রিচার্ড নিক্সন
রিচার্ড মিলহাউস নিক্সন (৯ জানুয়ারি ১৯১৩ – ২২ এপ্রিল ১৯৯৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর পূর্বে তিনি একজন রিপাবলিকান পার্টির সদস্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার একজন প্রতিনিধি এবং সিনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনাওয়ার এর নেতৃত্বাধীন ১৯৫৩ থেকে ১৯৬১ সাল অবধি ৩৬তম উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার হোয়াইট হাউসে নেতৃত্বাধীন পাঁচ বছরে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনের মধ্যকার ড্যাটেন্ট (বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বৈরিতার অবসান) সংঘটিত হয়েছিল, সর্বপ্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশযান চন্দ্রে অবতরণ এবং পরিবেশ রক্ষা সংস্থা এবং পেশাদারী নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নিক্সনের দ্বিতীয় ক্ষমতাকালীন মেয়াদ অতি দ্রুত শেষ হয়ে যায় এবং তিনিই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগকারী একমাত্র মার্কিন রাষ্ট্রপতি। তিনি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ এবং ন্যায়বিচারে বিমুখতা ইত্যাদি কারণে অভিযুক্ত রিচার্ড নিক্সন ১৯৭৪ সালে পদত্যাগ করেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- এই প্রশাসন এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে যে দুর্নীতিতে এই প্রশাসন জরাগ্রস্ত সেই দুর্নীতি অপসারণ এবং মার্কিনীদের মনে তাদের সরকারের লোকদের নৈতিকতা ও সততার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এই প্রশাসন অক্ষম।
- সিনেটর হিসেবে ১৯৫১ সালে হেনরি ট্রুম্যান প্রশাসনের বিষয়ে নিক্সনের মন্তব্য, আইজ্যাক আসিমভ'স বুক অব ফ্যাক্টস (১৯৯২)।
- উত্তর ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত বা অপমানিত করবে পারবে না। কেবল মার্কিনীরাই সেটা পারবে।
- ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিষয়ে জাতির প্রতি ভাষণ (৩ নভেম্বর ১৯৬৯)
- হ্যালো, নিল ও বাজ। আমি হোয়াইট হাউজের ওভাল কক্ষ থেকে টেলিফোনে তোমাদের সাথে কথা বলছি। আর নিঃসন্দেহে এটি আজ পর্যন্ত হওয়া টেলিফোন কলগুলোর মাঝে সবচেয়ে ইতিহাসবিখ্যাত। প্রত্যেক মার্কিনীদের জন্য সম্ভবত আজকের দিনটি সবচেয়ে গর্বের। আর আমি নিশ্চিত বাকি বিশ্বও মার্কিনীদের সাথে মিলে এই অসাধারণ সাফল্যের কথা স্বীকার করছে। কারণ তোমরা যা করেছ তার ফলে স্বর্গ এখন মানবজগতের অংশ হয়ে গেছে। এখন যখন তোমরা সী অব ট্র্যাঙ্কুইলিটি থেকে আমাদের সাথে কথা বলছ, তখন এটা আমাদেরকে পৃথিবীর ট্র্যাঙ্কুইলিটি (শান্তি) প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করে দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। এই একটি অমূল্য সময়ের জন্য পুরো মানব ইতিহাস, পৃথিবীর সকল মানুষ সবাই এক হয়ে গেছে।
- ওভাল অফিস থেকে চাঁদে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ আল্ড্রিনকে টেলিফোন বার্তা। (২০ জুলাই ১৯৬৯)
- ১৮ বছর বয়সীদের কেন ভোটদানের অধিকার থাকা উচিত সেই কারণটি আমি আপনাদের বলছি। অনেকে বলে যদি আপনি লড়াই করার উপযুক্ত হন, তাহলে আপনি ভোটদানের উপযুক্ত। এটা অনেকগুলো কারণের একটা, কিন্তু এটাই সেরা কারণ নয়। যে কারণে ১৮ বছর বয়সীদের ভোটদানের অধিকার থাকার উচিত যা হলো যে তারা (১৮ বছর বয়সীরা) ভোটদানের যোগ্য বুদ্ধিমান। তারা জানে। তারা আগ্রহী, আর তারা মাত্র ২০ বছর আগে ২১ বছর বয়সীরা যে পরিমাণ আগ্রহী ছিল তাদের চেয়েও বেশি আগ্রহী।
