কুমুদিনী বসু
অবয়ব
কুমুদিনী বসু (১৮৭৮ – ১৯৪৩) ছিলেন একজন সাহিত্যিক এবং সমাজসেবক। তিনি বেথুন কলেজ থেকে এফ.এ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্য মুর্শিদাবাদের নবাব বেগম সাহেবার পদক পান। বি.এ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্য প্রমীলা সুন্দরী স্বর্ণপদক এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমস্ত মহিলা ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম হওয়ার জন্য পদ্মাবতী স্বর্ণপদক লাভ করেন। কুমুদিনী একজন সুলেখিকা ছিলেন। ১৯২১ সালে নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনে কুমুদিনী বসুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘সারা বাংলা নারী ভোটাধিকার কমিটি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো, সাহিত্য-চিন্তা, শিখের বলিদান, পকপুঞ্জ, অমরেন্দ্র, জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী, মেরী কার্পেন্টার প্রভৃতি। তিনি সুপ্রভাত এবং বঙ্গলক্ষ্মী পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- যোগ ও কর্ম্ম ভিন্ন সমস্ত সাধনাই নিষ্ফল। আমরা জগতের সকল মহাপুরুষগণকেই দেখিতে পাই, তাহারা জ্ঞান, ভক্তি, কর্মের সম্মিলিত ভিত্তির উপর আজীবন দণ্ডায়মান।
- প্রকৃত বন্ধুতা, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশক- শ্রীঅতুলচন্দ্র বসু, ৪নং কোর্টহাউস্ রোড্, ঢাকা, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৯
- ভারতবাসী এখনও নারীজাতিকে অতি হীন অবস্থা এবং হীন আদর্শের মধ্যে রাখিয়াছেন। নারীগণ যাহাতে সুশিক্ষিতা হইয়া জগতের কার্য্য করিতে পারেন, তাঁহারা নারীদিগকে কি সেই সুযােগ প্রদান করিবেন না?
- মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৬
- আর্দ্র স্থান শুষ্ক করিয়া ম্যালেরিয়াবিষ নষ্ট করিতে সূর্য্যালোকের শক্তি অসাধারণ।
- আলোক, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশক- শ্রীঅতুলচন্দ্র বসু, ৪নং কোর্টহাউস্ রোড্, ঢাকা, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬
- হৃদয়ের যে গভীর অহেতুক অনুরাগ তাহার নাম ভক্তি। প্রেম ভক্তিরই নামান্তর। আপনার পিতামাতা প্রভৃতিতে ভালবাসা ভক্তির প্রথম শিক্ষা; তারপর স্বদেশ। ভক্তি যখন আত্মীয়-স্বজন, স্বদেশ ছাড়াইয়া উচ্ছ্বসিতা কুলপ্লাবিনী তটিনীর ন্যায় অনন্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ছড়াইয়া পড়ে, তখনই তাহার পরিপূর্ণতা সম্পাদিত হয়। তখনই বিশ্বমোহিনী ভক্তির পূর্ণ বিকাশ ও তাহার সাফল্য লাভ হইয়া থাকে। ইহারই নাম সার্ব্বভৌমিক প্রেম। ইহা ভিন্ন জীবনের সার্থকতা কোথায়?
- শ্রেষ্ঠ-শিক্ষালয়, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশক- শ্রীঅতুলচন্দ্র বসু, ৪নং কোর্টহাউস্ রোড্, ঢাকা, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৯
- নারী সমাজের অর্দ্ধেক অঙ্গস্বরূপ। নারীশক্তি জাগ্রত না হইলে সমাজের পূর্ণ বিকাশ সম্ভবপর নয়।
- ভারতে নারীর উন্নতি, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশক- শ্রীঅতুলচন্দ্র বসু, ৪নং কোর্টহাউস্ রোড্, ঢাকা, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭
- যিনি দীর্ঘকালব্যাপী অজ্ঞান-তিমিরাচ্ছন্না চিরাবরুদ্ধা ভারত ললনাদিগের দুঃখ-দুর্দ্দশার কাহিনী-শ্রবণে দরবিগলিতাশ্রু হইয়া ভারতে আগমনপূর্ব্বক স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রভুত ক্লেশ স্বীকার করিয়াছিলেন—সেই প্রাতঃস্মরণীয়া পুণ্যশ্লোকা বরণীয়া রমণীর চরিতালােচনা পরম শিক্ষারস্থল। সেই স্বার্থত্যাগিনী পুণ্যবতী মহিলার কর্ম্মময় জীবনের ঘটনাবলী অধ্যয়ন করিতে করিতে শরীর রােমাঞ্চিত হইয়া উঠে। তাঁহার সঙ্কল্পিত ব্রত উদ্যাপন করিতে যে, কি কঠোর পরিশ্রম, অনন্যসাধারণ ত্যাগ-স্বীকার এবং অলোকসামান্য সহিষ্ণুতা অবলম্বন করিতে হইয়াছিল, তাহা বর্ণনাতীত। সেই পূতচরিত্রা, সংসার-সন্ন্যাসিনী, মহীয়সী মহিলার নাম “মেরী কার্পেণ্টার।”
- মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১-২
- মনুষ্যের হৃদয় সভ্যতার নির্ম্মল আলোকে যতই দীপ্ত হইতে আরম্ভ করে, সেই কিরণ-সম্পাতে সমাজগৃহের প্রতি কক্ষ হইতে ধীরে ধীরে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের অন্ধকার অপসারিত হয় এবং তাহার প্রত্যেক স্থান উন্নত এবং মার্জ্জিত হইয়া থাকে। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ অবশ্যম্ভাবী।
- সমাজ-ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশক- শ্রীঅতুলচন্দ্র বসু, ৪নং কোর্টহাউস্ রোড্, ঢাকা, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩
- অপরাধীদিগকে কেবল কঠিন শাস্তি দিলেই তাহাদের চরিত্র সংশোধন হইবে না। তাহাদিগকে ধর্ম্ম ও নীতি শিক্ষা দিয়া চরিত্রবান্ করা আবশ্যক।
- মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৬-৪৭
- যদি দেশবাসীর প্রকৃত কল্যাণ ইচ্ছা কর, তবে প্রেম চাই; প্রেম বিশ্ববিজয়ী জানিবে। প্রেমের নিকট মস্তক অবনত করিতে, একদিন সকলেই বাধ্য হইবে।
- সার্ব্বভৌমিক প্রেম, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬০
- যে সকল গুরুতর ব্যাধি বর্ত্তমান হিন্দু, সমাজ-দেহে প্রবিষ্ট হইয়া তাহাকে অবসন্ন ও দুর্ব্বল করিতেছে, তাহার মধ্যে জাতি-বিদ্বেষই প্রধান। ইহা সমাজের প্রতি অঙ্গে প্রবেশ করিয়া তাহাকে একেবারে জীর্ণশীর্ণ করিয়াদিতেছে।
- সমাজ-ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার, সাহিত্য-চিন্তা
- নারী শক্তিরূপিণী। নারী অবসাদে অচৈতন্য থাকিলে দেশ শক্তি সঞ্চয় করিবে কোথা হইতে? মহা চেতনার বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চারে —জ্ঞান ভক্তি কর্ম্মের নিত্য উদ্বোধনে, দেশবাসী উদ্বুদ্ধ হইয়া উঠিবে কেমন করিয়া?
- ভারতে নারীর উন্নতি, সাহিত্য-চিন্তা
- মানবের নিয়ন্ত্রিত, পরস্পর সমঞ্জসীভূত শক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জনশ্রেণীর নাম সমাজ।
- সমাজ-ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার, সাহিত্য-চিন্তা
- মনুষ্যের হৃদয় সভ্যতার নির্ম্মল আলোকে যতই দীপ্ত হইতে আরম্ভ করে, সেই কিরণ-সম্পাতে সমাজগৃহের প্রতি কক্ষ হইতে ধীরে ধীরে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের অন্ধকার অপসারিত হয় এবং তাহার প্রত্যেক স্থান উন্নত এবং মার্জ্জিত হইয়া থাকে। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ অবশ্যম্ভাবী।
- সমাজ-ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার, সাহিত্য-চিন্তা
- কাল্যাণদায়িনী জননীগণ যদি সন্তানগণকে স্বদেশের মঙ্গলমন্ত্রে—প্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত করেন, তাহাদের সুকুমার প্রাণ কর্তব্য শিক্ষায় সুগঠিত করিতে আরম্ভ করেন,—তাহাদিগকে অভেদব্রতে উদ্বোধিত করিয়া তোলেন, তবে তাহারা নিশ্চয়ই ভবিষ্যৎ জীবনে আপনাদের দেশকে শত শত কুসংস্কার ও জাতিবিদ্বেষরূপ আবর্জনার হস্ত হইতে উদ্ধার করিবার জন্য যত্নশীল হইবে। শক্তিরূপিণী নারীগণ সকলেই এই ব্রত গ্রহণ করুন।
- সমাজ-ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার, সাহিত্য-চিন্তা
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিসংকলনে কুমুদিনী বসু রচিত অথবা সম্পর্কিত রচনা রয়েছে।
উইকিপিডিয়ায় কুমুদিনী বসু সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।