বিষয়বস্তুতে চলুন

অনুরূপা দেবী

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
গানের সঙ্গে যখন প্রাণের ঘনিষ্টতর সংযােগ ঘটিয়া উঠে, তখন গানের বাণী আর বাহিরের শব্দ মাত্র থাকে না, তাহা প্রাণের কথায় পরিণত হইয়া যায়, গান তখন ধ্যানের আসন গ্রহণ করে।
—অনুরূপা দেবী

অনুরূপা দেবী (৯ সেপ্টেম্বর ১৮৮২ - ১৯ এপ্রিল ১৯৫৮) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি নারী ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, কবি এবং সমাজ সংস্কারক। সাহিত্যিক ও সমাজ-সংস্কারক ভূদেব মুখোপাধ্যায় ছিলেন অনুরূপা দেবীর ঠাকুরদা এবং বঙ্গীয় নাট্যশালার প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তার দাদামশাই। অনুরূপা দেবীর দিদি সুরূপা দেবী ছিলেন সেই সময়কার অপর এক বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও কবি। দিদি সুরূপা দেবীর অনুপ্রেরণায় তিনি সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। তিনি ৩৩টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তার অন্যান্য জনপ্রিয় উপন্যাসগুলি হল বাগ্দত্তা, জ্যোতিঃহারা, মন্ত্রশক্তি, মহানিশা, মা, উত্তরায়ণ ও পথহারা।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • প্রলয়ের পর সৃষ্টি হয়, যুদ্ধের পর ক্ষণিকের জন্যও একটা সাময়িক শান্তি আসে, সেই সময় সেই যুদ্ধ ক্লান্ত জনগণ আত্মবিনোদনের জন্যও বটে এবং বিগত ব্যাপারটাকে সম্যকরূপে প্রণিধান করে নে’বার জন্যও বটে, সৃষ্টিকার্যে নিরত তার প্রধান সহায়ক হয় সাহিত্য। এমনি করেই রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়ডের সৃষ্টি হয়েছিল; এমনি করেই গত যুদ্ধের পর যুদ্ধমান দেশসমূহে বহু ইতিহাস, উপন্যাস, নাটকাদির সৃষ্টি হয়েছিল।
    • সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পরিশিষ্ট, পৃষ্ঠা ৪৩১
  • গানের সঙ্গে যখন প্রাণের ঘনিষ্টতর সংযােগ ঘটিয়া উঠে, তখন গানের বাণী আর বাহিরের শব্দ মাত্র থাকে না, তাহা প্রাণের কথায় পরিণত হইয়া যায়, গান তখন ধ্যানের আসন গ্রহণ করে।
    • হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- ভূদেব পাব্লিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮১
  • আজ দু তিন বৎসর ধ’রে মাসিমা তাঁকে কথা দিয়ে রেখেছেন, তিনি তোমার জন্য নিজের প্রাণোৎসর্গ ক’রে মানুষ হবার চেষ্টা করছেন। এখন হঠাৎ এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা কর‍্লে সে কি ধর্ম্মেই সইবে?” সুমিত্রা হঠাৎ সেলাইটা ফেলিয়া দিয়া বোনের কাঁধে মুখ লুকাইল। “কলী, চুপ কর ভাই! তাঁকে বলিস, দিদি তার বাপ মাকে রক্ষা করবার জন্য আত্মবলি দিয়েছে। জীবনে যে নরক যন্ত্রণা সইতে যাচ্চে, তার মরণের পরে নরকের ভয় কোথা?” কল্যাণী চুপ করিয়া রহিল।
    • অযাচিত, মধুমল্লী - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৪-১১৫
  • কিন্তু দুদিন যাইতে না যাইতেই বুঝিতে পারা গেল যে, নিরঞ্জনের কাছে বিদ্যাশিক্ষা করিতে যাওয়ার মধ্যে অসুবিধা তার যতই থাক না কেন, বুঝি আনন্দও একটুখানি কোথায় যেন ছিল। সেই আপ্‌নাভোলা অসহায় ও নিঃসঙ্গ জীবটাকে সে যে ঘণ্টাখানেকেও একটুখানি কাজ দিয়া রাখে; এইটুকু হইতেও সেই কর্ম্মহীন দীর্ঘ অবসরের ক্লান্ত জীবনটকে বঞ্চিত করা তার কাছে হঠাৎ যেন চৌর্য্যের মতই অপরাধজনক ঠেকিল। আর এই অবসরে এই বিপুল রাজপ্রাসাদের অসংখ্য দাসদাসীবর্গের দ্বারায় উৎপীড়িত উপদ্রুত মানুষটাকে সে যে কতকটা রক্ষা করিয়াও চলিতেছিল, সেইটুকুকে হারাইয়া ফেলায় তার মন আজ পীড়া বোধ করিতে লাগিল।
    • হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী, পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ, প্রকাশক- ভূদেব পাব্লিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৩-১২৪
  • রজনীকান্ত সেনের রচনার সঙ্গে এ-যুগের ছেলেমেয়েদের পরিচয় ক্রমেই কমে আসছে, খুবই দুঃখের কথা সন্দেহ নেই। তাঁর গানের সম্মোহিনী মায়া দেশবাসী এত শীঘ্র না কাটালেই গুণগ্রাহিতার পরিচয় দিত। তাঁর “মাতৃবর্ণনা” একটি অতুলনীয় সম্পদ;—
    • সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ৩৭৮
  • মানুষের হৃদয়রহস্য যে দেবতাদেরও অপরিজ্ঞাত,—এ কথা অস্বীকার করা চলে না; এবং বোধ করি অস্বীকারও কেহ করে না! কিসে যে তার সুখ, আর কত অল্পেই যে তার দুঃখ, সে বুঝিয়া ওঠাই ভার।
    • হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী, অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ, প্রকাশক- ভূদেব পাব্লিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৮
  • কবি অক্ষয়কুমার বড়ালের নারী কোন রূপক রূপিণী নয়; নারীর জীবন্ত মূর্ত্তি।……পত্নীবিয়োগের পর তাঁর কাব্যলক্ষ্মীকে গৃহলক্ষ্মীরূপে চিনতে পেরে যে শোকগাথা কবি গেয়েছেন, নারীজাতির সেই স্তবগাথা, আর্য্যঋষিদেরই সমুচ্চারিত বাণীর তাহা প্রতিধ্বনি।
    • সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪২-৩৪৩
  • সেবা যত্ন যতদূর সম্ভব তার কোনই ত্রুটি নাই। বায়ু পরিবর্ত্তন, ঘরের বজরায় গঙ্গাবক্ষে বায়ু সেবন—সবই হইল, শেষে একদিন সেই অমূল্য জীবন-প্রদীপটি নির্ব্বাপিত হইয়া গেল। সজ্ঞানে সানন্দে সর্ব্বকর্ম্মসমাপ্তির প্রশান্ত পরিতৃপ্তির সহিত সে যেন মহাপ্রস্থান, মৃত্যু নয়,—অমরত্বের পথে বিজয়যাত্রা!
    • আলোছায়া, ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫১
  • মোহিতলাল মজুমদারের কবিতায় অনেক বিচিত্র ধরণের নারীচিত্র দেখা যায়। তাঁহার “উর্ব্বশী পুরূরবা” এবং “নুরজাহান” উল্লেখযোগ্য।
    • সাহিত্যে নারী চরিত্র, সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৮৭

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]