কাগজ
অবয়ব
কাগজ হলো এক ধরনের অত্যন্ত পাতলা বস্তু বা উপাদান যা সাধারণত লিখতে বা চিত্র অঙ্কনে ব্যবহার করা হয়। লেখা ছাড়াও কাগজ ছাপার কাজে এবং কোন দ্রব্যের মোড়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কাগজ প্রধানত আঁশ জাতীয় উপাদান যেমন বাঁশ, কাঠ, ঘাস প্রভৃতি থেকে তৈরি করা হয়।
উক্তি
[সম্পাদনা]- বড়ো বড়ো রুল কাটা কাগজ
নষ্ট বাবা করেন না কি রোজ?
আমি যদি নৌকো করতে চাই
অম্নি বল ‘নষ্ট করতে নাই’
সাদা কাগজ কালো
করলে বুঝি ভালো?- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমালোচক, শিশু- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫১
- কিন্তু পড়বার বই বা মাসিক কাগজপত্র ছাপবার জন্য যে-সব বড়ো-বড়ো প্রেস থাকে, সেগুলো আরো খটমটে। তাতে একটা প্রকাণ্ড লোহার চোঙা থাকে, তার গায়ে কাগজ ঠেলে দিলে সে আপনি কাগজ টেনে নেয়। একটা লোহার টেবিল মতো থাকে, তার উপর টাইপ বসানো; সেই টেবিলটা টাইপসুদ্ধ ছুটাছুটি করে। একবার রুলের তলা দিয়ে ছুটে কালি মেখে এসে আবার কাগজ-জড়ানো চোঙার নীচ দিয়ে গড়াতে গিয়ে চোঙাটাকে চেপে ঘুরিয়ে কাগজের গায়ে ছাপ মেরে দেয়। ছাপা হয়ে গেলে কাগজটাকে হাতে করে সরিয়ে নিতে হয় না-প্রেসটা আপনি তাকে ঠিক জায়গায় এনে ফেলে দেয়। এমনি করে ঘণ্টায় দু-তিন হাজার বেশ সহজেই ছাপা যায়।
- সুকুমার রায়, ছাপাখানার কথা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৪
- ছুটি হলে রোজ ভাসাই জলে
কাগজ-নৌকাখানি।
লিখে রাখি তাতে আপনার নাম,
লিখি আমাদের বাড়ি কোন্ গ্রাম
বড়ো বড়ো ক’রে মোটা অক্ষরে
যতনে লাইন টানি।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাগজের নৌকা, শিশু- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৯
- কাঠ থেকে যে কাগজ তৈরি হয়, তা বোধ হয় তোমরা সকলেই জান। যত খবরের কাগজ দেখ, সে-সমস্তই কাঠের কাগজে ছাপা। কেবল কাগজ তৈরির জন্যই। প্রতি বৎসর প্রায় দশকোটি মণ কাঠের দরকার হয়। কাঠওয়ালারা কাঠকে পিটিয়ে থেঁৎলিয়ে সিদ্ধ করে একটা অদ্ভুত জিনিস বানায়, তার নাম ‘উড্পাল্প' (Wood-Pulp)। বাংলায় ‘কাঠের আমসত্ত’ বললে বর্ণনাটা নেহাত মন্দ হয় না। কাগজওয়ালারা নানা দেশ থেকে এই অপরূপ আমসত্ত কিনে এনে তা দিয়ে কাগজ বানায়। আগে এইরকমে কেবল সাধারণ সস্তা এবং খেলো কাগজই তৈরি হত কিন্তু আজকাল কাঠকে নানারকম প্রক্রিয়ায় ধুয়ে এমন পরিষ্কার এবং বিশুদ্ধ করা হচ্ছে যে তা থেকে খুব উচু দরের ভালো কাগজ পর্যন্ত তৈরি হতে পারে।
- সুকুমার রায়, কাঠের কথা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭৩
- কাগজ-গড়া এ-সভ্যতা
কাগজ-ভরা মসৃণতা।
ছিনিয়ে নাও! ছিনিয়ে নাও।
হাসতে দাও, কাঁদতে দাও!
