনযোগী হও। [যর্জুবেদঃ ৬.১৯]
- যোগ-ধ্যানের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি জ্ঞান, সৌন্দর্য ও ক্ষমতা। আর স্বর্গীয় জ্যোতিতে স্নাত হয়ে লাভ করি পরম প্রশান্তি ও তৃপ্তি। [যর্জুবেদ-১১.২]
- হে নেতা ! হে পুরোধা ! পাহাড়ের মত দৃঢ় ও অজেয় হও। কর্তব্য পালনে সব-সময় অবিচল থাকো। [যজুর্বেদঃ ১২.১৭]
অথর্ববেদ
[সম্পাদনা]- আয় করতে হাতটিকে শতটিতে বৃদ্ধি কর আর দান করতে তাকে সহস্রটিতে রুপান্তরিত কর। [অথর্ববেদ ৩.২৪.৫]
- হে মানুষ ! সুষম জীবনাচার অনুসরণ করো। ধরিত্রী থেকে আহৃত খাবার ও পানীয় সমভাবে বন্টন করো, একটি চাকার শিকগুলো সমভাবে কেন্দ্রে মিলিত হলে যেমন গতির সন্চার হয়, তেমনি সাম্য-মৈত্রীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হও। তাহলে অগ্রগতি অবধারিত। [অথর্ববেদ-৩.৩০.৬]
- হে মানবজাতি ! তোমরা সম্মিলিতভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হও। পারস্পরিক মমতা ও শুভেচ্ছা নিয়ে একত্রে পরিশ্রম করো। জীবনের আনন্দে সম-অংশীদার হও। [অথর্ববেদ-৩.৩০.৭]
- আদিতে তিনি-ই ছিলেন। সৃষ্টির সবকিছুর উৎসও তিনি-ই। সমগ্র অস্তিত্বের তিনি-ই প্রভূ। আকাশ ও ভূ-মন্ডলে বিরাজমান সবকিছূর তিনি-ই লালনকারী। অন্য কারো কাছে নয়, শুধুমাত্র সেই মহাপ্রভূর কাছেই আমাদের সবকিছূ সমর্পন করছি। [অথর্ববেদ- ৪.২.৭]
- ধনুকের তীর নিক্ষেপের ন্যায় হৃদয় থেকে ক্রোধকে দূরে নিক্ষেপ করো। তাহলেই তোমরা পরষ্পর বন্ধু হতে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। [অথর্ববেদঃ ৬.৪২.১]
- হে মানুষ ! উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আন্তরিকতার সাথে পরিশ্রম করো। দারিদ্রতা ও অসুস্হতা তোমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে। [অথর্ববেদঃ ৬.৮১.১]
- জীবনের প্রতিটি স্তরে সব ধরনের ঋণ থেকে মুক্ত থাকো। [অথর্ববেদঃ ৬.১১৭.৩]
- ব্রক্ষার সাথে এক হয়ে যাওয়াই পরিপূর্ণ স্বাধীনতা। [ অথর্ববেদ- ৭.১০০.১]
- হে মানুষ ! ওঠো! দাড়াও ! পতিত হওয়া তোমার স্বভাবজাত নয়। জ্ঞানের আলোকবর্তিকা শুধুমাত্র তোমাকেই দেওয়া হয়েছে যা দিয়ে তুমি সকল অন্ধকূপ এড়িয়ে যেতে পার। [অথর্ববেদঃ ৮.১.৬]
- সত্যকে তিনি-ই উপলব্ধি করেছেন , যিনি জানেন দৃশ্যমান সুতোর ভেতরে প্রবহমান রয়েছে অদৃশ্য সুতো। [ অথর্ববেদ-১০.৮.৩৭]
- সত্যজ্ঞানী তিনিই, যিনি জানেন প্রভূ এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্ব বিষয়ে একক ক্ষমতার অধিকারী। প্রাণ এবং নিষ্প্রাণের সব-কিছুই তার নখদর্পণে। সকল ক্ষমতার কেন্দ্র তিনি একক অনন্য। [অথর্ব বেদঃ ১৩.৫.১৪-২১]
- একজন সমর্পিতের মতো বাচো এবং কাজ করো। তাহলেই তুমি পরিতৃপ্ত সফল জীবনের অধিকারী হতে পারবে। অমর হতে পারবে। [ অথর্ববেদ- ১৫.১৭.১০]
- অনন্ত প্রশান্তির জন্য আমরা মহাপ্রভূর ধ্যান করি। [অথর্ববেদ-১৯.৯.৪]
বেদ সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]উৎস
[সম্পাদনা]- পন্ডিত সত্যকাম বিদ্যলংকার -এর ইংরেজী অনুবাদ The Holy Vedas থেকে কিছু বাণীর সরল বাংলা মমার্থ। প্রকাশিত হয় -কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন দ্বারা
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় বেদ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে বেদ শব্দটি খুঁজুন।