হেনরি কিসিঞ্জার
হেনরি কিসিঞ্জার (১৯২৩ - ২০২৩) ছিলেন একজন জার্মান বংশোদ্ভূত আমেরিকান রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, এবং শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রিচার্ড নিক্সন এবং জেরাল্ড ফোর্ড প্রশাসনের সময় কিসিঞ্জার মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমাপ্তি, চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে স্নায়ুযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার কৃতিত্বের জন্য কিসিঞ্জার ১৯৭৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তবে তার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সমর্থন, চিলি ও পূর্ব তিমুরে সামরিক অভ্যুত্থানে মার্কিন সম্পৃক্ততা এবং কম্বোডিয়ায় গোপন বোমা হামলার মতো ঘটনায় তার ভূমিকার জন্য তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিতও হয়েছিলেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে কারো উদ্দেশ্য আপনাকে হত্যা করা তাহলে তারা যে আপনাকে মিথ্যা কথা বলবে এটা বিশ্বাস করা অযৌক্তিক নয়।
- প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মি কর্তৃক ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান বিষয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের মন্তব্য। উল্লেখ হয়েছে: মিকাইল ক্রামের, দ্য কেস ফর স্কেপটিসিজম টাইম, টাইম, ২৬ ডিসেম্বর ১৯৮৮।
- আমি মনে করি, বাঙালিরা খুব ভালো যোদ্ধা নয়।
- গ্যারি জে. বাস, দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম: নিক্সন, কিসিঞ্জার এন্ড অ্যা ফরগেটেন জেনোসাইড (২০১৪)।
- অবশ্যই বাঙালিদেরকে শাসন করা পুরো ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল।
- গ্যারি জে. বাস, দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম: নিক্সন, কিসিঞ্জার এন্ড অ্যা ফরগেটেন জেনোসাইড (২০১৪)।
- সৎ বিশ্বাস এবন সমঝোতায় আসার ইচ্ছা থাকলে কূটনীতিই সব আন্তর্জাতিক বিরোধের সমাধান করতে পারে এটা ভাবা ভুল।
- A World Restored: Metternich, Castlereagh and the Problems of Peace, 1812-22 (১৯৫৭)।
- আমি নিজেকে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কম আর ইতিহাসবিদ হিসেবে বেশি মনে করি। ইতিহাসবিদগণ জানেন যে ইতিহাসে যত সভ্যতা ছিল সবই একসময় ধ্বংস হয়ে গেছে। ইতিহাস হলো ব্যর্থ প্রচেষ্টা, অপূর্ণ স্বপ্ন এবং আশাহত হওয়ার গল্প। তাই যে ইতিহাসবিদ তাকে ধ্বংসের চূড়ান্ত ফলাফলের কথা মাথায় রেখে বাঁচতে হয়। আর রাষ্ট্রনায়ককে বাঁচতে হয় এটা ভেবে যে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
- নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার (অক্টোবর ১৩, ১৯৭৪)।
- ইসরাইলের নিরাপত্তা (নিশ্চিত করা) সকল মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।
- ওয়েডেনফেল্ড ও নিকলসন, For the Record: Selected Statements 1977-1980, ১৯৮১।
- যদি রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছায় চলত তাহলে আমরা প্রতি সপ্তাহে পারমাণবিক যুদ্ধে জড়াতাম।
- নিক্সনের সম্পর্কে হেনরি কিসিঞ্জারের মন্তব্য, গ্যারি জে. বাস, দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম: নিক্সন, কিসিঞ্জার এন্ড অ্যা ফরগেটেন জেনোসাইড (২০১৪)।
- যদি পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে রাশিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।
- Henry Kissinger’s warning: “If Putin uses the atomic bomb, Russia will be destroyed”, নিউ ইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র), অক্টোবর ১, ২০২২।
হেনরি কিসিঞ্জার সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- চীন-আমেরিকা সম্পর্ক পুনঃনির্মাণের সেতু হিসেবে পাকিস্থানকে ব্যবহারের নীতির অন্যতম স্থপতি হেনরী কিসিঞ্জার যে বাংলাদেশের ঘটনাক্রমের ওপর কোনও শুভ প্রভাব বিস্তার করেননি তা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না।
- অধ্যাপক সারওয়ার মুর্শেদ, "সারওয়ার মুর্শেদ", বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড), ২০০৯, হাক্কানী পাবলিশার্স, ঢাকা।