- রাষ্ট্রপতি কিছু করলে সেটা বেআইনী নয়।
- ডেভিড ফ্রস্টের সাথে সাক্ষাৎকার, ১৯ মে ১৯৭৭। পুনঃমুদ্রন: নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২০ মে ১৯৭৭। এ ছাড়াও উপলব্ধ: "Nixon's Views on Presidential Power: Excerpts from an Interview with David Frost [Archive"]
- যে দেশ কেবল শান্তিপূর্ণ উপায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়, সে দেশ দ্রুতই অন্য দেশের অংশে পরিণত হবে।
- নো মোর ভিয়েতনাম (১৯৮৭)
রিচার্ড নিক্সন সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- যদি রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছায় চলত তাহলে আমরা প্রতি সপ্তাহে পারমাণবিক যুদ্ধে জড়াতাম।
- হেনরি কিসিঞ্জার; নিক্সন সম্পর্কে উক্তিটি উল্লেখ হয়েছে গ্যারি জে. বাস রচিত বই দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম: নিক্সন, কিসিঞ্জার এন্ড অ্যা ফরগেটেন জেনোসাইড (২০১৪)-এ।
- সত্যিটা হলো এই যে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী দেশ ছিল। কিন্তু এক শতাব্দীর মাত্র এক-চতুর্থাংশ পার হতেই আজ নিক্সন সাহেব যাকে "বেচারা অসহায় দানব" বলেছেন, তা যেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটিরই বিবরণ।
- হান্নাহ আরেন্দত, ক্রাইসিস অব দ্য রিপাবলিক (১৯৭২)।
- ইউ, এস, এইডের প্রতিনিধি মরিস উইলিয়াম প্রথমে পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ঢাকা সফরের পর তিনি বোধ হয় মত পরিবর্তন করেন। পরবর্তীকালে এণ্ডারসন পেপারস থেকে দেখা যায় যে পাকিস্তান সমর্থন নিতান্তই ওপরের তলার ব্যাপার ছিল। প্রেসিডেণ্ট নিক্সন আর তার উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারই সে কার্যক্রমের হোতা ছিলেন।
- এ এম এ মুহিত, "এ এম এ মুহিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড), হাক্কানী পাবলিশার্স, ২০০৯।
- হোয়াইট হাউজে নিক্সনের উপস্থিতি কেবল কৃষ্ণাঙ্গ নয়, শেতাঙ্গদের জন্যেও চরম বিপর্যয়।
- জেমস বাল্ডউইন, ১৯৭০ সালে এক সাক্ষাৎকারে, লুইস এইচ. প্র্যাট ও ফ্রেড এল. স্ট্যান্ডলি সম্পাদিত কনভারসেশন উইথ জেমস বাল্ডউইন (১৯৮৯)।
- রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিক্সনের প্রথম কাজ ছিল হোয়াইট হাউজকে ফাঁকি দিয়ে নিজের গোপন শান্তি পরিকল্পনা ধামাচাপা দেওয়া যাতে কেউ সেসব খুঁজে না পায় কারণ সেগুলো জাতীয় নিরাপত্তা ভঙ্গ করেছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পাদনের পরে তিনি জোরকদমে তার পরবর্তী লক্ষ্য পূরণে কাজ শুরু করেন যেন তিনি তার দীর্ঘদিনের লক্ষ্যটি পূরণ করতে পারেন আর তা হলো পূণরায় নির্বাচিত হওয়া।
- ডেভ ব্যারি, Dave Barry Slept Here: A Sort of History of the United States (১৯৮৯)।
- রাষ্ট্রপতি নিক্সন আমার দেখা সবচেয়ে অসৎ ব্যক্তি। তিনি তার স্ত্রীকে, পরিবারেকে, বন্ধুদেরকে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সহকর্মীদেরকে, তার নিজের দলের আজীবন সদস্যদেরকে, মার্কিন নাগরিকদেরকে এবং বিশ্বকে মিথ্যা কথা বলেছেন।
- ব্যারি গোল্ডওয়াটার, তাঁর স্মৃতিকথা গোল্ডওয়াটার (১৯৮৮) বইয়ে।