ঘুঁটে

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
তাহারা গড়িয়া গেল ঘুঁটিয়া বাজার।
তোমারে বেচিয়া বাঁচে হাজার হাজার।
তোমারে পুড়িতে দেখি হাসে যে গোবর,
দুই দিন আগে পাছে সামান্য অন্তর॥
কালিদাস রায়

ঘুঁটে হলো গরু বা মোষের শুকনো মল। গোবর শুকিয়ে গেলে এর চটচটে ভাব বা গন্ধ কোনটিই থাকে না। রঙেরও পরিবর্তন হয়। ঘুঁটে বিভিন্ন দেশে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয়। ঘুঁটের আকৃতি চ্যাপ্টা চাকতি থেকে গোলাকার নানা আকারের দেখতে পাওয়া যায়। কখন কখন গোবরে অন্য জ্বালানি পদার্থ মিশিয়ে ঘুঁটে তৈরি করা হয়।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • তাহারা গড়িয়া গেল ঘুঁটিয়া বাজার।
    তোমারে বেচিয়া বাঁচে হাজার হাজার।
    তোমারে পুড়িতে দেখি হাসে যে গোবর,
    দুই দিন আগে পাছে সামান্য অন্তর॥
    • কালিদাস রায়, ঘুঁটে, কবিশেখর কালিদাস রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলিকাতা, প্রকাশকাল- ১৫ই আগস্ট, ১৯৬০, পৃষ্ঠা ৩১৩
  • গয়ামেম সকালে সামনের উঠোনে ঘুঁটে দিচ্ছিল, এমন সময়ে দূরে প্রসন্ন আমীনকে আসতে দেখে গোবরের ঝুড়ি ফেলে কাপড় ঠিকঠাক করে নিয়ে উঠে দাড়ালো। প্রসন্ন চক্কত্তি কাছে এসে বললে, কি হচ্চে? বলে দিইচি না, এসব কোরো না গয়া। আমার দেখলি কষ্ট হয়। রাজরাণী কিনা আজ ঘুঁটেকুড়ুনি।
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সপ্তম পরিচ্ছেদ, চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩০৪
  • সেদিন সে লিখেছিল, ঘুঁটে চাই চালানো,
    শহরের ঘরে ঘরে ঘুঁটে হোক জ্বালানো।
    কয়লা ঘুঁটেতে যেন সাপে আর নেউলে
    ঝরিয়াকে করে দিক একদম দেউলে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আজ হল রবিবার— খুব মোটা বহরের, ছড়া- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৯
  • সেই দিন থেকে ঐ সয়তান ব্যাটা দিদিকে কত মার মেরেচে, তার হিসেব-নিকেশ নেই। তবু দিদি ওকে কাঠ কুড়িয়ে, ঘুঁটে বেচে খাওয়াচ্ছে, গাঁজার পয়সা দিচ্চে—তবু কিছুতে ওর হয় না।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব)- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, সপ্তদশ মুদ্রণ, পৃষ্ঠা ৭০
  • বয়সের ভারে নানি বাঁকা হয়ে গেছে, টিলে হয়ে চামড়া ঝুলে গেছৈ, মাথা-ভরা শনের নুড়ি, নগরের ফুটপাতে গোবর কুড়িয়ে বেড়ায়, দেয়ালে সে ঘুঁটে থাবড়ে শুকিয়ে সেই ঘুঁটে বেচে সে বেঁচে আছে, সেও বার্ধক্যের হাসিহীন বিদ্রুপের ভাষায় বলে, যত ঢং তত সং।
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাধীনতার স্বাদ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র, সপ্তম খণ্ড, প্রকাশক- পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, পৃষ্ঠা ২৮৮
  • মগজভরা গোবর তোদের হচ্ছে ঘুঁটে শুকিয়ে,
    যায় কি দেওয়া কোন কথা তার ভিতরে ঢুকিয়ে?—
    • সুকুমার রায়, বুঝিয়ে বলা, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৪২
  • জীবনের যত পরিহাস বিদ্‌ঘুটে
    কাটলেট বলে পাতে দিয়ে যায় ঘুঁটে
    • জ্যোতির্ময় চট্টোপাধ্যায়, পরিহাস, অঙ্গুষ্ঠ -জ্যোতির্ময় চট্টোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশকাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১
  • কাষ্ঠ অপেক্ষা ঘুঁটের জ্বালে দুধের সুমিষ্ট আস্বাদ হইয়া থাকে। জ্বালের অবস্থায় সর্ব্বদা ঘুঁটিয়া দেওয়া আবশ্যক।
    • বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়, মিষ্টান্ন-পাক- বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩১১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬
  • যুড়ি হেঁকে যান বাবু দালালি করিতে।
    গোবরের ঘুঁটে দেয় জননী বাড়িতে॥
    • হরিমোহন কর্মকার, ওঠ্‌ ছুঁড়ী তোর বিয়ে - হরিমোহন কর্মকার, প্রকাশসাল- ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৭০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪
  • উঠন পার হয়ে খিড়কির দরজা খুলে মেনকা বাড়ির পিছন দিকের একটা ছোট চালা ঘরে ঢুকল। সেখানে কাঠ কয়লা আর ঘুঁটে থাকে। মেনকার পরনে সাদা শাড়ি, সেজন্য অন্ধকারেও তাকে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু চালা ঘরের ভেতরে গিয়ে সে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল।
    • রাজশেখর বসু, ষষ্ঠীর কৃপা, ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৭
  • অপর প্রান্তে গুটিদুয়েক গাই ও বাছুর বাঁধা, তাদের খড় ও গোবর জমছে, এবং সমস্ত প্রাচীর ঘুঁটের চক্রে আচ্ছন্ন। এক ধারে একটি মাত্র নিমগাছ, তার গুঁড়িতে গোরু বেঁধে বেঁধে বাকল গেছে উঠে, আর ক্রমাগত ঠেঙিয়ে ঠেঙিয়ে তার পাতা কেড়ে নিয়ে গাছটাকে জেরবার করে দিয়েছে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৭
  • নীচে বাজনা বাজিতেছিল, উৎসব হইতেছিল। কিন্তু অভাগিনী অনূঢ়া বালিকা কয়টি অপরাধিণীর ন্যায় রৌদ্রে বসিয়া ঘুঁটের দুর্গন্ধে হাঁপাইতেছিল। কেহই ইহাদের আরামের জন্য একটুকু খেয়াল করিতেছিল না।
  • জীবনে কখনও সহজ বিচার-বিবেচনা খোলে না—ঘুঁটে-বেচা নানির নিজস্ব স্পষ্ট মতামত আছে। হয়তো ঘুঁটে বেচে খায় বলে, এই বয়সেও খেটে খাওয়ার বিরাম হয়নি বলে। সংসারের মোটা নিয়ম মোটা কৌশল ভুলে গেলে এ লড়াই চালাবে কীসে?
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাধীনতার স্বাদ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র, সপ্তম খণ্ড, প্রকাশক- পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, পৃষ্ঠা ২৯০
  • ঘা খেয়ে জীবন
    হয়েছে চেপ্‌টা,
    শুক্‌নো ঘুঁটের
    মতন লেপ্‌টা।
    • জ্যোতির্ময় চট্টোপাধ্যায়, অনবগুণ্ঠিত, অঙ্গুষ্ঠ -জ্যোতির্ময় চট্টোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশকাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]