- ইউ, এস, এইডের প্রতিনিধি মরিস উইলিয়াম প্রথমে পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ঢাকা সফরের পর তিনি বোধ হয় মত পরিবর্তন করেন। পরবর্তীকালে এণ্ডারসন পেপারস থেকে দেখা যায় যে পাকিস্তান সমর্থন নিতান্তই ওপরের তলার ব্যাপার ছিল। প্রেসিডেন্ট নিক্সন আর তার উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারই সে কার্যক্রমের হোতা ছিলেন।
- এ এম এ মুহিত, "এ এম এ মুহিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড), হাক্কানী পাবলিশার্স, ২০০৯।
- আমি বিশ্বাস করি যে হেনরি কিসিঞ্জার লাতিন আমেরিকায় অনৈতিক কাজ করেছেন। তিনি একজন খুনিকে সমর্থক করেছেন আর আমি দ্বিধান্বিত হই এটা ভেবে যে একজন ইহুদি এরকম খারাপের সমর্থন করছেন। আমার মতে, যেসব ইহুদি আমাদের লোকেদের ভালো জীবনযাপনে উৎসাহিত করে তারা এরকম নয়। এখনও কিসিঞ্জারের এত ক্ষমতা থাকা নিয়ে আমি দ্বিধাবোধ করি।
- মার্জোরি আগোসিন, দ্য ফরোয়ার্ডের সাথে সাক্ষাৎকার, ৬ অক্টোবর ২০১৬।
- আপনি কখনও একবার কম্বোডিয়ায় গেলে কখনই হেনরি কিসিঞ্জারকে নিজের খালি হাতে পিটিয়ে হত্যা করার ইচ্ছা দমন করতে পারবেন না।
- অ্যান্থনি বৌরডাইন, A Cook's Tour: In Search of the Perfect Meal (২০০১)।
- হেনরি কিসিঞ্জার। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক লোক নিক্সন ও ফোর্ডের প্রাক্তন স্টেট সেক্রেটারি হেনরি কিসিঞ্জারকে একজন জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক মনে করেন, বাকি বিশ্ব তাকে একজন যুদ্ধাপরাধী মনে করে যে চিলি, ভিয়েতনাম, লাওস, আর্জেন্টিনা, পূর্ব তিমুর ও ক্যাম্বোডিয়ায় লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও যন্ত্রণার জন্য দায়ী।
- এমি গুডম্যান, The Exception to the Rulers: Exposing Oily Politicians, War Profiteers, and the Media That Love Them (২০০৪)।
- আমার মনে হয় ক্লাসের সেরা ছাত্র হওয়ার ফলে হেনরি কিসিঞ্জার ইগো আর ইনসিকিউরিটির মিশ্রণে বড় হয়েছেন। কারণ তিনি জানতেন তিনি অন্য সবার চেয়ে অনেক বুদ্ধিমান কিন্তু ইহুদি হওয়ার জন্য তাকে মার খেতে হয়েছে।
- ওয়াল্টার আইস্যাকসন, দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার (২০০২)।
- যেদিন হেনরি কিসিঞ্জার নোবেল শান্তি পুরুষ্কার পেয়েছে, সেদিন থেকে রাজনৈতিক ব্যাঙ্গ বিষয়টি লুপ্ত হয়ে গেছে।
- টম লেহরার, ১৯৭৩ সালে এক বক্তব্যে। উল্লেখ হয়েছে: সিডনি মর্নিং হেরাল্ড (১ মার্চ ২০০৩)।
- আমি বিশ্বাস করি এই দেশের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) আধুনিক ইতিহাসে হেনরি কিসিঞ্জার হলেন সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক স্টেট সেক্রেটারিগণের মাঝে একজন। আমি এটা বলতে গর্ববোধ করি যে হেনরি কিসিঞ্জার আমার বন্ধু নয়। আমি হেনরি কিসিঞ্জারের নিকট হতে কোনো পরামর্শ নেবো না। ক্যাম্বোডিয়ায় কিসিঞ্জারের কার্যকলাপ তথা যুক্তরাষ্ট্রের দেশটিতে বোমা নিক্ষেপ করা ও প্রিন্স সিহানোককে ক্ষমতা থেকে সরানোই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে যা পল পট ও খেমার রুজ যারা পরে ৩০ লক্ষ্য নিরিহ লোককে হত্যা করেছে তাদের ক্ষমতায় আসার পথ করে দিয়েছে। যাই যারা হেনরি কিসিঞ্জারের কথা শুনতে নারাজ তাদের একজন হিসেবে আমাকে গুণবেন।
- বার্নি স্যান্ডার্স, ২০১৬ এ ডেমোক্র্যাটদের রাষ্ট্রপতি বিতর্কে উক্তিটি করেছিলেন তিনি। উল্লেখ হয়েছে: এমি গুডম্যান, "Kissinger at 100: New War Crimes Revealed in Secret Cambodia Bombing That Set Stage for Forever Wars", ডেমোক্রেসি নাও, ২৪ মে ২০২৩।
- ২০০৩ সালে জর্জ ডাব্লিউ. বুশকে ইরাক আক্রমণ করা থেকে আটকাতে আমার যা করার ছিল সব করেছি। হিলারি ক্লিনটন ইরাক আক্রমণ সমর্থন করেছিলেন। এক বিতর্কে ক্লিনটন বলেছিলেন যে হেনরি কিসিঞ্জার একজন বন্ধু ও মেন্টর। আমি বলেছিলাম যে সে জঘন্য স্টেট সেক্রেটারি, যুদ্ধাপরাধী এবং এমন একজন, স্যান্ডর্সের প্রশাসনে যার কোনো ভূমিকা থাকবে না।
- বার্নি স্যান্ডার্স, Where We Go from Here (২০১৮)।
- কিসিঞ্জার একজন জঘন্য পণ্ডিত। আমি কমরেড জুয়ান থুই এবং কিসিঞ্জারের মধ্যে বৈঠকের প্রতিবেদনটি পড়েছি। এর শেষ অংশটা খুবই মজার। কিসিঞ্জার হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক যিনি কূটনীতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।