উপনিষদ
অবয়ব
উপনিষদ্ হচ্ছে হিন্দুধর্মের এক বিশেষ ধরনের ধর্মগ্রন্থের সমষ্টি। এই গ্রন্থসমূহে হিন্দুধর্মের তাত্ত্বিক ভিত্তিটি আলোচিত হয়েছে। উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, উপনিষদ্গুলোতে সর্বোচ্চ সত্য স্রষ্টা বা ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং মানুষের মোক্ষ বা আধ্যাত্মিক মুক্তি লাভের উপায় বর্ণিত হয়েছে। উপনিষদ্গুলো মূলত বেদ- পরবর্তী ব্রাহ্মণ ও আরণ্যক অংশের শেষ অংশে পাওয়া যায়। এগুলো প্রাচীনকালে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত ছিল।
উক্তি
[সম্পাদনা]- জগতে যাহা কিছু প্রপঞ্চভূত চঞ্চল বিষয় আছে, সেই সমুদায়কে ঈশ্বরদ্বারা আচ্ছাদন করিতে হইবে, অর্থাৎ সমস্তই ঈশ্বরময় এরূপ জানিয়ো। বিষয়বৃদ্ধি ত্যাগ করিতে হইবে। সেই ত্যাগদ্বারা অর্থাৎ বিষয়- বৃদ্ধি ত্যাগ করিয়া পরমাত্মাকে সম্ভোগ কর; অর্থাৎ ঈশ্বরপ্রদত্ত বিষয়- দ্বারা ভোগনির্ব্বাহ কর, কাহারো ধনে আকাঙ্ক্ষা করিও না।
- ঈশোপনিষদ, ১ম খণ্ড, ১ নং মন্ত্র
- যখন সমুদায় প্রাণী নিদ্রিত থাকে, তখন যে পুরুষ জাগ্রত থাকিয়া কাম্যবস্তু পরম্পরা নির্মাণ করেন, তিনিই উজ্জ্বল, তিনিই ব্রহ্ম, তিনিই অমৃত বলিয়া উক্ত হন। পৃথিব্যাদি সমুদায় লোক তাঁহাতে আশ্রিত রহিয়াছে। কেহই তাঁহাকে অতিক্রম করিতে পারে না। ইনিই সেই আত্মা।
- কঠোপনিষদ, ৫ম বল্লী, ৮ নং মন্ত্র
- যিনি অনিত্য বস্তুসমূহের মধ্যে নিত্য, যিনি চেতনাবান- দিগের চেতন, যিনি একাকী অনেকের কাম্যবস্তু সকল বিধান করিতেছেন, তাঁহাকে যে জ্ঞানিগণ আপনাতে দর্শন করেন, তাঁহাদেরই নিত্য শান্তি, অপরের নহে।
- কঠোপনিষদ, ৫ম বল্লী, ১৩ নং মন্ত্র
- যেমন ঊর্ণনাভ নিজ শরীর হইতে তন্তু বাহির করে এবং পুনরায় গ্রহণ করে, যেমন পৃথিবীতে ওষধি জন্মে, যেমন জীবিত পুরুষ হইতে কেশ লোম জন্মে, তেমনি এখানে অর্থাৎ সংসার-মণ্ডলে অক্ষয় পুরুষ হইতে সমুদয় উৎপন্ন হয়।
- মুণ্ডকোপনিষদ, ১ম খণ্ড, ৭নং মন্ত্র
- যাহারা অজ্ঞানতায় অবস্থিত, অথচ আপনাদিগকে বুদ্ধিমান ও পণ্ডিত বলিয়া মনে করে, সেই সকল মূঢ় ব্যক্তিরা জরা রোগাদি অনর্থ সমূহ দ্বারা অতিশয় পীড়্যমান হইয়া অন্ধ-কর্তৃক নীয়মান অন্ধদিগের ন্যায় পরিভ্রমণ করে।
- মুণ্ডকোপনিষদ, ২য় খণ্ড, ৮ নং মন্ত্র
- নানা প্রকারে অজ্ঞানতায় অবস্থিত থাকিয়া অর্থাৎ অজ্ঞানতা- প্রসূত নানা প্রকার কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত থাকিয়া অজ্ঞানীরা 'আমরা কৃতার্থ' এরূপ অভিমান করে। যে হেতু কর্মীরা কর্মফলে আসক্তি বশতঃ ব্রহ্মতত্ত্ব সবিশেষ জানিতে পারে না, সেই জন্য তাহাদের কর্মফল ক্ষয় হইলে তাহারা দুঃখার্ত হইয়া স্বর্গলোক হইতে পতিত হয়।
- মুণ্ডকোপনিষদ, ২য় খণ্ড, ৯ নং মন্ত্র
- যাঁহাতে দ্যুলোক, পৃথিবী ও আকাশ এবং সমুদায় প্রাণ ও মন, ধৃত রহিয়াছে, সেই একমাত্র আত্মাকেই জান, অন্য কথা পরিত্যাগ কর ইনি অমৃতত্বের সেতু অর্থাৎ মোক্ষলাভের উপায়।
- মুণ্ডকোপনিষদ, ৫ নং মন্ত্র
উপনিষদ সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় উপনিষদ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।