বাঁচতে দাও, মরতে দাও!- কাগজ, ভুখ-মিছিল ও অন্যান্য কবিতা- দিনেশ দাস, প্রকাশক- দি বুক এম্পোরিয়াম লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- আষাঢ় ১৩৫১ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১৬
- চিঠির কাগজখানি সাধারণ বাজারে কাগজ নহে, সাধারণ লােকে সে কাগজ ব্যবহার করা দূরে থাকুক, কখনও দেখিয়াছে কি না বলা যায় না। কাগজখানি আলােকের দিকে ধরিলাম; দেখিলাম, জলের অক্ষরে কি একটা কোম্পানীর নাম লেখা রহিয়াছে। সম্ভবত সেই কোম্পানিই ঐ প্রকারের চিঠির কাগজ প্রস্তুত করিয়া বিক্রয় করিয়া থাকে। কাগজখানি গোলাপের গন্ধে ভর্ভর করিতেছে। বুঝিলাম, পত্র-লেখক সামান্য ব্যক্তি ন’ন।
- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, ছবি, প্রথম পরিচ্ছেদ, ছবি - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক- দারোগার দপ্তর কার্য্যালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪-৫
- টোকিও নগরে কাগজের প্রকাণ্ড কারখানা আছে। তথায় মিৎসুমাতো, কোজো ও গাম্পি নামক বৃক্ষ হইতে কাগজ প্রস্তুত হইয়া থাকে। কাঠে কাগজ হয়, কাগজে গৃহ নির্ম্মিত হয়, কড়ি, বরগা প্রস্তুত হয়, রেল প্রস্তুত হয়, জলের নৌকা হয় এবং চা তৈয়ারির কেটলি প্রস্তুত হয়।
- উমাকান্ত হাজারী, জাপানের বাণিজ্য, নব্য জাপান ও রুষ জাপান যুদ্ধের ইতিহাস - উমাকান্ত হাজারী, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭০
- যখন তুমি ছুটির পরে কাগজ-নৌকা গ’ড়ে
নাম লিখে তায় নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিতে ধ’রে।
আমারা তখন জড় হতাম, পাড়ার ছেলেমেয়ে,
তোমার নজর পড়ত না কি? দেখতে না কি চেয়ে?- সুনির্মল বসু, শিশু-রবির প্রতি বাঙালী শিশু-মহল, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৫
- আমরা গুরুমশায়ের কাছে ক খ, বানান নামতা, কড়াঙ্কে, ষটকে —এই সব শিখতুম, তাছাড়া চিঠিপত্র লেখা অভ্যাস করতুম। যত ওঁচা ফ্যালা, জিনিষ মোড়বার মত ব্রাউন কাগজ আনা হত, —শ্রীরামপুরের সাদা কাগজ যেদিন আসত খুব ভাগ্যি মনে করতুম। এই কাগজের উপর বাঙলা কলম দিয়ে আঁচড়কাটা— সেই আমাদের পত্রলেখা।
- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নবগোপাল মিত্র, আমার বাল্যকথা- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বৈতানিক প্রকাশনী, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৭
- কাগজের দিকে তাকিয়ে থাকলেও অনেক সময়ে নানা জিনিস দেখা যায়। জাপানীরা তো যে কাগজে আঁকবে সেই কাগজটি সামনে নিয়ে বসে বসে দেখে; তার পর তাতে আঁকে। টাইকানকে দেখতুম, ছবি আঁকবে, পাশে রঙ কালি গুলে তুলিটি হাতের কাছে রেখে ছবি আঁকবার কাগজটির সামনে দোজানু হয়ে বসল ভোঁ হয়ে। একদৃষ্টি কাগজটি দেখল খানিক। তার পর এক সময়ে তুলিটি হাতে নিয়ে কালিতে ডুবিয়ে দু-চারটে লাইন টেনে ছেড়ে দিলে, হয়ে গেল একখানি ছবি। কাগজেই ছবিটি দেখতে পেত; দু-একটি লাইনে তা ফুটিয়ে দেবার অপেক্ষা মাত্র থাকত।
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জোড়াসাঁকোর ধারে, জোড়াসাঁকোর ধারে- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০১
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় কাগজ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে কাগজ শব্দটি খুঁজুন।
উইকিমিডিয়া কমন্সে কাগজ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।