অক্ষয়কুমার বড়াল
অবয়ব
অক্ষয়কুমার বড়াল (১৮৬০ – ১৯ জুন ১৯১৯) হলেন উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি। ছাত্রাবস্থাতেই অক্ষয়কুমার বাংলা গীতিকবিতার প্রবর্তক বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাঁর কাব্যপ্রেরণাতেই তিনি কবিতা রচনায় মনোনিবেশ করেন। বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে তিনি ‘বড়াল কবি নামে সুপরিচিত। নিসর্গ, প্রেম, শোক এবং মানববন্দনাবিষয়ক কবিতা রচনায় তিনি স্বকীয়তার পরিচয় রেখেছেন। কাব্য ও নাটক মিলে তিনি অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেছেন। অক্ষয়কুমারের মধ্যে প্রধান কয়েকটি গ্রন্থ হলো: প্রদীপ, কনকাঞ্জলি, ভুল, শঙ্খ, এষা, চন্ডীদাস প্রভৃতি। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থগুলির মধ্যে রাজকৃষ্ণ রায়ের কবিতা এবং গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর অশ্রুমালা উল্লেখযোগ্য।
উক্তি
[সম্পাদনা]- চাতক কাতরে ডাকে, চরে বক নদী-বাঁকে,
ডাকে কুবো কুব্ কুব্ লুকায়ে কোথায়!
গাভী শুয়ে তরুতলে, হংসী ডুবে উঠে জলে,
ডিঙ্গাখানি বেঁধে কুলে জেলে ঘরে যায়।- মধ্যাহ্নে, শঙ্খ- অক্ষয়কুমার বড়াল, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলিকাতা, প্রকাশকাল- আশ্বিন, ১৩২০ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১২১
- মরণে কি মরে প্রেম? অনলে কি পুড়ে প্রাণ?
বাতাসে কি মিশে গেল সে নীরব আত্ম-দান?
জীবন-জড়ান সত্য— সকলি কি মিথ্যা আজ?
গৃহ ছাড়ি’ গৃহ-লক্ষ্মী শুইয়া শ্মশান-মাঝ!
সহসা নিদ্রার মাঝে এ কি জাগরণ মম!- মৃত্যু, এষা গীতিকাব্য- অক্ষয়কুমার বড়াল, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলিকাতা, প্রকাশকাল- ১৩১৯ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ২৯
- আমরা জীবন গড়ি,
মরণে মধুর করি,
নিরাশায় দেই আশা;
শিশুরে হৃদয়ে টানি,
রমণীরে দেবী মানি,
যুবজনে ভালবাসা।- কবি, শঙ্খ- অক্ষয়কুমার বড়াল, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলিকাতা, প্রকাশকাল- আশ্বিন, ১৩২০ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ২৬
- দাও প্রেম—আরো প্রেম, চির-প্রেমময়!
আরো জ্ঞান, আরো ভক্তি,
আরো আত্মজয়-শক্তি—
তোমার ইচ্ছায় কর মোর ইচ্ছা লয়।
জীবন—মরণ-পানে
বহে যাক্ সুরে গানে,
হোক্ প্রেমামৃত-পানে অমর হৃদয়!- সান্ত্বনা, এষা গীতিকাব্য- অক্ষয়কুমার বড়াল, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলিকাতা, প্রকাশকাল- ১৩১৯ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১৬৬-১৬৭
- মূর্ত্তিমতী হ’য়ে, সতী, এস ঘরে ঘরে,
রাখ’ ক্ষুদ্র কপর্দ্দকে রাঙ্গা পা দু’খানি!
ধান্য-শীর্ষ স্বর্ণ-ঝাঁপি লও রাঙ্গা করে—
ভুলে’ যাই—সর্ব্ব দৈন্য, সর্ব্ব দুঃখ গ্লানি!- বঙ্গভূমি, শঙ্খ- অক্ষয়কুমার বড়াল, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলিকাতা, প্রকাশকাল- আশ্বিন, ১৩২০ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ৭৭
অক্ষয়কুমার বড়াল সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- অক্ষয়কুমার বেশ সদালাপী ও মিশুক মানুষ ছিলেন। সাদাসিধে সাজ-পোষাক। প্রকৃতিটি নিরীহ। তাঁকে অহমিকা প্রকাশ করতে বা খুব জোর দিয়ে কোন কথা বলতে শুনি নি। প্রায়ই সন্ধ্যার মুখে তিনি বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়তেন, তারপর গিয়ে বসতেন বিভিন্ন সাহিত্য বৈঠকে।
- হেমেন্দ্রকুমার রায়, যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক— নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৫-১২৬
- কবি অক্ষয়কুমার বড়ালের নারী কোন রূপক রূপিণী নয়; নারীর জীবন্ত মূর্ত্তি।……পত্নীবিয়োগের পর তাঁর কাব্যলক্ষ্মীকে গৃহলক্ষ্মীরূপে চিনতে পেরে যে শোকগাথা কবি গেয়েছেন, নারীজাতির সেই স্তবগাথা, আর্য্যঋষিদেরই সমুচ্চারিত বাণীর তাহা প্রতিধ্বনি।
- অনুরূপা দেবী, সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী , প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪২-৩৪৩
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় অক্ষয়কুমার বড়াল সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে অক্ষয়কুমার বড়াল সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।